দুর্গাপুরের মতো বিগ বাজেট নয়। থিমের কারিকুরিও তেমন নেই। কিন্তু তাও কাঁকসা-বুদবুদের মতো শহরতলি এলাকার পুজোও রয়েছে দর্শকদের তালিকায়। তাই শহর পেরিয়ে অনেকেই চলে আসছেন কাঁকসা ও বুদবুদের ঠাকুর দেখতে। ঐতিহ্যেও পিছিয়ে নেই এই পুজোগুলো। কেউ চল্লিশে পড়ল তো কেউ সত্তরের স্মৃতি জড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাথা তুলে।
বুদবুদের আমরা ক’জন স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালনায় বুদবুদ গ্রাম সর্বজনীন দুর্গাপুজো এবার ৪০ বছরে পা দিচ্ছে। মণ্ডপ ভাবনায় রয়েছে অশুভ শক্তির বিনাশ। মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপে। বাজেট প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা। ক্লাবের সম্পাদক উত্তম সেনাপতি জানান, মগরার শিল্পীরা এ বার মণ্ডপ তৈরি করছেন। ভিতরে একটু ফাঁকা জায়গা বের করে তাতেই দর্শকদের জন্য থাকবে অসুর বধের কাহিনী নিয়ে আলোকসজ্জা। প্রতিমা হবে নটরাজ মূর্তির আদতে। পুজো কমিটির সম্পাদক নন্দন পাল জানান, প্রতি বছরের মতো এবার দশমীর দিন থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিসর্জনের দিন থাকবে পঙ্ক্তিভোজের ব্যবস্থা।
বুদবুদের ঝঙ্কার সর্বজনীন পুজো এবার ৩৪-য়ে পড়ল। মন্দিরের আদলে মণ্ডপটি সাজানো হচ্ছে ফাইবারের বিভিন্ন নকশায়। মণ্ডপ তৈরি করছেন মানকরের এক শিল্পী। বাজেট প্রায় তিন লক্ষ টাকা। পুজো কমিটির অন্যতম পরিচালক স্বপনকুমার খাঁ জানান, প্রতি বছরের মতো দশমীর দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে। সাবেক প্রতিমাই এই পুজোর আকর্ষণ।
বুদবুদের সংহতি সর্বজনীন পেরলো ৪০ বছর। ওড়িশার কোনারক মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। থাকছে থার্মোকলের কারুকার্য। উদ্যোক্তারা জানান, বাজেট প্রায় এক লক্ষ টাকা। সারা পুজো কমিটির সম্পাদক জগদীশ পটেল জানান, ষষ্ঠীর দিন থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দ্বাদশীর দিন পঙ্ক্তিভোজের ব্যবস্থা করা হয়। এলাকারই অগ্নিবীণা ক্লাবের এ বারের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে স্টীমারের আদলে। ১৬ বছরে পড়ছে তাঁদের পুজো। প্রতিমার চারপাশে চিত্রপটে ফুটে উঠবে কৃষ্ণের জন্মলীলার কাহিনি। মণ্ডপে থাকবে থার্মোকলের সাথে রবারের তৈরি নানা কাজ। পুজো কমিটির সদস্য সুমিত পাল জানান, ষষ্ঠী ও সপ্তমীর দিন থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন।
বুদবুদ চেম্বার অব কমার্সের পুজো এবার ৫৯ বছরে পা দিচ্ছে। মন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপে থাকছে সমুদ্রমন্থনের ছবি। তা ছাড়াও থাকছে গাছের প্রয়োজনীয়তা ও পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে নানা চিত্র। বাজেট প্রায় দু’লক্ষ টাকা। পুজো কমিটির সম্পাদক বিনোদ শর্মা জানান, চার দিনই তাঁরা বিভিন্ন রকম সমাজকল্যাণমূলক কাজ করেন। একটি গ্রামীণ মেলাও বসে এখানে।
উত্তরাখণ্ডের মদ মহেশ্বর মন্দিরের আদলে মণ্ডপ বানাচ্ছেন বুদবুদ ছাত্রসমিতি সর্বজনীন। ৪০ বছরের এই পুজোর কমিটির সম্পাদক কানুবিকাশ চৌধুরী। বাজেট প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। প্রতিমা আনা হয় কলকাতা থেকে। তাঁর দাবি, জেলায় একমাত্র তাঁরাই কলকাতা থেকে প্রতিমা আনেন। মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি দিয়ে। দশমীর দিন পংক্তিভোজন হয়। থাকছে আলোকসজ্জাও। মিশরের পিরামিডের অনুকরণে মণ্ডপ তৈরি করছে বিপিনপুর নবোদয় সর্বজনীন। তাঁদের পুজো ২৮ বছরে পড়ছে। প্রতিমাও এখানে মিশরের দেব দেবীর আদলে তৈরি।
পানাগড়ের মিত্র সঙ্ঘের পুজো এবার ৭০ বছরে পড়ছে। রাজস্থানের মন্দিরের মতো তৈরি করা হচ্ছে মণ্ডপ। বাজেট প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। প্রতিমার সাবেক সাজ। পুজো কমিটির সম্পাদক সুদীপ রায় জানান, পুজোর সময়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকে। বসে মেলাও। দূরদূরান্ত থেকে দর্শকরা পুজোর পুরো স্বাদ নিয়ে বাড়ি ফেরেন। |