সাহসের জয়পতাকা উড়িয়েই ফিরে ফিরে আসেন মালালা-রা
ব্রিটেনের বার্মিংহাম কুইন এলিজাবেথ হাসপাতাল থেকে কাবুলের চহ্রাই-এ-মাইওয়ান্দ-এর দূরত্ব হয়তো খুব বেশি নয়।
‘মালালা’ নামটা এই দুস্তর ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে।
একশো বত্রিশ বছর আগে ওই মাইওয়ান্দ গ্রামের এক বীরাঙ্গনার নাম ছিল মালালা। হিজাব খুলে যিনি লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। যে লড়াইয়ে কোণঠাসা হয়ে আফগানিস্তান ছেড়ে পালায় ব্রিটিশরা।
কালক্রমে এই মালালা নামটাই সে দেশে পরিণত হয়েছে কিংবদন্তিতে! তারই সাম্প্রতিকতম সংস্করণ মালালা ইউসুফজাই। তালিবানের হুমকি অগ্রাহ্য করে পড়াশোনার অধিকারের দাবিতে সরব হওয়ার সাজা সে পেয়েছে দিন দশেক আগে। ঘাড়ে-মাথায় বিঁধেছে তালিবানের বুলেট। বার্মিংহামের হাসপাতালে এখন অন্য লড়াই লড়ছে মালালা। সেরে ওঠার লড়াই।
একটু পিছিয়ে যাওয়া যাক। ১৮৮০ সালের জুলাই মাসে আড়াই হাজার ব্রিটিশ সেনার সামনে দাঁড়িয়ে শাহজাদা আয়ুব খানের বাহিনী তখন কাঁপছে। ঠিক এমন এক সময়েই ধূমকেতুর মতো এলেন মালালা। মাইওয়ান্দের অতি সাধারণ গৃহবধূ পাল্টা লড়াইয়ের ডাক দিয়ে নেমে এলেন যুদ্ধক্ষেত্রে। সেই আহ্বানে নিভু নিভু আগুনটা জ্বলে উঠল আবার। দ্বিগুণ উদ্যমে ঝাঁপাল আফগান সেনা। আর তাদের ফিরে তাকাতে হয়নি। হাজারখানেক সেনার মৃতদেহ মাইওয়ান্দের মাটিতে ফেলে রেখে ভারতে ফিরে যায় ব্রিটিশ বাহিনী।
মাইওয়ান্দ-এর মালালা মালালা কাক্কর মালালা জোয়া মালালা ইউসুফজাই
মাইওয়ান্দ গ্রামের সেই বীর রমণী মাথা থেকে হিজাব খুলে যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে সেনাবাহিনীকে উদ্দীপ্ত করলেও তাঁকে আজ পর্যন্ত বিধর্মী বলতে পারেনি কেউ। মৌলবাদের শাসন মুছে ফেলতে পারেনি তাঁর ইতিহাস। আফগানিস্তানের বহু স্মৃতি-সরণি, কাব্য, লোকগাথা তাঁকে ঘিরে।
সে দেশের বহু কন্যার নামও তাঁর নামে। আফগানিস্তানের নারীশক্তির এক প্রতীক হয়ে উঠেছে এই নাম। মালালা কাক্করের কথাই ধরা যাক। বহু বার মৃত্যু পরোয়ানা পেয়েও রাস্তায় দাঁড়িয়ে তালিবানের সঙ্গে লড়ে গিয়েছেন আফগানিস্তানের অত্যন্ত জনপ্রিয় এই পুলিশ অফিসার। কন্দহরে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধদমন শাখার প্রধান ছিলেন মালালা। কন্দহর পুলিশ অ্যাকাডেমির প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালে তালিবানের হাতেই নিহত হন। কাবুলে তালিবানের প্রভাব খতম করে গণতন্ত্রের শাসন ফেরানো এবং মৌলবাদী ফতোয়া অগ্রাহ্য করে নারীমুক্তির পথে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান এখনও স্মরণ করেন সে দেশের মানুষ।
কার্যত মাথায় ঠেকানো বন্দুক নিয়ে বাঁচছেন আর এক মালালা। মালালা জোয়া। তালিবানি শাসনকালে কাবুলে মহিলাদের অধিকার রক্ষায় লড়াই করেছিলেন তিনিও। একাধারে লেখিকা, সমাজকর্মী এবং রাজনীতিবিদ মালালা যেমন হামিদ কারজাই সরকারের সমালোচনা করেছেন, তেমন পশ্চিমের বন্ধুদেরও কড়া কথা বলতে ছাড়েননি। জোয়াকে আফগান পার্লামেন্ট থেকে বরখাস্ত করার পর দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তাঁকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে প্রেসিডেন্ট কারজাইকে চিঠি লেখেন নোয়াম চমস্কির মতো ব্যক্তিত্বরাও।
যে সোয়াট উপত্যকায় মেয়েদের শিক্ষার অধিকারের জন্য লড়তে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে আজকের মালালা ইউসুফজাই, সেই অঞ্চলের উত্তরাংশেরই একমাত্র কলেজ, ‘ভোকেশনাল ট্রেনিং কলেজ ফর উইমেন’। প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৯২ সালে। তালিবান তা বন্ধ করে দেয় ২০০৮-এ। অধ্যক্ষা সালমা বেগমকে বেয়নেটের ডগায় দাঁড় করিয়ে তালিবান নেতারা হুকুম দিয়েছিল, মহিলাদের লেখাপড়া বন্ধ করতেই হবে। তার পর চাকরি দেওয়ার তো কোনও প্রশ্নই ওঠে না। গৃহবন্দি হয়ে যায় প্রায় ৫০০ ছাত্রী। পরে বোমা মেরে কলেজ বিল্ডিংটিকেও ধ্বংসস্তূপ বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে এক বছর হল আবার চালু হয়েছে সেই বৃত্তিমূলক কলেজ। তৈরি হয়েছে নতুন বাড়ি। গত বছরই পাক সরকারের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়ে বোঝা গিয়েছিল, একটা আশার সুর আবার বাজছে। অধ্যক্ষা সালমা বেগম জানিয়েছিলেন, “আবার সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। পুরনো ছাত্রী, যারা তিন বছর গৃহবন্দি ছিল, তারা তো ফিরে আসছেই। আরও নতুন ভর্তির জন্য লাইন পড়েছে।”
এই কলেজেই আপাতত কম্পিউটারের পাঠ্যক্রম নিচ্ছে মালালা খাতুন। গত দু’বছর বাড়ি থেকে বেরোতে পারেনি সে। এখনও ভয় আছে। তবে তার আশা, ‘‘সেনা প্রহরা পুরোপুরি উঠে যাওয়ার আগে নিশ্চয়ই সরকার এমন ব্যবস্থা করে দেবে যাতে ওরা আবার আমাদের গ্রামের দখল নিতে না পারে।” পড়া শেষ করে ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার ইচ্ছে এই তরুণীর।
সাহস আর মালালা শব্দদু’টোই যেন সমার্থক। তাদের হারানো অতই সহজ!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.