তিন বছর আগে ডামাডোলের বাজারে নিজের মাইনে ছেঁটে এক ডলার করে দিয়েছিলেন। সেই বিক্রম পণ্ডিত হঠাৎ কেন সিটি গ্রুপের কাণ্ডারীর ভূমিকা ত্যাগ করলেন, তাই নিয়ে বিশ্ব বাজার জল্পনায় গরম। অভিযোগের তির সিটি-র পরিচালন পর্ষদের দিকেই। এরই সঙ্গে রজত গুপ্তের পর পরই আর এক ভারতীয় এখন মার্কিন বাজারে শিরোনাম কাড়তে শুরু করলেন।
কেউ বলছেন পরিচালন পর্ষদের সঙ্গে মতভেদ। কেউ বলছেন যে ভাবে সমস্যার মধ্যে থেকে সিটি গ্রুপকে একটা ভদ্র জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন পণ্ডিত, তার যোগ্য সম্মান মেলেনি। আবার কেউ বলছেন সব কটা কারণই কাজ করেছে তাঁর সরে যাওয়ার পিছনে।
বিক্রম পণ্ডিত |
২০০৭-এ সিটি-র হাল ধরার দু’বছরের মধ্যেই যে সাব-প্রাইম ঋণ কেলেঙ্কারিতে লেম্যান ব্রাদার্সের মতো সংস্থা ডুবে যায়, তাতে গোটা মার্কিন আর্থিক বাজারই টলে গিয়েছিল। এর ফলে শুরু হয় যে মন্দা, তার ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি বিশ্ব বাজার। রেহাই পায়নি সিটি, গোল্ডম্যান স্যাক্স বা লয়েড ব্ল্যাঙ্কফেইনের মতো সংস্থাও।
সিটির মতো অন্য আর্থিক সংস্থাগুলিকেও সরকারি ত্রাণ প্রকল্প গ্রহণ করতে হয় বাঁচার জন্যই। তবে কোনও সংস্থার কর্ণধারই তাঁদের বেতন কমিয়ে এক ডলারে দাঁড় করাননি।
শুধু তাই নয়, ২০১০-এর মধ্যেই খরচ কমিয়ে, ব্যবসা বাড়িয়ে পণ্ডিত সংস্থাকে লাভের মুখ দেখান। সরকারি ঋণ শোধ করার পরে পণ্ডিতের মাইনে ২০১১-এ বেড়ে হয় প্রায় ১৭ লক্ষ ডলার। বোনাসও দেওয়া হয়। এর বাইরেও নানা সুবিধা বাবদ পান ১ কোটি ৩২ লক্ষ ডলার। সংস্থা জানিয়েছে, তাঁর উত্তরসুরি মাইকেল করবাট-এর বার্ষিক মূল বেতন হবে ১৫ লক্ষ ডলার।
অন্য সংস্থার তুলনায় সিটি অনেক ভাল ফল করেছে, মানছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সে সব সংস্থায় কর্ণধার ও কর্মীদের অনেক বেশি মাইনে বেড়েছে। গোল্ডম্যান বা লয়েড কর্ণধাররা ১.৬০ কোটি ডলারেরও বেশি পাচ্ছেন। অথচ সিটি ২০১১-এ যেখানে নিট আয় করেছিল ৪৪০ কোটি ডলার, সেখানে গোল্ডম্যানের লাভ টেনেটুনে ৯৬.২০ কোটি ডলার। ২০০৭-এ, পণ্ডিত যখন ভার নেন, তার তুলনায় শেয়ার দাম এখনও ৮৮% কম। গোল্ডম্যান স্যাক্সের দর ৫০% কম। কিন্তু এক বছরে সিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৪০.৫%, সেখানে গোল্ডম্যানের মাত্র ৩৮.৩%। তবুও বাজারকে অবাক করে সংস্থার শেয়ারহোল্ডাররা কর্তাদের মাইনে বাড়ানোর প্রস্তাব নাকচ করেন।
এই পরিস্থিতিতে তাঁর বিদায়কে আরও তিক্ত করে তুলতে পর্ষদ বিশেষ ব্যবস্থা নেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। তবে তিনি যে অসন্তুষ্ট হয়েই পদত্যাগ করেছেন সে নিয়ে কোনও সংশয় নেই। সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, এই ভাবে এত উঁচু পদের কেউ ইস্তফা দেন না, যদি না বিরোধ সেই জায়গায় পৌঁছয়। |