|
|
|
|
|
কামাখ্যাদেশেই চকা হাঁস,
বুড়ো আংলার কৈলাস দর্শন
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
|
অলি-গলি-পাকস্থলির ভিতর দিয়ে বিষ্ণুপুর। সেখান থেকে ডাঁয় ঘুরেই মিলবে খোলা দরজা। তার পর ফের ডাইনে তাকালেই....ও মা! এ দেখি সাক্ষাৎ কৈলাস পর্বত নেমে এল শহরে!
এলই তো! বুড়ো চকা নিকোবর হাঁস, বুড়ো আংলার মাথায় আলতো চাঁটি মারল। “তবে বলছি কী? খামোকা, উত্তুরে, কনকনানো হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানস সরোবর অবধি যাওয়া কেন বাপু? তার চেয়ে হাতের কাছেই পাহাড়টাকে এনে ফেলা গিয়েছে।” কে আনল? এত্তবড় পাহাড়! এত্ত বরফ! শিবের শরীরটাও ছয় তলা বাড়ির সমান উঁচু! হাঁস প্যাঁকপেকিয়ে খানিক দুর গিয়ে, ডানা ঝাপটালো। তাপ্পর, ভারি শরীরটা নিয়ে পাহাড়ের প্রথম ধাপে চড়ে বলল, “ও হরি! বোকার হদ্দ আর কাকে বলে? এতো সব শুকনো সাদা রে! ফাঁপা পাহাড়। তবে মহাদেবের মূর্তিটা পেল্লায়!”
কপাল থেকে সাদা রং-এর পোঁচ মুছে শিল্প নির্দেশক বিনোদ বরা জানান, “আসলে বিষ্ণুপুর সর্বজনীন দুগ্গাপুজো কমিটি ৬২ বছরে পড়ল। তাই অন্যরকম কিছু ভাবতে ভাবতেই শিবের মাথা ৬২ ফুট ছুঁয়েছে।” রিদয়ের কাছে সামনে বসা নন্দী-ভৃঙ্গীরাই অনেক অনেক উঁচিয়ে রয়েছে। তুরতুরিয়ে গুহার মধ্যে ঢুকে পড়েই ঠান্ডায় জমে আইসক্রিম! চকার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ল, “বলি বরফ নেই তো এমন ঠান্ডা কেন?” বিনোদ বাবু বললেন, “ভিতরটা যে পুরো এসি।”
কমিটির লোকজন ছটফটাচ্ছে। ভিতরে আর্ট কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র বিনোদ বরার কাপ্তানিতে গড়ে উঠছে গুহাপথ, সুড়ঙ্গপথ, দেওয়ালে খোদাই দেবী মূর্তি। মহাদেব কেবল বিষ্ণুপুরেই সীমাবদ্ধ নন। বরং মহাবাহুর পাড়ে, দুই বড় পুজোয় তিনিই ‘হিট আইটেম’। কামাখ্যা পাহাড় থেকে নেমেই চোখে পড়ছে বিরাটাকায় শিবলিঙ্গ! রিদয় ভেবেছিল, মূর্তি। কাছে গিয়ে দেখা গিয়েছিল ওটা আসলে প্যান্ডেল। কামাখ্যার পাদদেশে, ভূতনাথ পুজো কমিটির মণ্ডপে গড়ে উঠছে মহা শিবলিঙ্গ। ১১ হাজার ছোটো শিবলিঙ্গের সমষ্টিতে সেই বিরাটাকায় ৫০ ফুট শিবলিঙ্গ বানাচ্ছেন অমিত ধীরাসরিয়া। পুজোর থিম ‘মহাকায়, মহান, মহাকাল!’ প্রতিমায় পুরীর জগন্নাথের ছাঁচ যেন। রিদয়ের মনে পড়ে, ময় দানবের কথা। এখানে কৈলাস, ওখানে মহা শিবলিঙ্গ! বসালেই হল? মুখের কথা না কী? বুড়ো আঙুলের আকারের ছেলেটার মন পড়ে ফেললেন বিনোদ। “মহাদেবের মাথা থেকে গঙ্গা নামানোই শক্ত কাজ বুঝলে কী না? অত উঁচুতে পাম্প করে জল তোলা। জল ফেলা।” বিনোদ গঙ্গা নামানোর পরীক্ষায় ভগীরথ হয়ে গিয়ে আকাশ ছোঁয়া শিবের মাথার দিকে তাকিয়ে কী সব ভাবতে থাকেন। পুজো কমিটির সভাপতি জয়ন্ত রায় রিদয়ের জন্য নকুলদানা আর চকা নিকোবরের জন্য গুগলি-শামুকের চচ্চড়ি এনেছিলেন। অবন ঠাকুরের অতিথি বলে কথা। জিজ্ঞেস করলেন, “অনেক জায়গায় তো উড়ছেন, তা এমন জম্পেশ আয়োজন আর কোথাও দেখলেন?” ১৮ লাখি পুজো ধারে ও ভারে জিততে পারবে কী না সেটাই যাচাই করা আর কি। কোনও শিবকেই খাটো করা চলে না। গম্ভীর চকা সসে চচ্চড়ি মাখতে মাখতে কেবল বলল, ‘ব্যোম শঙ্কর’। |
|
|
|
|
|