বার্লিনে ৮ মিনিটে গোলের শুরু করেছিলেন মিরোস্লাভ ক্লোসে। ৫৬ মিনিটে সুইডেনের বিরুদ্ধে ৪-০ এগিয়ে যায় জার্মানি। ক্লোসে আর একটি এবং মেসুট ওজিল এবং মার্টেসেকারের গোলে। বড় ব্যবধানে জেতার স্বপ্নকে মাটিতে ফেলে শুধু পিষেই মারল না জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচের সুইডেন, ম্যাচের শেষ আধ ঘণ্টায় ০-৪ থেকে অবিশ্বাস্য ৪-৪ করে ফেলে ঢুকে পড়ল বিশ্ব ফুটবলের সর্বকালের সেরা দশটা প্রত্যাবর্তন ঘটানো দলের তালিকায়! মঙ্গলবার রাতের ম্যাচের সঙ্গে তুলনা উঠছে ছেষট্টির বিশ্বকাপে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ০-৩ পিছিয়ে পড়ার পরে ইউসেবিও-র ম্যাজিকে পর্তুগালের ৫-৩ করাকে। চিরলড়াকু জার্মানি নিজেরাই তো এমন দু’টো ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিল। চুয়ান্ন বিশ্বকাপে হাঙ্গারিকে ৩-২ এবং সত্তর বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে একই ফলে হারিয়ে। |
সুইডেনের উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি |
সেই জার্মান ফুটবলের গতকালের দশা দেখে ইউরোপের বিখ্যাত ক্রীড়া দৈনিক হেডিং করেছে, ‘জার্মানি প্রথম এক ঘণ্টা স্বর্গে, শেষ আধ ঘণ্টা নরকে!’ ফুটবলাররাও বিস্মিত। সোয়াইনস্টাইগার বলেছেন, “জীবনে এমন কাণ্ড কখনও ঘটেনি! কিছুতেই বুঝতে পারছি না কী করে এমনটা হল! আধুনিক ফুটবলে কোনও টিমের দুই বা তিন জন ঠিক মতো না দৌড়লেই সেটা খুব খারাপ ব্যাপার। সেখানে এই ম্যাচে আমাদের প্রত্যেকে শেষ আধ ঘণ্টা বিপক্ষ ফুটবলারদের চেয়ে অন্তত এক পা পিছিয়ে ছিলাম। সে কারণেই চার গোল খেতে হল। বোধহয় দ্বিতীয় বার জার্মানির ম্যাচে এমন রেজাল্ট হবে না!” ৬২ মিনিটে ইব্রাহিমোভিচ সুইডেনের গোলের খাতা খোলার পরে তাঁদের চতুর্থ গোলটি করে রাসমুস যখন ৪-৪ করছেন তখন ইনজুরি টাইমের তৃতীয় মিনিট চলছে। এসি মিলান ছেড়ে এ মরসুমেই প্যারিস সাঁ জাঁ-এ আসা ইব্রাহিমোভিচ বলেছেন, “জার্মানদের বিখ্যাত মানসিক শক্তিটাই শেষ আধ ঘণ্টা মাঠে ছিল না।” গোড়া থেকে তাঁকে না খেলানোর জন্য ক্ষুব্ধ জার্মান ফরোয়ার্ড টনি ক্রুজ বলেছেন, “চার গোলে এগিয়ে ভেবে বসেছিলাম ম্যাচের বাকিটা আমাদের ইচ্ছে মতোই হবে।” |
ফিরে আসার পাঁচকাহন |
• উত্তর কোরিয়া-৩ : পর্তুগাল-৫ (’৬৬ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল। ২৪ মিনিটে তিন গোলে এগিয়েও ইউসেবিওদের কাছে হার।)
• হাঙ্গেরি-২ : পশ্চিম জার্মানি-৩ (’৫৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল। ৮ মিনিটের মধ্যেই পুসকাস-জিবরের গোলে এগিয়ে হার।)
• এসি মিলান-৩ : লিভারপুল-৩ (’০৫ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল। প্রথমার্ধে মালদিনিদের তিন গোলের জবাবে দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুলের তিন গোল। টাইব্রেকারে ম্যাচ জেতে লিভারপুল)
• পশ্চিম জার্মানি-৩ : ইংল্যান্ড-২ (১৯৭০ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল। দু’গোলে হারতে থাকা বেকেনবাওয়াররা জিতেছিলেন।)
• আন্ডারলেখ্ট-৩ : ওয়েদার ব্রেমেন-৫ (চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ১৯৯৩-৯৪। তিন গোলে এগিয়ে গিয়েও ওয়ার্ডার ব্রেমেন-এর কাছে হার।) |
|
ঐতিহাসিক এই ম্যাচের পাশে কাল রাতের অন্য সব ম্যাচই ঢাকা পড়ে গিয়েছে। স্পেন-ফ্রান্স মহাম্যাচও। যে ম্যাচে জাভির কর্নারের পর নিজের ‘রিবাউন্ড’ থেকে গোল করে সের্জিও রামোস স্পেনকে ১-০ এগিয়ে দেওয়ার পরে ৯৪ মিনিটে ইনজুরি সময় ১-২ করেন ফ্রান্সের অলিভিয়ের জিরু। দেশঁ-র দল বিশ্ব এবং ইউরোপ চ্যাম্পিয়নদের থেকে শুধু দু’টো মূল্যবান পয়েন্টই কাড়েনি, স্পেনের টানা ২৫তম বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং ম্যাচ জেতার নজিরও আটকে দিয়েছে। ইউরো রানার্স ইতালি ৩-১ হারিয়েছে ডেনমার্ককে। গোল মন্তোলিভো, দে রোসি ও বালোতেলি-র। বিশ্বকাপ রার্নাস নেদারল্যান্ডস ৪-১ হারায় রোমানিয়াকে। লেস, ইন্ডু, ফান ডার ফার্ট (পেনাল্টি) এবং ফান পার্সি-র গোলে। ও দিকে লাতিন আমেরিকান কোয়ালিফাইংয়ে বলিভিয়ার কাছে ১-৪ গোলে হেরে ফোরলানের উরুগুয়ে আরও সমস্যায়। |