বিধি ভেঙে হোর্ডিংয়ের তদন্তে নামল পুরসভা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
পুরসভা বা পূর্ত দফতর কারও অনুমতি না-নিয়ে অবৈধ ভাবে ফুটপাত খুঁড়ে লোহার স্তম্ভ বসিয়ে হোর্ডিং লাগানোর অভিযোগ উঠেছিল একটি সংস্থার বিরুদ্ধে। ওই সংস্থার বিরুদ্ধেই এ বার বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং সংক্রান্ত চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ ওঠায় তদন্তে নেমেছে শিলিগুড়ি পুরসভা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের ২২ হাজার বাতিস্তম্ভে ‘আলো ছাড়া’ বিজ্ঞাপন দেওয়ার শর্তে ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে এর দায়িত্ব পেয়েছে সংস্থাটি। চুক্তি না মেনে তারা বাতিস্তম্ভগুলিতে আলোকিত বিজ্ঞাপন লাগাচ্ছে। পুরসভার দাবি, বিজ্ঞাপনে আলো ব্যবহার করলে পুরসভাকে বেশি টাকা দিতে হবে। আলোকিত বিজ্ঞাপন ব্যবহার করেও বরাত পাওয়া সংস্থা অর্ধেক টাকা দিচ্ছে।
ক’দিন আগেই পুরসভা, পূর্ত দফতরের অনুমতি ছাড়াই এয়ারভিউ মোড়ে ফুটপাত দখল করে লোহার স্তম্ভ বসিয়ে হোর্ডিং টাঙানোর অভিযোগ ওঠে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে। বেআইনি কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করেন খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব, বিধায়ক তথা এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। তা সত্ত্বেও হোর্ডিং সরানোয় গড়িমসি চলছিল বলে অভিযোগ ওঠে। শেষ পর্যন্ত স্তম্ভও হোর্ডিং খুলে নেয় সংস্থাটি। এ বার পুরসভা চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে খোঁজখবরে নামলেও সংস্থার কর্ণধার প্রদীপ্ত সরকার বলেছেন, “আমার কিছু বলার নেই। পুরসভা থেকেই সব জানতে হবে।”
পুরসভার হোর্ডিং বিষয়ক দায়িত্বে রয়েছেন মেয়র পারিষদ দেবশঙ্কর সাহা। তিনি বলেন, “বাতিস্তম্ভে ‘আলো ছাড়া’ বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্যই টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। সেই মতোই বিজ্ঞাপন দেওয়ার চুক্তি হয়েছে। দায়িত্বে থাকা ওই সংস্থার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া হোর্ডিং লাগাতে ফুটপাতে স্তম্ভ বসানোর অভিযোগও উঠেছিল। একই সংস্থা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় আমরাও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছি।”
পাশাপাশি, বিনা অনুমতিতে ফুটপাত খুঁড়ে স্তম্ভ বসিয়ে জনমতের চাপে তুলে নিলেও প্রদীপ্তবাবুর সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন পরিবেশপ্রেমীদের অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, “শহরে পুলিশ-প্রশাসন, পুরসভাকে তোয়াক্কা না-করে এভাবে ফুটপাত খুঁড়ে স্তম্ভ, হোর্ডিং বসানোর পরেও যদি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া না-হয়, তা হলে আগামী দিনে ওই প্রবণতা বাড়তে পারে।” শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেন, “পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। নিশ্চয়ই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” শিলিগুড়ির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ও জি পাল জানিয়েছেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার সুভাষ দাসও বিনা অনুমতিতে ফুটপাত খুঁড়ে স্তম্ভ ও হোর্ডিং বসানোর বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “অনুমতি ছাড়া ফুটপাত খুঁড়ে ফেলাটা একেবারেই বেআইনি। আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।”
এই অবস্থায় নর্থ বেঙ্গল তৃণমূল অ্যাডভার্টাইজিং ফোরাম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ফোরামের তরফে আজ, বুধবার এ ব্যাপারে বৈঠক ডাকা হয়েছে। ফোরামের সভাপতি রঞ্জন সরকার বলেন, “একেই অবৈধ ভাবে লোহার স্তম্ভ বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ। তার উপর মুখ্যমন্ত্রী বা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর ছবি সম্বলিত হোর্ডিং লাগিয়ে অত্যন্ত অন্যায় কাজ করা হয়েছে। অভিযুক্ত সংস্থাকে আমরা এ ব্যাপারে সতর্ক করব। পুরসভার চুক্তি ভঙ্গের বিষয়টি নিয়েও খোঁজ নিচ্ছি।” |