প্রাচীন কাঠামোয় বনেদি পুজো |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
মেঠো পথের বদলে ঢালাই রাস্তা এখন বাড়ির পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে। হ্যাজাকের বদলে বিজলিবাতি। কালের নিয়মে দেবোত্তর সম্পত্তির অনেকটাই চলে গিয়েছে কল-কারখানার দখলে। পুরনো বিত্ত-বৈভবে আঁচড় কেটেছে সময়। কিন্তু আজও দেবীর বোধনে জমিদারি মেজাজ ফিরে আসে সুতাহাটার জামালচকের দেব পরিবারে। একচালার চেনা কাঠামো-মূর্তিতেই আচার মেনে হয় পুজো।
১৮৩৭ সালে শুরু হয়েছিল এই পুজো। তখন ওই পাঁচটা দিন পড়শিদের বাড়িতে হাঁড়ি চড়ত না। যাত্রা, পালাগানের আসর বসত। সেই আড়ম্বর টিকিয়ে রাখা সম্ভব না হলেও পুজোর দিনগুলোয় গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন জ্ঞাতি-আত্মীয়েরা। আটচালার টালির বাড়িটির এক দিকে রঘুনাথ জিউর মন্দির। অন্য দিকে শিবমন্দির। |
|
—নিজস্ব চিত্র। |
স্থায়ী দুর্গা মণ্ডপও রয়েছে। সেখানে এখন প্রতিমাকে সাজাতে ব্যস্ত শিল্পী। গৃহকর্তা ৬২ বছরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক স্বপনকুমার দেবের কথায়, “সেই জৌলুস হয়তো ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এই ক’টা দিন আত্মীয়-স্বজনের ঢলে বাড়ির গমগমে মেজাজটা ফিরে আসে।”
পরিবার সূত্রে জানা গেল, প্রতি বছর পুজোর বিসর্জনের পরে বাড়ির ‘বড় পুকুর’ থেকে তুলে আনা হয় প্রতিমার কাঠামো। রাধাঅষ্টমীতে পুকুর পাড়ের দোলতলা থেকে মাটি এনে চাপানো হয় পুরনো একচালার কাঠামোতে। এখনও বৈষ্ণবমতে হওয়া এই পুজোয় প্রতিদিন ২০ কেজি করে মোট ১ কুইন্টাল ২০ কেজি আতপ চাল দেওয়া হয় ব্রাহ্মণকে। চার দিন ধরেই অবিরাম জ্বলতে থাকে হোমকুণ্ড। এই পুজোর জন্য কোনও পারিশ্রমিক নেন না সেবায়েতরা। পুজোর দায়িত্বে থাকা জয়দেব জানা বলেন, “পুরুষানুক্রমে এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত আমরা। তাই এটা এখন বাড়ির পুজো হয়ে গিয়েছে।”
জাঁকজমকে পিছিয়ে পড়লেও পুজোর আচারে কোনও আপস করে না দেব পরিবার। |
|