শো-কজ বর্ধমান জেলের সুপারকে
রিকশায় হাসপাতাল গিয়েছিল রেণু-খুনের পাণ্ডা
ঙ্গল সাহানি কোথায়, তা নিয়ে পুলিশ যেমন অন্ধকারে, তেমন রেণু সরকার হত্যাকাণ্ডের এই মূল অভিযুক্ত পালাল কী ভাবে, তা নিয়েও রহস্য ক্রমশ দানা বাঁধছে।
সোমবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সির সামনে থেকে ওই বিচারাধীন বন্দি কারারক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায়। আর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের আউটডোরের পাশে নর্দমায় মেলে মঙ্গলের হাতকড়াটি। সেটা আদৌ ‘ভাঙা’ হয়নি বলে জানিয়েছে বর্ধমান জেলা পুলিশ। তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, হাতকড়াটি আলগা করে মঙ্গলের হাতে লাগানো ছিল।
অর্থাৎ মঙ্গলের অন্তর্ধানের পিছনে ‘অন্তর্ঘাতের’ সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। উপরন্তু বন্দিকে বাইরে আনার সময়ে কারারক্ষীদের সঙ্গে সাব-জেলার বা ডেপুটি জেলারের মতো এক অফিসারের থাকা বাধ্যতামূলক করে বছর তিনেক আগে কারা দফতরের জারি করা নির্দেশিকাও এখানে মানা হয়নি বলে কারা-কর্তারা জানতে পেরেছেন।
দফতরের খবর: সোমবার রাতে মঙ্গলকে বর্ধমান সেন্ট্রাল জেল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে সঙ্গে ছিলেন শুধু দু’জন কারারক্ষী। শুধু তা-ই নয়, জেলের অ্যাম্বুল্যান্স খারাপ থাকায় মঙ্গলকে নিয়ে যাওয়া হয় রিকশায় চাপিয়ে। যার বিরুদ্ধে খুন-সহ ন’টা মামলা, তার ক্ষেত্রে এমন ঝুঁকি জেল-কর্তৃপক্ষ নিলেন কোন সাহসে, তা কারা-কর্তাদের মাথায় ঢুকছে না।
যেখানে ধোঁয়াশা
• হাতকড়া আলগা ছিল।
• হাসপাতালে ডাক্তার নয়, পাঠান জেলের ফার্মাসিস্ট।
• জেল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে কিছু জানাননি।
• গাড়ির বদলে রিকশায় হাসপাতালে।
• সঙ্গে সাব-জেলার বা ডেপুটি জেলার ছিলেন না।
মঙ্গল-কাণ্ডের জেরে বুধবার বর্ধমান সেন্ট্রাল জেলের সুপার মেইয়ামোদো গুঁই-কে শো-কজ করেছেন আইজি (কারা) রণবীর কুমার। আইজি-র কথায়, “মঙ্গল সাহানির মতো বন্দি পালাল কী করে, সুপারকেই তার জবাবদিহি করতে হবে। বন্দিকে জেল থেকে বার করার সময়ে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলার কথা। তা কেন হল না, পরিস্থিতি ঠিক কী রকম ছিল এ সব ওঁকেই জানাতে হবে।” জেল সুপার আবার শো-কজ করেছেন ডেপুটি জেলার মৃণালকান্তি মাহাতো এবং জেলের ফার্মাসিস্ট অশোক পালকে। কারা-সূত্রের খবর: ওই ফার্মাসিস্টই মঙ্গলকে অবিলম্বে জেলের বাইরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করেছিলেন, নিয়ম অনুযায়ী যা করার কথা জেল-হাসপাতালের ডাক্তারের। কিন্তু ওই সময়ে জেলের চিকিৎসক দেবাশিস সরকার অনুপস্থিত ছিলেন।
বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা এ দিন জানান, জেলা পুলিশের পাঠানো রিপোর্টে মঙ্গলের সঙ্গে থাকা দুই কারারক্ষী দেবপ্রসাদ গড়াই ও প্রশান্তকুমার পালের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল। ওঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। যদিও বর্ধমানের কারারক্ষীদের একাংশের দাবি, দু’জনকে ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়েছে। মঙ্গল-কাণ্ডের নেপথ্যে জেলের কিছু অফিসারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। রেণুদেবীর মেয়ে অদিতি সরকারেরও প্রশ্ন, “মঙ্গল যে দাগি অপরাধী, তা জেনেও জেল-কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেননি কেন?”
রেণু-খুনের তদন্তে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন যিনি, সেই ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) তথা স্পেশ্যাল আইজি বাসব তালুকদার এ দিন বোলপুরে এক বৈঠকে যোগ দিতে এসে বলেন, “বহু কষ্টে মঙ্গলকে ধরেছিলাম।” বীরভূমের পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “মঙ্গলের ছবি থানায় থানায় পাঠানো হয়েছে। ঝাড়খণ্ড সীমানাতেও তল্লাশি চলছে।” বীরভূম পুলিশের কর্তাদের মতে, রেণু-হত্যায় মঙ্গলের শাস্তি কার্যত নিশ্চিত ছিল।
আর তা আঁচ করেই মঙ্গল পালানোর চেষ্টায় ছিল বলে পুলিশ-কর্তাদের দাবি। পুলিশ-সূত্রের খবর: গত ১৭ জুন সে সিউড়ি সদর হাসপাতালের পুলিশ সেলের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। যে কারণে ৫ অক্টোবর প্রথম যখন সে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি হয়, সে দিন তাকে তড়িঘড়ি হাসপাতালের পুলিশ-সেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সে বার তেমন কিছু হয়নি বুঝে ৬ অক্টোবরই ওকে ছুটি দেয় হাসপাতাল।” সোমবার রাত ৮টা নাগাদ মঙ্গল যখন পেটের যন্ত্রণার কথা বলে, তখন ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দুই কারারক্ষীকে নির্দেশ দেন ডেপুটি জেলার। তখন আরও প্রহরা থাকা উচিত ছিল বলে মনে করেন ওই পুলিশকর্তা। ডিআইজি বাসববাবুর কথায়, “সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কারা-কর্তৃপক্ষ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।” প্রশ্ন উঠেছে, প্রথম বার মঙ্গলকে এক দিন রেখে হাসপাতাল ছুটি দিলেও পরের দিনই কেন তাকে ফের হাসপাতালে ‘রেফার’ করা হল?
সব মিলিয়ে গোটা ঘটনায় জেল-কর্মীদের একাংশের ‘যোগসাজশ’ নিয়ে পুলিশ ও কারা-কর্তাদের মনে সন্দেহ দৃঢ় হচ্ছে। আইজি (কারা) বলেন, “প্রাথমিক ভাবে কিছু গাফিলতি উঠে আসছে। জেল-হাসপাতালের ডাক্তার তখন উপস্থিত ছিলেন না কেন, সেটাও প্রশ্ন। আগে সুপারের জবাব পাই। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

(সহ প্রতিবেদন: মহেন্দ্র জেনা)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.