বন্ধ ঢেকলাপাড়ায় দুই মন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঢেকলাপাড়া (জলপাইগুড়ি) |
কেউ বললেন ঘরে খাবার না-থাকার কথা। কেউ জানালেন চিকিৎসার বন্দোবস্ত প্রায় নেই। কেই আবার নেতা-কর্তাদের দূষলেন। প্রায় ১০ বছর ধরে বন্ধ ঢেকলাপাড়া চা বাগানে যাওয়া দুই মন্ত্রীর সামনেই এমন নানা অভিযোগ উগড়ে দিলেন চা শ্রমিকরা। মঙ্গলবার ওই চা বাগানে যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। দুজনে চাল বিলি কর্মসূচির সূচনা করেন। ওই সময়ে বাগানের একটি শ্রমিক কলোনিতে এক জনের মৃত্যু হয়েছে খবর পেয়ে মন্ত্রীরা সেখানে যান। বাসিন্দারা মন্ত্রীদের কাছে গিয়ে নানা অভিযোগ করেন। তাঁদের পরিবারের জয়করণ সুরি (৫৫) নামে এক জনের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। জয়করণবাবুর ছেলে গণেশ বাবার মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, “বাগান বন্ধ থাকার পর থেকে আমরা চরম অভাবে রয়েছি। মাস খানেক আগে বাবাকে বীরপাড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখান থেকে চিকিৎসকরা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।” তাঁর স্ত্রী বিপতি দেবী কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ছেলে পাথর ভেঙে দিনে ৩৫ টাকা রোজগার করে। মাসে সরকারি অনুদান হিসাবে ১৫০০ টাকা মেলে। তা দিয়ে চাল কিনব না চিকিৎসা করাব? সরকার যে দু’টাকা কেজি চাল দেয় তা কিনতেও সমস্যা হয়।” |
বন্ধ ঢেকলাপাড়া চা বাগানে দুই মন্ত্রী। ছবি: রাজকুমার মোদক। |
দুই মন্ত্রী দুর্দশার বিষয়টি শুনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। তবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “চা বাগানে অনাহার নেই। তা ছাড়া ওই শ্রমিক বিনা চিকিৎসায় মারা যাননি।” এ দিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বাগান খোলানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, “আইনি জটিলতার কারণে বাগান চালু করা যাচ্ছে না। জটিলতা কাটিয়ে বাগান চালু করার জন্য চেষ্টা হচ্ছে।” তবে পুজোর আগে পরিবার পিছু পাঁচ কেজি চাল বিলির ঘটনা নিয়ে বাগানের শ্রমিকদের বড় অংশ অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁদের অভিযোগ, মাড়-ভাত আর সঙ্গে লবণ খেয়ে অনেকের দিন কাটছে। সপ্তাহে দুটাকা কেজি দরের অন্ত্যোদয়ের ২ কেজি চাল সেদ্ধ করে আর কত দিন চলবে? বাগানের শ্রমিক সুজা বেদিয়া বলেন, “পাথর না ভাঙলে হাড়ি চড়ে না। আমরা অনুদানে বাঁচতে চাইছি না। আমরা চাই বাগানটি খুলুক।” তবে খুব শীঘ্রই ঢেকলাপাড়ায় মেডিক্যাল টিম পাঠানো ও শ্রমিকদের পরিবারের লোকজনকে নতুন পোশাক দেবার প্রতিশ্রুতি দেন দুই মন্ত্রী। |