|
|
|
|
ডাইনি অপবাদে তিন মহিলাকে পিটিয়ে খুন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দাসপুর |
ডাইনি অপবাদে মা-মেয়ে-সহ, ৩ আদিবাসী মহিলাকে পিটিয়ে মেরে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগ উঠল পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের দুবরাজপুর গ্রামে। মঙ্গলবার রাতের ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ৫ মহিলা-সহ ৭ জনকে ধরেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, নিহতেরা হলেন দুবরাজপুর গ্রামের আদিবাসীপাড়ার ফুলমণি সিংহ (৬২), তাঁর মেয়ে শম্বরী সিংহ (৪০) ও আর এক শম্বরী সিংহ (৫৫)। ফুলমণিদেবীর পড়শি-বাড়ির ওই মহিলার বিয়ে হয়েছে পাশের গ্রাম হরিরাজপুরে। তবে তিনি বাপেরবাড়িতে ছিলেন। দুবরাজপুরের বাসিন্দা আদিবাসীদের অনেকের কেন সর্দি-জ্বর হচ্ছে তা নিয়ে দিন পনেরো ধরে আদিবাসী সমাজের মাতব্বরেরা ঘন ঘন বৈঠক করছিলেন। ফুলমণি সিংহের নাতি বর্ষা সিংহের ক্ষোভ, “অসুখবিসুখ কেন হচ্ছে জানতে মাতব্বরেরা গড়বেতার আনন্দনগরে জানগুরুর কাছে যায়। সে-ই বোধ হয় ডাইনির কথা বলেছিল। তার জেরে ক’দিন ধরে সালিশি ডেকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে মা, দিদিমাকে মারধর করা হচ্ছিল। মঙ্গলবার পরিস্থিতি চরমে পৌঁছয়।”
মঙ্গলবার সকালে দুবরাজপুরে এক মাতব্বরের বাড়িতে সালিশি বসে। অভিযোগ, ফুলমণি ও দুই শম্বরীকে সেখানে ডেকে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় মারধর। ফুলমণির জামাই লক্ষ্মীকান্ত এবং আর এক শম্বরীর স্বামী বোবা সিংহ গ্রামে ছিলেন না। প্রতিবাদ করতে গিয়ে মার খান ফুলমণির ছেলে বুধু। এক শম্বরীর ছেলে বর্ষা এবং অন্য শম্বরীর ভাই সাধুকে সালিশিতে থাকতে দেওয়া হয়নি। তাঁদেরও প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়। আত্মীয়দের অভিযোগ, বিকেল এবং রাতে আরও দু’টি সালিশিসভার শেষে গ্রাম থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে কংসাবতী নদীর তীরে মোটা বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারা হয় ওই তিন মহিলাকে।
বুধবার ঘাটালের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অমিতাভ সরকার এবং জেলা পুলিশের একাধিক কর্তার উপস্থিতিতে কংসাবতীর তীরে বালিতে পোঁতা তিনটি দেহ উদ্ধার করা হয়। খুনের অভিযোগ দায়ের হয় প্রায় জনা পঁয়তাল্লিশের বিরুদ্ধে। জেলার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “৭ জন ধরা পড়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।”
দুবরাজপুর নেহাত অজপাড়া-গাঁ নয়। গ্রামে প্রাথমিক স্কুল আছে। কিলোমিটার তিনেকের মধ্যেই হাইস্কুল ও নাড়াজোল রাজ কলেজ। বহু শিক্ষিত মানুষের বাস রয়েছে গ্রামে। তা হলে এমন হল কেন? স্থানীয় নিজনাড়াজোল পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের উত্তম বাগ বলেন, “ঘটনাটা শুনেছি। আর কিছু জানি না।” গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষক লক্ষ্মণচন্দ্র সিংহ বলেন, “আমি নিজে আদিবাসী সম্প্রদায়ের। কুসংস্কারের বশেই এমন ঘটেছে।” |
|
|
|
|
|