শহরজুড়ে থিমের মাঝেও দীর্ঘ দিন নিজেদের সাবেকিয়ানা ধরে রেখেছিল কয়েকটি পুজো কমিটি। শেষ পর্যন্ত ‘বৃদ্ধ’ বয়সে এসে তারাও নাম লেখাল থিমের পুজোয়। যদিও থিমের দাপটে পুজোর সাবেকিয়ানা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না বলেই পুজোকর্তাদের দাবি। তবে ভোল বদল যে হচ্ছে, তা ঠারেঠোরে মেনে নিচ্ছেন পুজোকর্তারা।
উত্তর কলকাতার বুকে দ্বিতীয় বারোয়ারি পুজো ছিল শিকদারবাগান। ১৯১৩ সালে শিকদারবাগানের মিত্র বাড়ি সংলগ্ন মাঠে শুরু হয়েছিল পুজো। সেই থেকে টানা সাবেকি পুজোতেই নাম করেছিল শিকদারবাগান সর্বজনীন। এ বার শতবর্ষে তাঁরা প্রথম থিমের পুজো করলেন। ভবতোষ সুতারের পরিকল্পনায় এ বার নানা আকারের দাঁড়িপাল্লায় সাজছে শিকদারবাগানের পুজো। কেন এই ‘পরিবর্তন’? পুজো কমিটির সম্পাদক গৌরীশঙ্কর রায়চৌধুরী বলছেন, “এখন থিমের যুগ। তাই ১০০ বছরটাকেই পরিবর্তনের বছর হিসেবে বেছে নিয়েছি।” তাঁর দাবি, পাড়ার লোকেরাও এ বার থিম পুজোকেই সমর্থন করছেন। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিমাও গড়েছেন ভবতোষ। তবে এত দিন শিকদারবাগানে প্রতিমার গায়ের যে রং দেখা গিয়েছে, এ বারেও তার বদল হয়নি।
ঠিক এই ভাবেই শতবর্ষে থিমের পুজোর যাত্রা শুরু করেছিল উত্তর কলকাতার প্রথম বারোয়ারি পুজো শ্যামপুকুর আদি সর্বজনীন। ২০১০-এ শতবর্ষ পেরিয়ে এ বার তাঁদের থিম সৌন্দর্যায়ন ও দুর্গার চিরন্তনী রূপ। তরুণ শিল্পী স্বরূপ নন্দী কাজ করছেন সেখানে। থিমের মণ্ডপ হলেও সাবেকি প্রতিমাই রয়েছে সেখানে। বংশ পরম্পরায় চলে আসা পুরোহিত-ঢাকিদেরও বদল হচ্ছে না।
১৯৩৭ সালে স্বদেশি যুবকদের নিয়ে পুজো শুরু হয়েছিল হাতিবাগান এলাকার কাশী বোস লেনে। এ বারে ৭৫ বছরের পুজো তাঁদের। সে কথা মাথায় রেখে গত বছর থেকেই থিমের দিকে ঝুঁকেছিল তারা। এ বছর গৌরাঙ্গ কুইল্যা সেখানে পৃথিবী রক্ষার কথা তুলে ধরছেন। পুজো কমিটির কর্তা সোমেন দত্ত বলছেন, “সাবেকিয়ানা ভাল। তবে থিমে সামাজিক বার্তা দেওয়ার বিষয়টি থাকে। বার্তা দিতে তাই ৭৫ বছরকেই বেছে নিয়েছি।” থিম পুজো হলেও সাবেকিয়ানাকে ছাড়েননি তাঁরা। তিন দিন ধরে চলে আসা ভোগেরও বদল হবে না।
বেলগাছিয়া সাধারণের পুজোর পরিচিতি ‘উত্তরের ম্যাডক্স স্কোয়ার’ বলে। ৬৪ বছর পেরিয়ে এ বার থিমের হাত ধরেছে এই সাবেকি পুজোও। শিল্পী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় থিম হিসেবে বেছেছেন নৌকোকে। ১০০ ফুট লম্বা একটি বিশাল নৌকোর পাশাপাশি থাকছে আরও কয়েকটি ডিঙি নৌকো। উত্তরের বাসিন্দারা জানেন, বেলগাছিয়ায় পুজোর পাশাপাশি অন্যতম আকর্ষণ মেলা। সম্পাদক অরিন্দম সাহা জানান, এ বার থিমের জন্য মেলার দোকানের সংখ্যা কমছে। |