পড়ান তো অনেকেই। ছাত্রছাত্রীদের কথা সন্তান স্নেহে ভাবেন ক’জন?
পুজো আসে। পুজো যায়। মাস্টারমশাই-দিদিমনিরা সপরিবার নতুন জামাকাপড় পড়ে ঠাকুর দেখতে যান। কিন্তু অভাবের ঘর থেকে আসা যে ছেলেমেয়েদের একটাও নতুন জামা জুটল না, তাদের কথা ক’জন ভাবেন?
ওঁরা ভেবেছেন। ওঁরা বার্নপুরের হিরাপুর মানিকচাঁদ ঠাকুর উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের জনা তিরিশ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী। চেনা বিস্মৃতির স্রোতে ওঁরা ব্যতিক্রম।
“আসলে প্রতি পুজোয় নতুন কাপড় গায়ে তোলার সময় ওদের কথা মনে পড়ে যায়” বলছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিবেদিতা আচার্য। ইংরেজির দিদিমনি রিনা মৈত্র নিচু গলায় যোগ করেন, “পুজোর ছুটি যে দিন পড়ে, সে দিন ওদের শুকনো মুখগুলো দেখতে ভালো লাগে না। তাই ভাবলাম...।” |
শুধু ওঁরাই ভাবলেন, তা নয়। ভাবলেন স্কুলের সকলে মিলে। মানুষ যে সহমর্মিতায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা ভাবে, সে ভাবেই। কথায়-কথায় ঢাকঢোল পেটানোর যুগে, স্পনসর জুটিয়ে ‘বস্ত্রদান’ করার ফাঁকতালে ওঁরা ভাবলেন খুব নীরবে। ভাবলেন, নিজেরা টাকা তুললেন, শ’খানেক দুঃস্থ ছাত্রীকে জামাকাপড় দিয়েও দিলেন। ছুটি পড়ার ঠিক আগে, নিতান্ত অনাড়ম্বর ভাবে স্কুলেরই প্রেক্ষাগৃহে। সংবাদমাধ্যম নয়, প্রশাসনের কর্তারাও নন। স্কুল পরিবারের মাথা হিসেবে শুধু সাক্ষী রইলেন পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রদীপকুমার ঠাকুর।
কী ভাবে বেছে নেওয়া হল শ’খানেক ছেলেমেয়েকে?
প্রধান শিক্ষিকার কথায়, “আমরা জানতামই, এমন বেশ কিছু ছাত্রী আছে যাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা মোটেই ভাল নয়। খোঁজখবর নিয়ে দেখলাম, শ’খানেক ছাত্রীর এই পুজোয় নতুন জামাকাপড় হয়নি।” মনস্থির করতে বেশি সময় লাগেনি। এক দিন টিফিনে শিক্ষিকারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করে ফেললেন, প্রত্যেককে বেতনের কিছুটা দিয়ে ওদের জন্য কিছু না কিছু কিনবেন। প্রদীপবাবুও শুনে এক কথায় রাজি। তিনি তো বটেই, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন স্কুলের শিক্ষাকর্মীরাও। শুধু এ বারই নয়। পরের পুজো, তার পরের পুজোর কথাও তাঁরা ভাবতে শুরু করেছেন।
শুকনো মুখগুলো বোধ হয় প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি। পরে নতুন জামা হাতে পেয়ে তাদের সে কী আহ্লাদ! আনন্দের দিনগুলোয় আর তাদের ঘরের অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে হবে না। ছেঁড়া জামা পড়ে মণ্ডপের ধারে গিয়ে দাঁড়াতে হবে না ম্লান মুখে। পঞ্চম শ্রেণির অঞ্জনা মোদীই বলে দেয় প্রায় সকলের মনের কথাটা, “খুব ভাল লাগছে। কত দিন পরে যে পুজোয় নতুন জামা পেলাম!”
দিনটা ছিল বুধবার। সে দিনই অনেক মণ্ডপে দেবীর চক্ষুদান হল।
চোখ খুলে দেবী দেখলেন, মেয়েগুলো হাসছে। |