দায় ভোট, কংগ্রেসই চায় ভর্তুকির স্বস্তি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অর্থনীতি যা-ই বলুক, রাজনীতির কাছে শেষ পর্যন্ত ভোট বড় মাথাব্যথা! মনমোহন সিংহের সংস্কারের রথে দলের জনসমর্থন চাপা পড়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় হাইকম্যান্ডের কাছে ভর্তুকি বাড়ানোর আর্জি জানাল প্রদেশ কংগ্রেস। সদ্যই জঙ্গিপুর লোকসভা উপনির্বাচনে প্রায় হারতে হারতে জিতে তাদের মনে হয়েছে, সার, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি কমিয়ে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আম জনতা ভাল ভাবে নিচ্ছে না। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। সার, ডিজেল বা গ্যাস এমনই মহার্ঘ থাকলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা বামেরা ফায়দা তুলে নিতে পারে। তাই মানুষকে কিছুটা ‘স্বস্তি’ দেওয়ার জন্য শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন প্রদেশ নেতৃত্ব।
প্রাক্তন জোট শরিকের এমন আর্জির কথা জেনে তৃণমূল নেত্রী খুশি হতে পারেন নিশ্চয়ই! মনে করতে পারেন, শেষমেশ তাঁর কথাই ঠেকে শিখল কংগ্রেস! প্রদেশ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা, “সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা এখনও বলছি। কিন্তু প্রচার চালাতে চালাতেই আমাদের মনে হয়েছে, সার এবং গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া ভাল হয়নি। পঞ্চায়েত ভোটও সামনে। যেখানে মূলত গরিব মানুষ ভোট দেবেন। তাই মানুষকে একটু স্বস্তি দেওয়ার কথা বলে একটা প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে।” প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের ধারণা, গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে দশেরার পরে দিল্লির রামলীলা ময়দানে দাঁড়িয়ে মনমোহন-সনিয়া গাঁধীরা ভর্তুকিপ্রাপ্ত সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর মতো কিছু ঘোষণা করতে পারেন।
এআইসিসি-র তরফে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাকিল আহমেদের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বর্ধিত বৈঠকে নেতাদের একাংশ স্পষ্টই বলেন, ওই মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ অসন্তুষ্ট। বিষয়টি পুনর্বিবেচিত না-হলে পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের হাতে বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের পরে প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “সার, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম কমানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে। শাকিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে তা জানাবেন। কেন্দ্র দাম পুনর্বিবেচনা করলে খুশি হব।”
কংগ্রেস সূত্রের খবর, জঙ্গিপুরের উপনির্বাচনে মাত্র হাড়াই হাজার ভোটে জয়ের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এ দিনের বৈঠকে মুর্শিদাবাদের সাংসদ মান্নান হোসেনই প্রথম এই প্রসঙ্গ তুলে বলেন, সারের দামের প্রভাব ভোটে পড়েছে। গ্রামের ভোটারেরা কংগ্রেসের প্রতি বিমুখ হবেন বলেই তাঁর আশঙ্কা। রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারে ভর্তুকি ছাঁটাইয়ে শহুরে মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, সে কথা উল্লেখ করে মান্নানের সঙ্গে রায়গঞ্জের সাংসদ দীপা দাশমুন্সি প্রস্তাব দেন, মানুষের দুর্ভোগ কমাতে কেন্দ্রকে অনুরোধ করা হোক।
কেন্দ্রের দ্বারস্থ হওয়ার পাশাপাশি প্রকাশ্যে মানুষের কাছে এই দামবৃদ্ধির প্রেক্ষিত বোঝানোর জন্য দলের নেতাদের একই সুরে একই তথ্য দেওয়া জরুরি বলে মত দেন দীপা। দলের নেতা মানস ভুইঁয়ার প্রস্তাব, দাম বাড়লেও কেন্দ্র এখনও যে সার, রান্নার গ্যাস, কেরোসিন-সহ বিভিন্ন পণ্যে ভর্তুকি দিচ্ছে, তা-ও মানুষকে জানানো দরকার। শান্তিপুরের বিধায়ক অজয় দে বৈঠকে বলেন, কোন প্রকল্পে কেন্দ্র কত টাকা বরাদ্দ করছে, কত টাকা রাজ্য খরচ করতে পারছে না, এই তালিকা দিল্লি পাঠালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রচারে সুবিধা হবে। |