|
|
|
|
|
|
পুজোয় বাড়তি খরচ |
|
চাপ নেবেন না
তিন মাথার মোড়ে রোল রোজই খাই। আজ কিন্তু তিন তারা হোটেল।
পুজোর ক’দিন এমন বেমক্কা খরচ কেন করি আমরা? কী করলে পস্তাতে
হবে না এর জন্য? দেবপ্রিয় সেনগুপ্তকে জানিয়ে দিলেন জয়রঞ্জন রাম |
|
পুজোর সময়টা এমনিতেই একটু বেহিসেবি বাঁচার সময়। খরচের ক্ষেত্রে একটু সাবধানী মানুষও এ সময়ে কাছাখোলা হয়ে পড়েন। আসলে এই সময়টা একটা ‘রিলেটিভ অ্যাফ্লুয়েন্স’ দেখানোর দৌড়েরও সময়। অন্য সময় হই-হুল্লোড় করলে তা হয়ত একদিনেই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু পুজোর হুল্লোড় তো টানা চার দিনের। এই দৌড়ের ‘অ্যাড্রিনালিন’ আনন্দের শেষে গিয়ে গাঁটের উপর চাপ ফেলে যায়। তার উপর এ বার তো পুজো মাসের শেষে। তবে একটাই ভরসা পুজো শেষ হলেই আর মাত্র কয়েকটা দিন। তার পরেই মাস পয়লা। |
|
প্রতি বছরই তো একই চাপ। তবুও আমরা চাপটা নিই কেন? এর বেশ কয়েকটি কারণ আছে। প্রথমত, চারিদিকে সাজো সাজো রব। দেদার মজা, আনন্দ। সকলেই তাতে সামিল হতে চাই।
তখনই আসে খরচের প্রসঙ্গ। বাড়তি খরচ করে কেনাকাটা নিজেরই ভাল লাগে। একটা বেশ ফুরফুরে সচ্ছল সচ্ছল বোধ। সেই দৌড়ে পা মেলানোর চাপ।
যদি না-পারি, তা হলে মনটা যেন ছোট হয়ে যায়। দৌড়ে পিছিয়ে গেলাম মনে হয়। আসলে মানুষ তো সারাক্ষণই অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে। আর এটাই হল ওই ‘রিলেটিভ অ্যাফ্লুয়্যান্স মেকস আস ফিল গুড’-এর চাপ।
কিন্তু আমরা যদি মাথায় রাখতে পারি, আসল মজা বা আনন্দ খরচের উপর নির্ভর করে না। খরচ দিয়ে তা মাপাও যায় না। আমরা কী ভাবে এই ছুটির সময়টা কাটাচ্ছি, সকলের সঙ্গে মজাটা ভাগ করে নিচ্ছি, সেটাই আসল। বেশি খরচ করলেই বেশি মজা হবে, ভাল থাকব, এটা একেবারেই ঠিক নয়। যদি মনে রাখতে পারি মজাটা আসলে গাঁটের খরচের লড়াই নয় তা হলেই ‘রিলেটিভ অ্যাফ্লুয়েন্স’-এর এই চাপ অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা যায়। এতে কিন্তু সন্তানদেরও সামিল করতে হবে। তাদের স্পষ্ট করে বলে দিতে হবে, কোনটা অপ্রয়োজনীয়। না হলে তাদের আবদার মেটাতে গিয়েও কিন্তু বাড়তি খরচের বোঝা চাপে আপনার ঘাড়ে। আর তাদের যদি এটা বুঝিয়ে দিতে পারেন এখনই, তা হলে তাদেরও ভবিষ্যতের ঝক্কি থেকে বাঁচার রাস্তা তৈরি করে দেবেন।
নিজেকে বলুন, “কেনাকাটার সময়ে বেসামাল খরচ করব না।” সাধ্যের সঙ্গে সাধ মিলিয়ে নিন। যাঁর প্রচুর কেনাকাটার শখ, শপিং-এর সময়ে তাঁর একজন বিচক্ষণ সঙ্গী থাকলে ভাল। হুটহাট করে অপ্রয়োজনীয় জিনিসে হাত বাড়ালে যিনি নিরস্তও করতে পারেন। নিজে কিনতে গেলে অনেক সময়েই মনে হয়, সবই চাই। এটা এক ধরনের ‘ইপমপালসিভ বায়িং’।
এক সঙ্গে বা এক দিনে পুরোটা কেনাকাটাও না করাই ভাল। এটা অনেকটা প্রচুর খিদে নিয়ে রেস্তোরাঁয় গিয়ে অর্ডার দেওয়ার সমস্যার মতো। এতে সব সময়েই বেশি খাওয়া হয়ে যায়। একই ভাবে তাড়াহুড়োর চাপে বাড়তি খরচ হতে পারে। ধাপে ধাপে হলে চাপ কম পড়ে। যে ভাবে একটু একটু করে সারাদিন খেলে প্রবল খিদের তাগিদের সমস্যাটা থাকে না।
খেয়াল রাখতে হবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। আগেও বেশিরভাগ কেনাকাটাই হত নগদে। ফলে ১০০ টাকার খরচ ১০০০ হাজার টাকা বা দশ হাজার টাকায় পৌঁছলে পকেট হালকা হওয়ার চাপ সহজেই মালুম হত। এখন কার্ডের যুগ। পেপার মানি। কার্ড সোয়াইপ করার পরে ছোট্ট রসিদে তেমনই একটা ছোট্ট স্বাক্ষর। ফলে গায়ে ছ্যাঁকাটা সে ভাবে সহজে আঁচ করা যায় না।
আসলে পুজোর খরচও একটা পরীক্ষা। বিলাসিতা ও আনন্দের মধ্যেও সংযমের পরীক্ষা। ক্ষণিকের আনন্দ মেটাতে দেদার খরচ ভবিষ্যৎ সুরক্ষার প্রয়োজনের রসদে যেন টান না দেয়, খেয়াল রাখতে হবে। আবারও সেই পুরনো কথাটাই বলি, সামাজিক প্রতিষ্ঠা কখনও খরচ করার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে না। |
লেখক কনসালট্যান্ট সাইকিয়াট্রিস্ট |
|
|
|
|
|