মিউচুয়াল ফান্ড বাজার জাগছে। আপনি?
কটু সাহস করেই ধরে নিচ্ছি যে, ফান্ড নিয়ে এত দিনে অন্তত একটা প্রাথমিক ধারণা তৈরি হয়েছে আমাদের। তাই আজকে না হয় একটু চমকে দিয়েই শুরু করি।

সেই ২০০৮ থেকে প্রায় নিয়ম করে সকলের গাল-মন্দ খেয়ে আসছে ইক্যুইটি ফান্ড। দু’বেলা তাকে শাপ-শাপান্ত করেছেন বিনিয়োগকারীরা। কারণ, এই ধরনের ফান্ডে টাকা রাখার মানে তার অধিকাংশটাই খাটানো হবে বিভিন্ন শেয়ারে। তাই ২০০৮ সালের মন্দার পর থেকেই কপাল পুড়েছিল তার। দুনিয়া জুড়েই বাজারের হাল খারাপ হওয়ায় প্রত্যাশিত রিটার্ন মেলেনি এই ফান্ড থেকে।
কিন্তু চমক হল চাকা ঘুরছে। অন্তত আমাদের দেশে। যাবতীয় দ্বিধা ঝেড়ে একেবারে পুরনো মেজাজে দ্বিতীয় দফার সংস্কারে মন দিয়েছেন মনমোহন সিংহ। বছরের পর বছর আটকে থাকা সংস্কারের ঘোষণা মাত্র কয়েক সপ্তাহেই করে ফেলেছে কেন্দ্র। আর তাতেই ফুরফুরে হয়ে গিয়েছে বাজারের মন। মাঝে-মধ্যে সামান্য নামলেও, অন্তত এই লেখার দিন পর্যন্ত তার মুখ রয়েছে উপরের দিকে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই হাল ফিরেছে ইক্যুইটি ফান্ডেরও। তাই ভাল রিটার্নের আশায় বুক বাঁধছেন সেখানে টাকা রাখা অনেকেই।

গত কয়েক বছর যে ভাবে কেটেছে, তাতে জানি, এই ‘পরিবর্তন’-এর খবর বিশ্বাস হওয়া শক্ত। বেশ তো, না হয় কয়েকটা উদাহরণের উপর চোখ রেখেই দেখি। শেষ তিন মাসের পরিসংখ্যানে চোখ বোলান। দেখবেন—
• যে-সব ফান্ড বড় সংস্থার শেয়ারে লগ্নি করেছে (লার্জ ক্যাপ), গড়ে প্রায় ৭% রিটার্ন দিয়েছে তারা। বেশ ভাল। তাই না?
• পিছিয়ে নেই স্মল এবং মিডিয়াম ক্যাপ ফান্ড-ও। ছোট ও মাঝারি সংস্থার শেয়ারে টাকা লাগানো এই সব ফান্ডের গড় রিটার্ন ১০ শতাংশের উপরে।
• যে-সব ফান্ড ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংস্থার শেয়ারে টাকা ঢালার পরিবর্তে কোনও একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের সংস্থায় তা করছিল (সেক্টোরাল ফান্ড), এখন যথেষ্ট জোরে দৌড়চ্ছে তাদের অনেকেই। ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) ও ওষুধ (ফার্মা) সংস্থাগুলিতে টাকা লাগানো ফান্ডই দেখুন। যথাক্রমে ১১ ও ৮% রিটার্ন দিয়েছে তারা।

