মাটির পুতুলে হাত পাকিয়ে এখন মাস্টারমশাইয়ের নেশা দুর্গা বানানো। উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের গ্রামের বাসিন্দা কাজল রায়চৌধুরী হাসনাবাদের বিশপুর হাইস্কুলের ইংরাজির শিক্ষক। ছাত্র পড়ানোর বাইরে মাটির দুর্গা তৈরিই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। তবে ছাত্রদেরও প্রতিমা তৈরির শিক্ষক তিনি। মাকে কথা দিয়েছিলেন দুর্গা তৈরি করে পুজো করবেন। সেই প্রতিজ্ঞা মেনে চলেছেন অক্ষরে অক্ষরে। |
বাংলাদেশের খুলনা জেলার ফরিদকাটি গ্রামের বাসিন্দা নির্মল রায়চৌধুরীর ছয় ছেলে এক মেয়ের মধ্যে ছোট কাজল। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নির্মলবাবু গত ১৯৬৩ সালে পরিবারের সকলকে নিয়ে চলে আসেন স্বরূপনগরে। ছোট থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি খেলার ছলে পুতুল তৈরিতে রপ্ত হয়ে ওঠেন কাজল। পরিবারের উৎসাহে একদিন গড়ে ফেলেন সরস্বতী প্রতিমা। সেই শুরু। শিল্পী হয়ে ওঠার ঝোঁক মেটানোর সঙ্গে সঙ্গে সময় মতো পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ায় অল্প দিনে এক দিকে যেমন স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে যান তেমনই শিল্পী হিসাবে কাজলবাবুর নাম ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের গ্রামে। প্রতিমা তৈরির জন্য ডাক পড়তে আরম্ভ করে। একদিন মা জ্যোৎস্নাদেবী ছোট ছেলের কাছে আব্দার করলেন, “তোর তৈরি প্রতিমা সকলে নিয়ে যায়। পুজো করে। অথচ বাড়িতে পূজিত হন না দেবী।” মায়ের কথা রাখতে রায়চৌধুরী বাড়িতে দুর্গাপুজোর সেই শুরু। এ বার ১৫টা প্রতিমা তৈরি করেছেন। সবই বিক্রি হয়ে গেছে। প্রতিমা তৈরি শেখার কয়েকজন ছাত্রও আছে। দশম শ্রেণির অজয় দাস এবং অষ্টম শ্রেণির কৌশিক সাহা, সচ্চিদানন্দ সাহা, ভবতোষ সাহা, সুদীপ মল্লিক জানায়, “মাস্টারমশায় আমাদের যেমন পড়ান, তেমনই প্রতিমা তৈরির কাজও শেখান।” আর গ্রামবাসী শিবপদ সর্দার, রমেন সর্দার বলেন, “রায়চৌধুরী বাড়িতে পুজোর দিনগুলিতে গ্রামের মানুষের ভোজ বাঁধা। এ বার সপ্তমীতে পোলাও, অষ্টমীতে লুচি-বোঁদে, নবমীতে খিচুড়ি ও দশমীতে মাছ-মাংসের ব্যবস্থা।” |