উঠোনে ত্রিপলের ছাউনির নীচে দুর্গাপ্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। তদারকি করছেন বাড়ির প্রবীণ কর্তা। দুর্গাপুজো আয়োজনের ধকল থাকলেও মুখে তাঁর স্বস্থির হাসি। এ তল্লাটে দুর্গাপুজো তো হয় না। তাই পারিবারিক পুজোর আয়োজন করে বাড়ির ছেলে-বৌ-নাতি-নাতনিদের সঙ্গে পড়শিদেরও আনন্দ দিকে পারায় খুশি হিড়বাঁধের দোমহানি গ্রামের ৭৫ ছোঁয়া বৃদ্ধ সুবল হেমব্রম।
এ বার তাঁদের পুজো ছ’য়ে পড়ছে। গ্রামে ২০টি পরিবারের বাস। কিন্তু এই আদিবাসী পরিবারে দুর্গা পুজোর প্রচলনের ইতিহাসটা একটু অন্য রকম। সুবলবাবুর দাবি, “বছর পাঁচেক আগে বাড়িতে পুজো করার জন্য দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশ পাই। শ্যালকের স্ত্রী সরস্বতী হাঁসদাও একই স্বপ্ন দেখেন। এরপরেই আমরা পুজো করার সিদ্ধান্ত নিই।” পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু মানুষ মূর্তিপুজোর বিরোধিতা করলেও সিদ্ধান্তে অটল থাকে হেমব্রম পরিবার। সুবলবাবুর বড়ছেলে সহদেব আধা সামরিক বাহিনীর প্রাক্তন জওয়ান, মেজছেলে গৌরচন্দ্র হাইস্কুলের শিক্ষক, ছোটছেলে রবিলোচন চাষবাসের কাজ করেন। বড় ও মেজ দুই ছেলেই বাড়ির বাইরে থাকেন। পুজোয় তাঁরা সপরিবারে বাড়ি আসায় পুজোর আনন্দ হেমব্রমবাড়িতে দ্বিগুন হয়ে গিয়েছে। সুবলবাবুর স্ত্রী আহ্লাদীদেবী বলেন, “সবাই বাড়ি আসায় বাড়িতে যেন চাঁদের হাট বসে যায়।”
এখানে দেবী এক কাঠামোয়। তৈরি করেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের এক শিল্পী। সম্পূর্ণ সাঁওতালি রীতিনীতি মেনেই পুজোর আনুষঙ্গিক কাজ হয়। সপ্তমীর সকালে পুকুর থেকে নবপত্রিকা সহযোগে ঘট আনা হয়। দেবীর ভোগ নিরামিষ। অষ্টমীতে সন্ধিপুজো হলেও কোনও বলি হয় না। পুজোর পৌরহিত্য করেন সুবলবাবুর শ্যালকের স্ত্রী সরস্বতীদেবী। আদিবাসীদের বিভিন্ন দেবদেবীর পুজোর পরে দুর্গাপুজো করা হয়। দুপুর গড়ালেই অষ্টমীর বিকেল থেকে দশমী পর্যন্ত ভুয়াং, করম, দাঁশায়-সহ নাচ-গানের আসরে ভরে ওঠে হেমব্রম বাড়ির উঠোন। |