ডাকে পাঠাতেই জালিয়াতি ফাঁস
২০ হাজার ভুয়ো ড্রাইভিং লাইসেন্স

নিয়মে ছোট্ট একটা পরিবর্তন। তারই দৌলতে তৈরি হয়েও ধরা পড়ে গেল গাড়ি চালানোর হাজার হাজার ভুয়ো লাইসেন্স। যা কিনা ভোটার কার্ডের মতো অন্যতম একটি সচিত্র পরিচয়পত্র হিসেবে গণ্য হয়!
আগে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স হাতে-হাতে দিয়ে দেওয়া হতো আবেদনকারীকে। তাই যে ঠিকানায় তিনি থাকেন বলে আবেদনে জানিয়েছেন, তা ঠিক কি না যাচাই করার কোনও উপায় ছিল না। এ বার সেই পদ্ধতি পাল্টে ডাক মারফত আবেদনকারীকে লাইসেন্স পাঠানোর নিয়ম চালু হয়েছে, পাসপোর্টের ক্ষেত্রে যেমনটি হয়ে থাকে। আর তাতেই মালুম হয়ে যাচ্ছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ভুয়ো ঠিকানা দিয়েছিলেন কত জন!
কত জন? রাজ্য পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, নতুন পদ্ধতি বলবৎ হওয়ার পরে শুধু কলকাতাতেই প্রায় ২০ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপককে আবেদনে উল্লিখিত ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। কর্তাদের একাংশের বক্তব্য: হাতে হাতে দেওয়ার নিয়ম চালু থাকলে ওই সব লোকের লাইসেন্স পেতে অসুবিধে হতো না। এবং সেই ভুয়ো ঠিকানা সংবলিত ড্রাইভিং লাইসেন্স সচিত্র পরিচয়পত্র হিসেবে অসদুদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকত ষোলো আনা। বস্তুত এত দিন সাবেক নিয়মের ফায়দা তুলে বিস্তর ভুয়ো ড্রাইভিং লাইসেন্স বেরিয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন পরিবহণ-অফিসারদের অনেকে।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর: রাজ্যের প্রতিটা জেলায় আলাদা আলাদা ভাবে আরটিও অফিস থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়। কলকাতার জন্য রয়েছে বেলতলা মোটর ভেহিক্লস অফিস। কলকাতায় যিনি লাইসেন্স নেবেন, তাঁকে কলকাতার বাসিন্দা হতে হবে। এক পরিবহণ-কর্তা জানান, আগে কলকাতার অধিকাংশ আবেদনকারীকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ‘পাইয়ে দেওয়ার’ দায়িত্ব নিত গাড়িচালনার প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো। তখন স্কুলের কাগজপত্র দেখেই লাইসেন্স দেওয়া হতো, পরিচয়পত্র ও বাড়ির ঠিকানা সে ভাবে খুঁটিয়ে দেখার বালাই ছিল না। ফলে ভিন রাজ্য থেকে আসা বহু লোকও কলকাতার ভুয়ো ঠিকানা দিয়ে দিব্যি লাইসেন্স করিয়ে নিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ।
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এ বছরের জানুয়ারি ইস্তক হাতে-হাতে লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতি পাল্টে ডাক মারফত বাড়ি-বাড়ি লাইসেন্স পাঠানো শুরু হয়। কলকাতা মোটর ভেহিক্লসের এক পদস্থ কর্তার দাবি, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেলতলা অফিস এ ভাবে দেড় লক্ষ ড্রাইভিং লাইসেন্স পাঠায়। এর মধ্যে নতুন লাইসেন্স, নবীকৃত লাইসেন্স, শিক্ষানবিশ লাইসেন্স সবই রয়েছে। কিন্তু ডাকঘরের কর্মীরা অন্তত হাজার কুড়ি আবেদনকারীর দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে তাঁদের খুঁজে পাননি। লাইসেন্সগুলো আবার দফতরে ফেরত এসেছে। রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “আমরা আসার পরে লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র ও ঠিকানা যাচাইয়ে জোর দিয়েছি। তার ফলে অনেকে ঠিকঠাক কাগজপত্র দেখাতে পারছেন না। যাঁরা উপযুক্ত প্রমাণপত্র দিচ্ছেন, তাঁদের লাইসেন্স পেতে কোনও অসুবিধে হচ্ছে না।”
লাইসেন্স হাতে পাওয়ার বর্তমান নিয়মটা ঠিক কী রকম?
পরিবহণ দফতরের সহ-অধিকর্তা (লাইসেন্স) রামকৃষ্ণ মণ্ডলের বক্তব্য, “রাজ্য সরকার এখন নিয়ম করে দিয়েছে, একমাত্র আবেদনকারীই ডাককর্মীর কাছ থেকে নিজের পরিচয়পত্র দেখিয়ে লাইসেন্স নিতে পারবেন। তিনি বাড়িতে না-থাকলে সেই লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসে সাত দিন রাখা হবে। তার মধ্যে ওঁকে পরিচয়পত্র দেখিয়ে ডাকঘর থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে। নচেৎ সাত দিন পরে লাইসেন্স দফতরে ফেরত যাবে।” তবে ওই ব্যক্তি পরে পরিবহণ অফিসে এসেও ঠিকানার প্রমাণপত্র দেখিয়ে লাইসেন্স নিয়ে যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন রামকৃষ্ণবাবু।
ড্রাইভিং লাইসেন্স নবীকরণেও যথেষ্ট কড়াকড়ি করা হচ্ছে। দফতর-সূত্রের খবর: নতুন নিয়মে ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনকারীকে বসবাসের প্রমাণ হিসেবে সচিত্র ভোটার কার্ডের কপি জমা দিতে হচ্ছে। তা না-থাকলে পাসপোর্ট, ব্যাঙ্কের পাশবই, বিএসএনএলের টেলিফোন বিল, বিদ্যুতের বিল, এলআইসি পলিসি কিংবা আধার কার্ডের প্রতিলিপি দিতে হবে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.