তা হলে সব মিলিয়ে কী বোঝা গেল? এত দিন সব টাকা জলে গিয়েছে বলে যে ইক্যুইটি ফান্ডের কাগজখানা এক কোণে ফেলে রেখেছিলেন, তা থেকে এ বার ধুলো ঝাড়ার সময় এসেছে। শুধু তা-ই নয়। যাঁরা আর কখনও এই ফান্ডের মুখ না-দেখার ধনুকভাঙা পণ করেছিলেন, ফের এক বার ভেবে দেখার সময় এসেছে তাঁদেরও।
বাজারের যা হালচাল, তাতে আগামী দিনে ইক্যুইটি-ই ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ হলে অবাক হবেন না। কারণ, রাজনীতির কোঁদল সংস্কারের পথে কাঁটা না-হলে, নিফ্টি কিংবা সেনসেক্স এখন দৌড়বে ওপরের দিকেই। বাড়বে ফান্ডের চাহিদা। শুধু বাড়বে বলা ভুল। ইতিমধ্যেই যে ওই চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে, ফান্ডগুলির খাটানো মোট টাকার অঙ্ক (অ্যাসেট আন্ডার ম্যানেজমেন্ট) বৃদ্ধি থেকেই তা স্পষ্ট। কারণ, মূলত ইক্যুইটি-র দিকে তাকিয়েই তো বেশি রিটার্নের আশায় ফের ফান্ডের দরজায় ভিড় করছেন বিনিয়োগকারীরা।

সেই কবে ন্যাভ বাড়ার আশায় ইক্যুইটি ফান্ডের ইউনিট কিনেছিলেন আপনি। মাঝে বাজারের দশা বেহাল থাকায় এখনও যা আপনার হাতে ধরা। কিন্তু এ বার ন্যাভ কিছুটা বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আপনিও দোটানায়।
এক বার মনে হচ্ছে, ইতিমধ্যেই ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে। ভাল বাজারের সুবিধা নেওয়ার এটাই সেরা সময়। যদি আবার বাজার পড়ে?
পর মুহূর্তেই আপনি ব্যাক ফুটে। মন বলছে, বাজার আরও উঠলে কিন্তু হাত কামড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। অতএব চুল ছেঁড়া কী করি?


স্বীকার করতে লজ্জা নেই, আপনার এই প্রশ্ন কিন্তু বেশ ধন্দে ফেলে দিয়েছে আমাকেও। কারণ, এক কথায় এর উত্তর হয় না। দুম করে হ্যাঁ বা না বলা প্রায় অসম্ভব। আসলে কোন সিদ্ধান্ত আপনার পক্ষে ঠিক, তা নির্ভর করছে আপনি কেমন মানুষ তার উপরেও।

যদি আপনি ঝুঁকি নিতে স্বচ্ছন্দ হন, তা হলে হাতের ইউনিট আরও কিছু দিন ধরে রাখলে ক্ষতি নেই। কারণ, বাজারের যা মতিগতি, তাতে সংস্কারের গন্ধে তা কিছু দিন চাঙ্গা থাকারই সম্ভাবনা। সে ক্ষেত্রে বাড়তি টাকা হেঁটে হেঁটে চলেও আসবে পকেটে।

আরও একটু ঝুঁকি নিয়ে দু’পয়সা বেশি পেতে চান ভাল কথা। কিন্তু তা বলে অনন্তকাল ইউনিট ধরে রাখবেন না। কে বলতে পারে, হঠাৎ কোনও কারণে কালকেই তলিয়ে যাবে না শেয়ার বাজার?
শুধু তা-ই নয়। বাজার এক টানে বেশ কিছুটা উঠলেই হিড়িক পড়ে মুনাফা ঘরে তোলার। ফলে সূচক কিছুটা নামে। সাধারণ ভাবে যাকে সংশোধন (কারেকশন) বলি আমরা। সুতরাং অপেক্ষাও করুন হিসেব কষে। অতি লোভে লগ্নিভ্রষ্ট হয়ে লাভ কী?


• এত রকম ঝড়-ঝাপ্টা সত্ত্বেও গত ছ’মাসে শেয়ার বাজারের হাল কিন্তু মন্দ নয়
• প্রায় সব ধরনের ইক্যুইটি ফান্ডের ন্যাভ চড়তে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই
• অনেক দিন ধরে হাতে থাকা ইউনিট বিক্রির এটা বেশ ভাল সময়
• বাজার আরও ওঠার আশায় থাকলে, বইতে হবে বাড়তি ঝুঁকিও
• ফান্ড বাছুন ভেবে-চিন্তে। নতুন বাজারে আবার পুরনো নিয়ম খাটে না কি?

লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ডিরেক্টর


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.