দুপুর দেড়টা নাগাদ পাশের বাড়িতে গিয়ে বছর তিনেকের শিশুকন্যাটি কোনও মতে বলেছিল, ‘‘দিদি জ্বলছে।’’
প্রথমে কথাটা বুঝতেই পারেননি বারুইপুরের কালিকাপুর এলাকার গৃহবধূ নিয়তি গায়েন। শিশুটির চেঁচামেচিতে পাশের বাড়িতে গিয়ে দেখেন, দাউদাউ করে জ্বলছে ১৫ বছরের কিশোরী। নিয়তিই তাকে ধাক্কা মেরে পুকুরে ফেলে আগুন নিভিয়ে অন্যদের ডাকেন। নিয়তির বক্তব্য, অটোয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে অগ্নিদগ্ধ কিশোরীটি কোনও মতে জানায়, পাড়ার তিন জন ধর্ষণ করে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে ওই ঘটনার পরে গুরুতর দগ্ধ সেই কিশোরীকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তার শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, কেরোসিন তেল ঢেলে ওই কিশোরীর শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই কিশোরীর বয়ান অনুযায়ী এলাকার এক যুবক ও দুই কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ছোট্টু নস্কর নামে ধৃত যুবক রাঁধুনির কাজ করে। ধৃত দুই কিশোর সুশান্ত সর্দার ও বাপ্পা মণ্ডল স্থানীয় একটি স্কুলের ছাত্র। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণের পরে প্রমাণ লোপের জন্য তিন জন মিলে কিশোরীটির শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ তিন জনের বিরুদ্ধেই গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ (জি) এবং ৩০৭ ধারায়) অভিযোগ দায়ের করেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে ওই তিন জনকে বুধবার দুপুরে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাটির বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, ছোট্টু বছরখানেক হল ওই এলাকায় ভাড়া এসেছে। দুপুরে মাঝেমধ্যে সে ওই কিশোরীর বাড়িতে যেত। দুই স্কুলপড়ুয়ার বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, মোবাইল ফোনে অশ্লীল ছবি নিয়ে মাঝেমধ্যেই ওই দুই স্কুলপড়ুয়া ও ছোট্টু ওই কিশোরীর বাড়িতে যেত বলে বন্ধুরা জানিয়েছে। তিন জনের মোবাইলও আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরেও ওই কিশোরীর বাড়িতে গিয়েছিল বলে জেনেছে পুলিশ। ওই দিন ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কিশোরীর বাবা রিকশাচালক। মা পরিচারিকার কাজ করেন। বাবা-মা সকালেই কাজের জন্য ঢাকুরিয়ায় চলে আসেন। বাড়িতে ফেরেন রাতে। পুরো সময়টা তিন বছরের বোনকে নিয়ে বাড়িতেই থাকত ওই কিশোরী।
ওই কিশোরীর বাবা বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে বাড়িতে বিপদ হয়েছে বলে আমার পরিচিত এক জনের কাছে ফোন আসে। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাই। ততক্ষণে পাড়ার বাসিন্দারা মেয়েকে সোনারপুরের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েছেন। রাতে মেয়েকে ভর্তি করানো হয় এসএসকেএমে।”
বুধবার সকালে ওই কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট টালির চালের ঘরের ভিতরে তখনও পোড়া চুল ও চামড়ার অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। কিশোরীর পড়শি নিয়তি গায়েন বলেন, “দুপুর দেড়টা নাগাদ ওই কিশোরীর বোন আমার বাড়িতে এসে বলে, ‘দিদি জ্বলছে’। ওই অবস্থায় কোনও রকমে ধাক্কা মেরে ওকে পাশের পুকুরে ফেলে দিই। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ও ধর্ষণের বিষয়টি আমাদের জানায়।” ওই কিশোরীর কয়েক জন পড়শিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ওই কিশোরী তিন জনের নাম ও ঘটনার বিষয়টি যে সব পড়শিকে জানিয়েছে, তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। ওই বয়ানের ভিত্তিতেই রাতে কিশোরীর বাবা বারুইপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে তিন জনকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের পরে বুধবার দুপুরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ দিন সকালে ধৃতদের কয়েক জন বন্ধুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ধৃত দুই স্কুলপড়ুয়ার অভিভাবকদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। |