কমোডিটি ট্রেডিং লাভের পণ্য
ণ্যেও প্রায় শেয়ারের মতো করেই লগ্নি করতে পারেন আপনি। এ ভাবে পণ্যে টাকা লাগানোর ঐতিহ্যও বেশ পুরনো। তবে স্টক এক্সচেঞ্জের ধাঁচে তৈরি তার সংগঠিত বিনিয়োগের বাজার তুলনায় নতুন। সোনা থেকে শুরু করে আলু প্রায় সব ধরনের পণ্যই কেনা-বেচা হয় এই বাজারে। তবে বাড়ির হেঁশেলের জন্য নয়। পয়সা ঢেলে মুনাফা তুলতেই তৈরি হয়েছে কমোডিটি ট্রেডিং-এর এই বাজার।

এই বাজারে যেমন মুনাফা হতে পারে, তেমনই লোকসানের সম্ভাবনাও কিন্তু প্রচুর। তাই সাধারণ লগ্নিকারীদের জন্য এটি অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই শুধু রাতারাতি বড়লোক হওয়ার আশায় এই বাজারে পা না-রাখাই ভাল। কম সময়ে নিশ্চিত ভাবে বেশি আয় করা যাবে এই ধারণায় পড়ে এখানে লগ্নি না-করাই ভাল। বরং দীর্ঘ সময় ধরে কম কম করে বিনিয়োগ করতে পারলে, সাফল্যের সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি।


• শেয়ার বাজারের মতো এখানকার লেনদেনকেও ট্রেডিং বলি আমরা। পুরোটাই হয় বৈদ্যুতিন মাধ্যমে। কেনা-বেচা চলে এমসিএক্স, এনসিডিইএক্স-এর মতো এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে।
• পছন্দের পণ্য কিনতে ইন্টারনেটে বরাত দেওয়ার সময়ে নির্দিষ্ট চুক্তিপত্র তৈরি করা হয়। তাতে পণ্যের ওজন, মান, লগ্নি শেষের তারিখ ইত্যাদির বিবরণ দেওয়া থাকে। একেই বলে ‘ফিউচার কনট্রাক্ট’ বা আগাম চুক্তি।
• আগামী দিনে দাম বাড়বে ধরে নিয়ে চুক্তিপত্রটি কিনে রাখতে পারেন। কিংবা দাম কমার ঝুঁকি এড়াতে সেটি বিক্রিও করে দিতে পারেন।

শেয়ার বা বন্ডের মতো এখানে নিজের হাতে থাকা পণ্য তখনকার দামে কেনা-বেচা হয় না। বরং ভবিষ্যতের দাম আন্দাজ করে, তার ভিত্তিতে সেই পণ্য লেনদেন হয়।
সাধারণত এই সব ক্ষেত্রে লাভ-লোকসানের হিসেব টাকায় করা হয়। কিন্তু সোনা বা রুপোর মতো কিছু ক্ষেত্রে পণ্য কিনে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় লগ্নিকারীকে।

বাজারের গতি কোন দিকে যাবে, তা বোঝানো হয় এই দুই শব্দ দিয়ে। লগ্নিকারী যদি পণ্য কেনেন (বাই), তা হলে ধরে নেওয়া হয় তিনি ভাবছেন দাম বাড়বে। আর সেল বা বিক্রি ঠিক উল্টো ধারণাকে নির্দেশ করে।

একেবারে প্রথমে নির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে চুক্তিপত্র কেনার সময়েই পণ্যের দামের একটি অংশ দিতে হয়। একে বলে মার্জিন মানি। সাধারণত এই পরিমাণ ৫ থেকে ১০ শতাংশ।


• মেয়াদ শেষে নির্দিষ্ট দিনে পুরো টাকা মিটিয়ে এক্সচেঞ্জ থেকে সত্যিকারের পণ্য নিয়ে যেতে পারেন। এমসিএক্সের ক্ষেত্রে যেমন আমদাবাদ-সহ কয়েকটি শহর থেকে সোনা দেওয়া হয়
• চুক্তি শেষের দিন লগ্নিকারী সিদ্ধান্ত নিতে না-পারলে, এক্সচেঞ্জ থেকে তাঁকে পণ্য কিনতে বলা হতে পারে। তখন যদি তাঁর ক্ষতি হয়, তা হলে পুষিয়ে দিতে হবে সেই অর্থ। আর লাভ হলে তাঁর অ্যাকাউন্টেই সেই টাকা জমা পড়ে যায়
• মেয়াদ শেষে বা শেষ হওয়ার আগে পণ্যের দাম বাড়লে, তা বিক্রি করে লাভের অঙ্ক বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন
• লেনদেন চালিয়ে যেতে চাইলে মেয়াদ শেষ হওয়ার দিন বা তার আগে যত বার খুশি পণ্য কিনতে বা বেচতে পারেন। লাভ হলে শুধুমাত্র সেই টাকাই পাবেন লগ্নিকারী
• দাম কমবে মনে করলে চুক্তিপত্র বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। পরে দাম কমলে তখন আবার তা কেনার সুযোগ থাকে

প্রতিটি পণ্যে লগ্নির জন্য যেমন ন্যূনতম অর্থ নির্দিষ্ট করা থাকে। তেমনই, নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য কত টাকার তফাতে লগ্নি করতে পারবেন তাও বলা থাকে। ওই সংখ্যাটি সেই নির্দিষ্ট পণ্যের ‘টিক সাইজ’।
মনে করুন সোনার ‘টিক সাইজ’ ১ টাকা। আপনি হয় ৩০,০০০ টাকায় সোনা কিনবেন বা বেচবেন, অথবা ৩০,০০১ টাকায়। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে আপনার লগ্নির তফাত এক টাকা। কিন্তু মনে রাখবেন কখনওই তা ৩০,০০০.৫০ হবে না। অর্থাৎ ভগ্নাংশ হবে না। কিন্তু অন্য পণ্যের ক্ষেত্রে আবার ‘টিক সাইজ’ ৫০ পয়সাও হতে পারে। মূলত লাভ-ক্ষতি হিসেব করার সময়ে কাজে আসে এই ‘টিক সাইজ’।

এক্সচেঞ্জ চায় ক্রেতা বা বিক্রেতা প্রতিদিন বাজারের গতির সঙ্গে পা মিলিয়ে চলবেন। সে ক্ষেত্রে কেউ এক জন পণ্য বিক্রি করলে অন্য এক জন কিনবেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এক জনের লাভ, অন্য জনের ক্ষতির সমান।
প্রতিদিন লেনদেন শেষে পণ্যের যে গড় দাম দাঁড়ায়, সেই অনুসারে এক্সচেঞ্জে ক্রেতা-বিক্রেতার লাভ-ক্ষতির হিসাব হয়। এই পদ্ধতিকেই বলে ‘মার্ক টু মার্কেট’।

• দেশে প্রতি দিন কমোডিটি ট্রেডিং হয় প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার
• ৫টি জাতীয় এবং ২০টি আঞ্চলিক এক্সচেঞ্জ রয়েছে
• লেনদেন চলে প্রায় দু’হাজার শহরের ৫ লক্ষ টার্মিনালে
• এমসিএক্স-ই দেশের বৃহত্তম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ। বাজার দখল প্রায় ৮৫%
• ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, এমসিএক্স সোনা-রুপোর বৃহত্তম এক্সচেঞ্জ। প্রাকৃতিক গ্যাস ও অশোধিত তেলে এর স্থান যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়
• এই বাজার ফরওয়ার্ড মার্কেটস কমিশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত

লেখক মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ (এমসিএক্স)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.