|
|
|
|
|
|
কম ঝুঁকির লগ্নি |
|
ভাবুন ঋণপত্রের কথা
শেয়ার নিয়ে যত আলোচনা হয়, বন্ড নিয়ে তার সিকি ভাগও নয়। অথচ ঝুঁকির আগুন থেকে হাত বাঁচিয়ে ভাল রিটার্নের সুযোগ রয়েছে এখানে। জানালেন অমিতাভ গুহ সরকার |
|
বন্ড হল এক ধরনের ঋণপত্র। তা সরকার, সরকারি সংস্থা বা বেসরকারি সংস্থা যে কারওরই ইস্যু করা হতে পারে। ব্যাঙ্ক, ডাকঘরের পাশাপাশি টাকা রাখা যেতে পারে এখানেও। কোনও সংস্থা প্রয়োজনীয় অর্থের অংশ সংগ্রহ করতে পারে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে। মানে, আপনি যখন বন্ড কেনেন, তখন লগ্নিকৃত অর্থ ওই সংস্থাকে ঋণ হিসেবে দেন।
বন্ডের নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। সাধারণত ঘোষিত হারে সুদ দেওয়া হয় ৬ মাস কিংবা এক বছর অন্তর। করমুক্ত বন্ড ছাড়া অন্য বন্ডের সুদ করযোগ্য। কোনও কোনও বন্ডকে আবার নথিবদ্ধ করা হয় শেয়ার বাজারেও। এতে মেয়াদ শেষের আগে কেনাবেচায় সুবিধা হয়।
সুরক্ষার হাল-হদিস
সরকারি বন্ড স্বাভাবিক ভাবেই বেশি সুরক্ষিত। লগ্নিকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়ও। করেরও সুবিধা আছে কোনও কোনওটিতে। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার বন্ডের আবার ভাল চাহিদা তার সুনাম এবং উঁচু সুদের কারণে। শেয়ারের মতো অত দ্রুত না-হলেও, বাজার অনুযায়ী ওঠা-পড়া করে বন্ডের দামও। সুতরাং সুদ ছাড়াও মূলধনী লাভের সুযোগ থাকে বাজারে নথিবদ্ধ বন্ডে।
ব্যাঙ্কের বিপরীত
বন্ডের বাজার দর সাধারণত ব্যাঙ্ক সুদের বিপরীতমুখী। ব্যাঙ্ক-জমায় সুদ কমলে, বন্ডের দর বাড়ে। ব্যাঙ্কে সুদ বাড়লে কমে বন্ডের দাম।
সুদ কিন্তু ফেস ভ্যালু-তে
বন্ডের দর যা-ই হোক, সুদ দেওয়া হয় ফেস ভ্যালুর উপর। যেমন, ৯% সুদযুক্ত ১,০০০ টাকা দামের বন্ড যদি আপনি ১১০০ টাকাতেও কেনেন, তা হলেও বছরে সুদ কিন্তু সেই ৯০ টাকা। মেয়াদ শেষ পর্যন্ত বন্ড ধরে রাখলেও ফেরত পাবেন ১০০০ টাকা। ১১০০ টাকা নয়।
ঝুঁকি কম, কিন্তু শূন্য নয়
বন্ডের দর যেমন বাড়তে পারে, তেমনই কমারও সম্ভাবনা রয়েছে। তাই একেবারে ঝুঁকি নেই, তা বলা যাবে না। যাঁরা সরাসরি বন্ডে লগ্নি করতে আগ্রহী নন, মিউচুয়াল ফান্ডের বন্ড ফান্ড নিয়ে ভাবতে পারেন তাঁরা।
জনপ্রিয় কোনগুলি?
• করমুক্ত বন্ড : উঁচু হারে করদাতাদের কাছে জনপ্রিয়। গত বছর মোট ৩০ হাজার কোটি টাকার এই বন্ড ইস্যু করেছে পাওয়ার ফিনান্স কর্প, ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি, রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্প, হাডকো এবং রেলওয়ে ফিনান্স কর্প। ১০ ও ১৫ বছর মেয়াদি এই বন্ডে করমুক্ত সুদ যথাক্রমে ৮.২ ও ৮.৩%।
গত বাজেটেও মোট ৬০ হাজার কোটি টাকার করমুক্ত বন্ড ইস্যুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর নাগাদ শুরু হতে পারে এর পাবলিক ইস্যু।
• মূলধনী বন্ড : অন্য নাম সেকশন ৫৪-ইসি বন্ড। মূলধনী সম্পদ (বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট ইত্যাদি) হস্তান্তরে লাভের টাকা ৬ মাসের মধ্যে এখানে লগ্নি করলে মূলধনী লাভকর (ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স) থেকে রেহাই মেলে। লক-ইন মেয়াদ ৩ বছর। বর্তমানে সুদ ৬%, যা করযোগ্য। উৎসে কর কাটা হয় না। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি ও রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন কর্প এই বন্ড ইস্যু করে।
• বেসরকারি সংস্থার বন্ড : ঝুঁকি আছে। তাই সুদও সরকারি সংস্থার বন্ডের তুলনায় বেশি। সব বন্ড বাজারে নথিবদ্ধ নয়। বন্ড নথিবদ্ধ না-হলে, ঝুঁকি আরও বেশি।
• এসবিআই বন্ড : স্টেট ব্যাঙ্কের ১০,০০০ টাকার ১০ ও ১৫ বছর মেয়াদি বন্ডে সুদ যথাক্রমে ৯ ও ৯.১৫%।
• কনভার্টিবল বন্ড/ডিবেঞ্চার : এই বন্ড/ডিবেঞ্চার ইক্যুইটিতে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে রূপান্তরযোগ্য।
কেন লগ্নি?
• সরকারি বন্ডে উঁচু দরের সুরক্ষা
• আকর্ষণীয় সুদ
• কোনও কোনও ক্ষেত্রে করছাড়ের সুবিধা
• বাড়তে পারে নথিবদ্ধ বন্ডের দর
• ফেস ভ্যালুর তুলনায় কম দামে (ডিসকাউন্ট) কেনার সুযোগ। কিনতে পারলে, প্রকৃত আয় ছাপিয়ে যাবে ঘোষিত সুদকেও কিনবেন কী দেখে?
• সংস্থার সুনাম, নির্ভরযোগ্যতা ও অতীত সাফল্য
• বন্ডের ক্রেডিট রেটিং। ‘এএএ’ হলে ভাল। এএ+ হলেও চলতে পারে
• সুদের হার বাজারের তুলনায় বেশি কি না
• মেয়াদ কত? আগে ভাঙানোর সুবিধা কেমন
• করের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা মিলবে কি?
• বন্ড জামিনযুক্ত তো?
• আগে বন্ড বা ডিবেঞ্চার ইস্যু করে থাকলে, সময়ে টাকা মেটানোর নজির কেমন
• সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, কোম্পানি বিষয়ক দফতরের নিয়ম-কানুন বাজারে বন্ড ছাড়া সংস্থাটি মানছে তো? |
লেখক ম্যাকলিওড রাসেল ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি |
|
|
|
|
|