কলেজের ছাত্রাবাস থেকে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র নিখোঁজের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়াল জগন্নাথ কিশোর কলেজে। ওই ছাত্রের নাম দুর্গাপদ দত্ত। বান্দোয়ানের ছিরুডি গ্রামে তাঁর বাড়ি। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি জানার পরে কলেজের অধ্যক্ষ শান্তনু চট্টোপাধ্যায় পুলিশের কাছে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এই ঘটনার জেরে কলেজে ছাত্র পরিষদ (সিপি) ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) কিছু সদস্যের মধ্যে বচসা বাধে। এক সময়ে টিএমসিপি-র সদস্য দুর্গাপদর নিখোঁজ হওয়ার পিছনে ওই ছাত্র সংগঠনেরই কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রটির বাবা অমরচন্দ্র দত্ত। পুলিশের কাছে এই মর্মে তিনি অভিযোগও করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্রটির খোঁজ করা হচ্ছে।
কলেজ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দুর্গাপদর সঙ্গে সম্প্রতি ছাত্রাবাসের টিএমসিপির কিছু সদস্যের মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি সংগঠনের কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। সিপির কলেজ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অভয় মাহাতোর অভিযোগ, “দুর্গাদাস প্রথমে টিএমসিপি করলেও ছাত্রাবাসের কিছু টিএমসিপি সদস্যের আচরণ নিয়ে আপত্তি করা নিয়ে তাঁর সঙ্গে ওদের মতান্তর হয়। তারা দুর্গাদাসকে হুমকি দেওয়ায় ভয়ে দুর্গাদাস ছাত্রাবাস ছেড়ে পালিয়েছেন।” এসএফআইয়ের জেলা সভাপতি গৌরব সিং বলেন, “টিএমসিপি ছেড়ে দুর্গাপদ দিন পনেরো আগে আমাদের সংগঠনে যোগ দেয়। টিএমসিপির কিছু ছেলে ওকে হুমকি দিয়েছিল বলে শুনেছি।” টিএমসিপির জেলা সভাপতি গৌতম রায় বলেন, “সিপি এবং এসএফআই ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে। দুর্গাপদ আগে আমাদের সংগঠনের সদস্য থাকলেও ওই দুই সংগঠনের সদস্যেরা ওকে ভুল বুঝিয়ে নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করছিল।” কলেজের ছাত্র সংসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক টিএমসিপির তানজিব মাজহার বলেনদুর্গাদাস সোমবার সন্ধ্যায় ছাত্রাবাসের ভিতরে বহিরাগতদের নিয়ে বৈঠক করে ছাত্রাবাসের নিয়ম ভেঙেছে। ওঁকে খোঁজা আমাদেরও দায়িত্ব।”
কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “দুর্গাপদ ছাত্রাবাস থেকে বের হওয়ার নির্দিষ্ট খাতায় সই করেই বেরিয়েছিল। তারপর থেকে তার খোঁজ নেই। তার বাবাও আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে এ দিনই কলেজের ‘ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন কমিটি’ ও ‘অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডের’ সদস্যদের নিয়ে বৈঠকও করা হয়।” ছাত্রাবাসের সুপার সুমন্ত মাইতি বলেন, “আমি সোমবার ছুটিতে ছিলাম। দুর্গাপদর খবর পেয়ে ছাত্রাবাসে ফিরে আসি।”
ছাত্রাবাসের এক ছাত্র দুবরাজ কুমার বলেন, “দুর্গাপদ এক সিপি নেতার বাড়িতে যাচ্ছেন বলে বের হওয়ার সময় জানিয়েছিলেন। কিন্তু অনেক রাত পর্যন্ত না ফেরায় বার বার ওর মোবাইলে ফোন করেও সাড়া পাইনি। পরে দেখি ফোনের স্যুইচ অফ।” সেই সিপি নেতা হরেরাম সিংহের দাবি, “ছাত্রাবাসের কয়েকজন ওকে হুমকি দিয়েছিল বলে দুর্গাপদ আমাকে জানিয়েছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি আমার বাড়িতেও আসেন। আমি তাঁকে বুঝিয়ে ছাত্রাবাসে পৌঁছে দিই।” দুর্গাদাসের বাবা বলেন, “ছেলেটার কী হল কিছুই বুঝতে পারছি না। অধ্যক্ষের কাছে ওঁকে খুঁজে আনার অনুরোধ জানিয়েছি।” |