বিরোধিতার জন্যই বিরোধিতা করা, শাসক পক্ষ যাহা বলিতেছে বা করিতেছে, বিরোধী পক্ষ হিসাবে সর্বতোভাবে তাহার বিপরীত বলা বা আচরণ করা, তাহা করিতে গিয়া নিজেরা শাসক থাকা কালে গৃহীত নীতি ও কর্মসূচিরও বিরোধিতায় মুখর হওয়া এই আত্মঘাতী রাজনীতি ইদানীং ভারতীয় দলগুলির দস্তুর হইয়া পড়িয়াছে। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি, বিমানবন্দর আধুনিকীকরণ, পেনশন ও বিমায় বিদেশি বিনিয়োগের মতো বিষয়গুলি লইয়া যেমন বিজেপি উদারনৈতিক অবস্থানই গ্রহণ করিয়াছিল। সেটা ছিল এনডিএ জমানার যুগ, মনমোহন সিংহ প্রবর্তিত সংস্কার কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্ব সমাধা করার দায়িত্ব বিজেপি সে দিন আপন স্কন্ধে তুলিয়া লয়। তাহার পর ক্ষমতা হস্তান্তরিত হইলে ক্রমে বিজেপির আচরণ ‘জাতীয় বিরোধী দল’-এর অনুরূপই হইয়া ওঠে। অর্থাৎ সংস্কার কর্মসূচির তীব্র বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয়। এই প্রেক্ষিতেই সম্প্রতি লালকৃষ্ণ আডবাণীর কণ্ঠে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে ইউপিএ সরকারের ‘একশো দিনের কাজের প্রকল্প’র ভূয়সী প্রশংসা উল্লেখযোগ্য। বিরোধী নেতার এই শংসাপত্র লইয়া প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অনায়াসেই ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ইউপিএ-র নেতৃত্ব দিতে পারেন!
প্রশ্ন উঠিবে, দেশের ভিতরে কখনও সরকারি কর্মসূচি বিষয়ে এমন শংসাবাক্য বিরোধীদের মুখে শোনা যায় না কেন? গত মাসেই ওয়াশিংটনে কংগ্রেস ও বিজেপির মুখপাত্র যথাক্রমে মনীশ তিওয়ারি এবং রাজীবপ্রতাপ রুডি মার্কিন শ্রোতাদের এক জমায়েতে পরস্পরের প্রতি, পরস্পরের দল ও দলীয় নীতি-কর্মসূচির প্রতি যে শ্রদ্ধা, সৌজন্য প্রদর্শন করিয়াছেন, তাহা দৃষ্টান্তমূলক। কংগ্রেস মুখপাত্র তিওয়ারি তো এনডিএ জমানার বিদেশনীতির ভূয়সী প্রশংসা করিয়া ভারত-মার্কিন সুসম্পর্কের বনিয়াদ রচনার জন্য বিজেপি সরকারকে কৃতিত্ব দিতেও দ্বিধা করেন নাই। উভয় ক্ষেত্রেই যে বাস্তবতা ও মূল্যায়নের উপর এই পারস্পরিক অবস্থান ভিত্তি করিয়া আছে, তাহার প্রদর্শনী কেবল দেশের বাহিরেই হইবে কেন? বিদেশিদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখার কূটনৈতিক তাগিদ নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয়রা কেবল পরস্পরের সহিত ঝগড়া করে, পরস্পরের নিন্দা ও কুৎসা করে, এই ধারণা বিদেশে প্রচারিত হওয়া উচিত নয়। কিন্তু কেবল সে জন্যই কি রাজীবপ্রতাপ রুডি ইউপিএ সরকারের এবং মনীশ তিওয়ারি এনডিএ সরকারের কীর্তি ও কৃতিত্বের কথা বিদেশি শ্রোতাদের সমীপে তুলিয়া ধরিলেন? বিরোধী পক্ষ দুর্নীতির তীব্র নিন্দা করুন, জনস্বার্থ হইতে বিচ্যুতির কড়া সমালোচনাও কাম্য। কিন্তু আর্থিক উন্নয়নের গতি রুদ্ধ করার আত্মঘাতী প্রয়াস, ভারত-বন্ধ-এর মতো প্রতিবাদী অচলাবস্থার আবাহন কিংবা সংসদ অচল করার নেতিবাচক কর্মকাণ্ড হইতে নিরস্ত হউন। তাঁহারা মনে রাখুন, পরবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হইলে তাঁহাদের সামনেও উন্নয়নের একই চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হইবে। |