প্রায় এক বছর পর আজ, বৃহস্পতিবার ভোর ঠিক ছ’টায় দুগ্গা দুগ্গা করে সাইরেনের ভোঁ বেজে উঠবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিড়লাপুর চটকল। মঙ্গলবার টানা ১৩ ঘণ্টা বৈঠকের পর মিলের সাত হাজার শ্রমিক তো বটেই, একই সঙ্গে গঙ্গার পুব পাড়ে বিড়লাপুরের প্রায় ৬০ হাজার মানুষের জন্য এল এই সুখবর। পুজোর ঠিক মুখে চটকল খোলার পরেই শ্রমিকরা পাবেন পুজের বোনাস এবং অগ্রিম দু’হাজার টাকা।
মঙ্গলবার নিউ সেক্রেটারিয়েটে বেলা ১১টা থেকে একটানা রাত ১২টা পর্যন্ত চলা ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মিল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে দিন মাঝ রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা জেগেছিলেন বলে বুধবার সকালের বদলে বৃহস্পতিবার মিল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একটানা দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টা ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের নজির রাজ্যে আদৌ আছে কি না, তা বলতে পারলেন না তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য নেতৃত্ব। বিড়লাপুর চটকলে মোট ২০টি শ্রমিক সংগঠন থাকলেও মূলত আইএনটিটিইউসি-র উদ্যোগেই মিলটি খোলা সম্ভব হল বলে শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে শ্রমিক সংগঠনটির রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন বলেছেন, “প্রায় এক বছর ধরে সব ক’টি ট্রেড ইউনিয়ন একসঙ্গে করেছে। সময় একটু বেশি লাগলেও রাজ্য সরকারের শ্রম দফতরের ইতিবাচক ভূমিকার জন্যই তা সম্ভব হয়েছে।” মিল খোলার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন সিটুর রাজ্য সম্পাদক কালী ঘোষ। তাঁর কথায়, “মিল খোলার সিদ্ধান্তের কথা শুনেছি। তবে বিস্তারিত ভাবে কিছু না। দেখতে হবে শ্রমিকদের বকেয়া কী ভাবে দেওয়া হবে, যে সব শ্রমিকদের অনেক কম টাকায় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ করেছেন, তাঁদের মজুরির বিষয়ে কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের কী বক্তব্য তা-ও ভাল ভাবে জানা দরকার।”
এর আগে প্রায় এক বছর ধরে রাজ্যের একাধিক ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হলেও মিল খোলা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি শ্রম দফতর, মিল কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনগুলি। কিন্তু মঙ্গলবার কোন ‘মন্ত্রবলে’ মিল খোলার সিদ্ধান্ত হল, তা জানতে চাইলে দোলাদেবী বর্তমান সরকারের প্রবল সদিচ্ছা এবং সব পক্ষের সহমতের উপরে জোর দেন। বৈঠকে শ্রমমন্ত্রী পুর্ণেন্দু বসু নিউ সেক্রেটারিয়েটে আসেন এবং বৈঠকেও যোগ দেন বলে শ্রম দফতর সূত্রের খবর।
বিড়লাপুরে এই চটকলে সাত হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তা ছাড়া মিলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দোকানবাজার-সহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজকর্মও চলে। শ্রমিক নেতারা মনে করেন, ফলে, মিলটির বাঁচা-মরার উপরে আরও বেশ কয়েক হাজার মানুষের জীবন নির্ভরশীল। মিল খোলার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি আরও কয়েকটি সিদ্ধান্ত ওই বৈঠকে নেওয়া হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রম দফতরের এক ডেপুটি লেবার কমিশনার জানিয়েছেন। যেমন, মিলের আধুনিকীকরণ হবে এবং সে জন্য কোনও শ্রমিককে ছাঁটাই করা হবে না। প্রত্যেক শ্রমিকই বকেয়া টাকা পাবেন বলেও কর্তৃপক্ষ কথা দিয়েছেন। আইএনটিটিইউসি ছাড়াও প্রত্যেকটি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য স্তরের নেতারা এবং স্থানীয় বিধায়ক অশোক দেব এ দিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন বলে শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। নতুন সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন রাজ্যে ১৫টি জুট মিল বন্ধ ছিল। দোলাদেবী দাবি করেন, গত ১৪ মাসে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে ১৩টি বন্ধ চটকল খোলা হয়েছে। |