কেজরিওয়ালের লক্ষ্য গডকড়ী, পাল্টা বিজেপির
নিশানায় কংগ্রেসের পরে এ বার বিজেপি। রবার্ট বঢরা, সলমন খুরশিদের পরে এ বার নিতিন গডকড়ী। বিজেপি সভাপতির বিরুদ্ধে আজ দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এবং তার পরেই একজোট বিজেপি তো বটেই, সঙ্ঘ পরিবারও নেমে পড়ে গডকড়ীর সমর্থনে।
এমন আক্রমণ যে আসতে চলেছে, তা জানতেন বিজেপি নেতৃত্ব। আজ যে অভিযোগ তুলেছেন কেজরিওয়াল, তা একেবারেই ব্যবসায়ী গডকড়ীকে কেন্দ্র করে। তাঁর বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্রে এনসিপি-কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে জোট বেঁধে কৃষকদের জমি দখল করার অভিযোগ আনলেন অরবিন্দ। তার পরে গডকড়ী তো বটেই, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলির মতো নেতারাও সন্ধ্যায় বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিলেন। প্রশ্ন তুললেন কেজরিওয়ালের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও। প্রশ্ন হল, অভিযোগ যখন উঠছে গডকড়ীর নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়ে, তখন বিজেপির দুই সংসদীয় নেতাকে কেন সামনে আসতে হল?
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, গডকড়ীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তুলনায় কিছুই নয়। যে জমি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেটিও আসলে পতিত জমি। বাইশ বছর আগে সেখানে সরকার জমি অধিগ্রহণ করেছে। ফলে কোনও দলের সঙ্গে যোগসাজশের প্রশ্নই উঠছে না। আর কেজরিওয়ালের টিমের সদস্য অঞ্জলি দামানিয়া গডকড়ী-পওয়ারের যে যোগশাজসের অভিযোগ তুলেছেন, তা-ও সত্য নয়। নিয়ম অনুসারে সেই জমি সামাজিক কাজে ব্যবহার করাও অনৈতিক নয়। কিন্তু এই অভিযোগ তুলে শুধু ব্যক্তি গডকড়ী নয়, কেজরিওয়াল নিজের রাজনৈতিক জমি তৈরি করার উদ্দেশে গোটা বিজেপিকেই নিশানায় নিয়ে আসতে চেয়েছেন। ফলে এখানে শুধু ব্যক্তি গডকড়ী নয়, গোটা দলের বিশ্বাসযোগ্যতাই প্রশ্নের মুখে। সে কারণেই জেটলি-সুষমাকে এনে দলের নেতা-কর্মীদের কাছেও বার্তা দেওয়া হল, দলের ভাবমূর্তি আগের মতোই উজ্জ্বল।
জেটলির কথায়, “কেজরিওয়ালের তোলা অভিযোগের বহর দেখেই স্পষ্ট, সেখানে কোনও দুর্নীতি নেই। আর রবার্ট বঢরার দুর্নীতির ধারেকাছেও কেউ যেতে পারেননি। রাজনৈতিক স্বার্থে বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে হবে, স্রেফ সে জন্যই এই অভিযোগ তোলা হল।” জেটলি-সুষমারা যে গডকড়ীর সমর্থনে এগিয়ে এলেন, এর পিছনে সঙ্ঘেরই হাত রয়েছে। তা কবুল করছেন বিজেপি নেতারা। দলের এক নেতার কথায়, যে গডকড়ীর উপরে স্বয়ং সরসঙ্ঘচালকের আশীর্বাদ রয়েছে, তাঁকে তো আড়াল করা হবেই। তা সে যতই অন্য দলের সঙ্গে জোট বেঁধে ব্যবসায়িক স্বার্থ চরিতার্থ করার অভিযোগ উঠুক। বা তার সঙ্গে দল পরিচালনার কোনও সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক। সঙ্ঘের তরফেও গডকড়ীর পক্ষে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। মুখপাত্র রামমাধব বলেছেন, “কেজরিওয়ালের নাটক আসলে গডকড়ীকেই সাহায্য করল। বোঝা গেল, বিদর্ভের চাষিদের জন্য তিনি কত ভাল কাজ করেছেন।”
কেজরিওয়াল কেন দল নির্বিশেষে এ ভাবে একের পর এক নেতাকে নিশানা করছেন?
রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, এ ভাবে নিজের রাজনৈতিক জমি শক্ত করছেন কেজরিওয়াল। রাজনৈতিক দল তৈরির আগে দেখাতে চাইছেন, তিনি কংগ্রেস-বিজেপি দুই বড় দলের থেকেই সমদূরত্ব রেখে চলছেন। ছাড়ছেন না শরদ পওয়ার, বাল ঠাকরে, করুণানিধি, জয়ললিতা, মায়াবতী, মুলায়মের মতো নেতাদেরও। সব দলের মধ্যেই যে তলে তলে যোগসাজশ রয়েছে, সে কথা প্রমাণের চেষ্টা করে নিজের একটি পৃথক অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন কেজরিওয়াল। তাই ‘ম্যায় হু অণ্ণা’ টুপি বদলে গিয়েছে ‘ম্যায় হু কেজরিওয়াল’ টুপিতে।
এ দিন যে মঞ্চ থেকে তিনি অভিযোগ এনেছেন গডকড়ীর বিরুদ্ধে, সেখান থেকেই জানিয়েছেন, ১ নভেম্বর সলমন খুরশিদের নির্বাচনী কেন্দ্র ফারুকাবাদে যাবেন তিনি। সকলকে সেই প্রতিবাদ মঞ্চে যোগ দেওয়ার আহ্বানও জানান। তার পরেই সলমন বলেন, “আইনমন্ত্রী হওয়ার পরে আমাকে কলম দিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছিল। শুধু কলম নয়, রক্ত দিয়েও আমি কাজ করতে পারি।” এর সঙ্গে যোগ হয় তাঁর সরাসরি হুঁশিয়ারি, “কেজরিওয়াল ফারুকাবাদে ঢুকলে আর বেরোতে পারবেন না।” অনেকে মনে করছেন, এ ধরনের মন্তব্য করে আসলে কেজরিওয়ালদের গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতাই বাড়িয়ে তুলছেন সলমনরা। কেজরিওয়ালও এই সুযোগের ভরপুর ফায়দা তুলছেন। তিনিও বলেছেন, “আমাকে মেরে ফেলে লাভ হবে না। এক কেজরিওয়ালের মৃত্যু হলে, হাজার-লক্ষ কেজরিওয়ালের জন্ম হবে।”
কেজরিওয়াল যে ভাবে কংগ্রেস বিরোধিতা করছেন, তাতে কপালে ভাঁজ পড়েছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপির। তাই বিজেপি নেতৃত্ব কেজরিওয়ালের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন। সুষমা স্বরাজ বলেছেন, “কেজরিওয়াল আজ দুর্নীতির অভিযোগ তোলার থেকে রাজনৈতিক ভাষণ দিলেন। ওঁর ইচ্ছা হলে ভোটে লড়ুন। তার পর দেখা যাক, জনতা কাকে কোন আসনে বসায়।”
তবে বিজেপি যতই ঐক্যবদ্ধ দেখানোর চেষ্টা করুক, এ দিন কেজরিওয়াল কিন্তু তাদের অন্দরের কোন্দল উস্কে দিলেন। প্রশ্ন তুললেন গডকড়ীকে দ্বিতীয় বারের জন্য সভাপতি করা নিয়ে। প্রশ্ন তুললেন, গডকড়ী কি শিল্পপতি, নাকি রাজনীতিক? দলের অনেকেই মনে করেন, এক জন যথার্থ রাজনৈতিক নেতার মতো দল পরিচালনা করার ক্ষমতা নেই গডকড়ীর। সর্বত্র তিনি ব্যবসায়িক স্বার্থ নিয়েই কথা বলেন। আজ কেজরিওয়ালের অভিযোগও তাই ছিল।
সুষমা অবশ্য পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলনে কেজরিওয়ালকে কার্যত নস্যাৎ করে দিয়ে বলেন, “এই দু’টি বিষয়ে নাক গলানোর কেউ নন কেজরিওয়াল।” তবে বিজেপি নেতারা এ-ও মেনে নিয়েছেন, এ দিন যে দলীয় সংহতি দেখানো হয়েছে, সেটা সঙ্ঘের চাপে এবং দলীয় কর্মীদের বার্তা দিতেই এই কৌশল। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা রসিকতার ছলে বলেন, যে ভাবে কেজরিওয়াল গডকড়ীর দুর্নীতির মুখোশ খোলার কথা বলেছিলেন, কার্যক্ষেত্রে তা কিছুই হল না। এর ফলে দলের মধ্যে গডকড়ী-বিরোধীরাই আসলে হতাশ হলেন!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.