পদ্মার ঘাটতি মেটাবে ইরাবতী।
বাংলাদেশ সরকার রফতানি নিয়ন্ত্রণ করায় এ বার বাঙালির পাতে তেমন ইলিশ মেলেনি। তাই পুজোর মুখে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মায়নমার থেকে ইলিশ আনার ব্যবস্থা হয়েছে। জাহাজে করে আনার সময় আর নেই। তাই বিমানে আসছে সেই ইলিশ। রাজ্যের মৎস্য প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা বলেন, “পুজোয় রাজ্যের বাসিন্দাদের পাতে মায়ানমারের ইলিশ দিতে পারব আশা করছি।”
এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মাকে চিঠি লিখে মায়ানমার থেকে ইলিশ আমদানির প্রয়োজনীয় অনুমতি চেয়েছিলেন। আনন্দ শর্মা তার জবাবে মুখ্যমন্ত্রীকে লিখেছিলেন, “আমি বিষয়টি পর্যালোচনা করেছি। ভারত-আসিয়ান চুক্তির মধ্যে ইলিশ ও অন্য মাছ আমদানির সুযোগ রয়েছে। আমদানির জন্য শুল্কে প্রয়োজনীয় ছাড়েরও ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া মায়ানমার থেকে ইলিশ আনতে বিশেষ কোনও অনুমতিরও প্রয়োজন নেই।” বাণিজ্যমন্ত্রী রাজ্যের মৎস্য আমদানিকারীদের মায়ানমার থেকে ইলিশ ও অন্য মাছ আনতে উৎসাহ দিতেও রাজ্যকে অনুরোধ করেন। কোনও সমস্যা হলে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রককে জানাতেও বলেছেন তিনি।
সেই চিঠি পেয়েই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মৎস্য দফতর কাজে নেমে পড়ে। বেশ কিছু দিন ধরে সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে আলোচনা করেন সুব্রতবাবু। তারপরেই ভারতীয় খাদ্য সুরক্ষা ও মানক সংস্থা (এফএসএসএআই), পশু পৃথকীকরণ ও সার্টিফিকেশন সংস্থা (একিউসিএস), শুল্ক দফতর, এয়ারপোর্ট অথরিটি এবং আমদানি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে সকলেই জানিয়েছেন, পুজোর মধ্যে মায়ানমারের ইলিশ কলকাতার বাজারে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈঠকে ঠিক হয়, পুজো যেহেতু এসে পড়ায় এখন আর জাহাজে আনলে চলবে না। বিমানেই ইলিশ আনতে হবে। তবে পুজো মিটে গেলে আবার জাহাজেই আনা হবে সেই ইলিশ। কেননা, বিমানে আনলে তার খরচ অনেকটাই বেশি হবে। ইলিশের দামও তাই বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।
বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আনতে কোনও কর দিতে হয় না ভারতীয় আমদানিকারীদের। মায়ানমার থেকে ইলিশ আনতে অবশ্য কিছুটা কর দিতে হবে। ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মকসুদ বলেন, “বৈঠকে সমস্ত জটিলতা কেটেছে। আশা করি পুজোর আগে মায়ানমার থেকে দু’হাজার কেজি ইলিশ কলকাতায় আনা যাবে। এক কেজির উপরে থাকা ইলিশের দাম বাজারে কেজি প্রতি দর সাতশো থেকে আটশো টাকা মতো হবে।” তিনি জানিয়েছেন, এমনিতে ৩৮ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। কাঁচা মাছের ক্ষেত্রে দিতে হবে ২৯ শতাংশ। মায়ানমার থেকে ইলিশ আনার জন্য সম্পূর্ণ কর মকুবের আবেদনও জানিয়েছেন তাঁরা।
এর আগেও মায়ানমার থেকে ইলিশ এনেছেন কলকাতার মৎস্য আমদানিকারকরা। তার পরিমাণ অনেকটাই কম। তাঁরা এ বারে অবশ্য অনেক বেশি পরিমাণে মায়ানমারের ইলিশ আনার পরিকল্পনা করেছেন। এ ছাড়া নিয়মিত মায়ানমার থেকে ইলিশ আনার পরিকল্পনাও করেছেন তাঁরা। মৎস্য ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, প্রথম বার মায়ানমার থেকে ইলিশ আনা গেলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাছের বাজার ভারতের জন্য খুলে যাবে। |