‘মিশন রিও’-র দৌড়ে নেমে পড়েছেন জয়দীপ কর্মকার। চার বছর আগে থাকতেই। শ্যুটিং রেঞ্জে তো বটেই। রেঞ্জের বাইরেও!
লন্ডনে রয়্যাল আর্টিলারি বারাকে অভাবনীয় পারফরম্যান্স (অলিম্পিকে প্রথম কোনও ব্যক্তিগত ইভেন্টে নিখাদ বাঙালির করা সেরা পারফরম্যান্স একচুলের জন্য চতুর্থ হয়ে পদক হাতছাড়া) দেখানোর পর থেকেই সাফল্যের চাপ সামলানোর লড়াইটা যে আরও কঠিন হয়ে উঠেছে, তা বুঝতেই পারছেন নাগেরবাজারের অমরপল্লি-র শ্যুটার। সুদর্শন জয়দীপকে ঘিরে প্রত্যাশার পারদ ক্রমশ উর্ধ্বমুখী হওয়ার পাশাপাশি জনপ্রিয়তাও বেড়েছে হু-হু করে। পুজো উদ্বোধনের ডাক আসছে চার দিক থেকে। চার বছর পরের অলিম্পিকের জন্য রিও দে জেনেইরোয় যখন পা রাখবেন, তখন প্রত্যাশার চাপ তাঁর কাছে বুলডোজারের সমান হয়ে উঠবে, বিলক্ষণ আন্দাজ করতে পারছেন। তাই চার বছর আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু। “পুরো চার বছরই বা কোথায় হাতে? ২০১৬-র অলিম্পিক তো ৫ থেকে ২১ অগস্ট,” মনে করিয়ে দিচ্ছেন তিনি। সত্যিই, পুরো চার বছরও হাতে নেই জয়দীপের।
নিজের শহরে আধুনিক শ্যুটিং রেঞ্জের ব্যবস্থা নেই। মান্ধাতা আমলের প্রথায় কাগজের টার্গেট তৈরি করে প্র্যাক্টিস করতে হয় জয়দীপকে। সারা দুনিয়ার শ্যুটাররা যেখানে অনুশীলনে ইলেকট্রনিক টার্গেট ব্যবহার করেন, সেখানে বাংলার সর্বকালের অন্যতম সেরা শ্যুটারকে এখনও পড়ে থাকতে হচ্ছে প্রাচীন যুগে। ইউরোপে না গেলে আসল প্রস্তুতি শুরু করা সম্ভব নয়। তার আগে প্রস্তুতির প্রথম ধাপটা অবশ্য ইতিমধ্যেই সারা হয়ে গিয়েছে জয়দীপের। এবং সেটা বেশ অভিনব! |
রেলওয়ে এফসি-কে হারানোর তিন নায়ক। লেস্টার, রফিক ও ভিনসেন্ট। ছবি: উৎপল সরকার। |
রিও অলিম্পিক পর্যন্ত আগামী চার বছরের প্রস্তুতির নির্দিষ্ট প্রকল্প ছকে ফেলেছেন তিনি এবং তা রীতিমতো সবিস্তার পাঠিয়েও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রকে। যাঁরা বলেন, বাঙালি অলস, বাঙালির আঠারো মাসে বছর, তাঁরা জেনে অবাক হতে পারেন, সারা দেশে আর কোনও খেলার কোনও প্লেয়ারা এখনও পর্যন্ত এ রকম প্রকল্প তৈরি করে উঠতে পারেননি। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকে পাঠানো তো দূরের কথা। এমনকী লন্ডন অলিম্পিকে ভারতের ছয় পদকজয়ীও নন।
জয়দীপ নিজেও বললেন সে কথা। “আমার কানে এখনও আসেনি যে, পরের অলিম্পিকের জন্য চার বছরের প্রস্তুতির এ রকম প্রকল্প কেউ ক্রীড়ামন্ত্রকের কাছে জমা দিয়েছে বলে। এই প্রকল্প অনুযায়ীই আমাকে নানা সময় আর্থিক সাহায্য ও অন্যান্য নানা রকমের সহায়তা দেওয়ার কথা সরকারের। এ বার লন্ডনে যাওয়ার আগে আমার ফাইল যে ভাবে আটকে ছিল, সে জন্যই আমি অলিম্পিক থেকে ফিরেই এই প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু করে দিই। ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেনের কাছে তা পাঠিয়েও দিয়েছি। এ বার দেখা যাক, ওঁরা কী করেন।”
কিন্তু শুরুতেই তো অনিশ্চয়তা! জয়দীপের ১০ নভেম্বর জার্মানির ডর্টমুন্ডে রওনা হওয়ার কথা প্রস্তুতির জন্য। কিন্তু সে জন্য মাকেনের মন্ত্রক থেকে যে আর্থিক অনুদান এত দিনে এসে পৌঁছনোর কথা, সেটা এখনও আসেনি জয়দীপের কাছে। এবং যতক্ষণ না এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছেন, ততক্ষণ জার্মানি রওনা হওয়ার প্রস্তুতিও নিতে পারছেন না তিনি। ওদিকে জয়দীপের স্পনসর মিত্তল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রাস্ট-ও আপাতত চুপচাপ। লন্ডন গেমস শেষ হওয়ার পর তাদের কাছ থেকেও কোনও সাড়া পাননি জয়দীপ। তাই এখন ক্রীড়ামন্ত্রকের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনও উপায় নেই তাঁর।
পুজোর আগে অভিনব বিন্দ্রার বাড়িতে গিয়ে প্র্যাক্টিস করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু অভিনব পারিবারিক ব্যবসার কাজে বিদেশে থাকায় সেটাও হয়ে ওঠেনি। তাই পুজোর পর জার্মানি সফর দিয়েই রেঞ্জে নেমে ‘মিশন রিও’-র দৌড় শুরু করতে চান জয়দীপ। তার পরে ডিসেম্বরে দিল্লিতে জাতীয় শ্যুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ। ২০১৩-র এপ্রিল-মে, জুলাই এবং নভেম্বরে বিশ্বকাপের বিভিন্ন পর্ব। তবে জানাচ্ছেন, পরের বছরের বেশির ভাগটাই কাটবে প্রস্তুতিতে। ২০১৪ জয়দীপের কাছে ‘বিশাল বছর’। বললেন, “একই বছরে এশিয়াড, কমনওয়েলথ গেমস ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নিশপ। আমার বিরাট পরীক্ষা। আরও বড় ব্যাপার, ২০১৪-ই রিও অলিম্পিকে যোগ্যতা পাওয়ার বছর। এই মুহূর্তে তাই ২০১৬-র চেয়েও আমার কাছে ২০১৪ বেশি গুরুত্বপূর্ণ,” সাফ কথা জয়দীপের। |