রাজনীতির খেলায় হারাতে বসা
পুজোর ভার এখন ‘দুর্গা’দের কাঁধে

রাজনীতির বিভেদ ভেঙে দিয়েছিল পুজোর কমিটি। কিন্তু তাতে মাতৃ-আরাধনা বন্ধ থাকেনি। গ্রামের পুরুষেরা যখন আমরা-ওরায় ব্যস্ত, তখন পাথরপ্রতিমা ব্লকের অচিন্ত্যনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুর গ্রামে পুজোর হাল ধরতে এগিয়ে এসেছিলেন গ্রামের মহিলারা। চারিপাশ যখন আলোর রোশনাইয়ে ভেসে যাবে তখন তাঁদের গ্রাম আঁধারে ডুবে থাকবে এটা তাঁরা মানতে পারেননি। সেই সময় থেকে ওই পুজোর দায়িত্বে মহিলারাই।
পাথরপ্রতিমা ব্লকের নদী ও জঙ্গলে ঘেরা একটি প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত বিষ্ণুপুর গ্রামটির অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষিজীবী ও দিনমজুর। নদী লাগোয়া এই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ বাস করেন। বছর দশেক আগে গ্রামবাসীরা গ্রামে দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নেন। বেশ ভালই চলছিল সব। কিন্তু বছর পাঁচেক চলার পর রাজনৈতিক বিবাদের জেরে ভাগ হয়ে যায় পুজো কমিটি। প্রায় বন্ধের মুখে এসে দাঁড়ায় পুজো। সেই সময়ই প্রায় ৫০ জনকে নিয়ে তৈরি হয় বিষ্ণুপুর মহিলা গোষ্ঠী। সাংগঠনিক দিক থেকে গোষ্ঠীর সদস্যরা বর্তমানে সাতজন করে বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে পুজোর কাজ করছেন। এ বছর পুজোর বাজেট প্রায় ৫০ হাজার টাকা। কে কোন কাজ করবে তারও তালিকাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। কোনও দল ব্যস্ত চাঁদা তোলার কাজে, আবার কোনও দল ব্যস্ত সাংস্কৃতিক মহড়ায়। কয়েক মাস আগে থেকেই গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন খোলা জায়গায় প্রতি রবিবার দুপুরে মিলিত হচ্ছেন গ্রামের মহিলারা। ওই বিদ্যালয়েরই পাশে চওড়া রাস্তার একদিকে অস্থায়ী ত্রিপল খাটিয়ে তৈরি হচ্ছে মাটির সাজের দেবীদূর্গা। প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষের মুখে। ওই জায়গাতেই দোতলা মন্দিরের আকারে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। পুজোর কদিন থাকছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
বাড়ির কর্তারা রাজনৈতিক বিবাদে মত্ত হলেও এই মহিলাদের অবশ্য কোনও দল নেই। রাজনৈতিক কূটকচালি থেকে অনেক দূরে তারা। সারা বছরের একঘেয়ে জীবনযাত্রার পর একটু আনন্দের খোঁজে তাঁরা পুজো করেন। জানালেন, বাড়ির কর্তারা চাষ-আবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আমরা সংসারের দায়িত্বে। তার মধ্যেও সময় বার করে আমরা এই পুজোর আয়োজন করি। পুজোর চারদিন নিজেদের পুজো নিয়ে তাঁরা এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে পাশের গ্রামেও ঠাকুর দেখতে যেতে পারেন না তাঁরা। তাতে অবশ্য তাঁদের কোনও খেদ নেই। এই পুজো তাঁদের কাছে মানসিক বিশ্রাম। নিজেদের গ্রাম তো বটেই, পাশের গ্রামের বাসিন্দারও তাঁদের উৎসাহিত করেন বলে জানালেন মহিলা গোষ্ঠীর সভাপতি মঞ্জরী মাইতি। তিনি আরও বলেন, “প্রতিমা মণ্ডপে তোলা থেকে বিসর্জন সবই আমরা করি। তবে প্রশাসনিক অনুমতি-সহ অন্যান্য কাজে পুরুষেরাও আমাদের সাহায্য করেন।”
এই পুজোয় আড়ম্বর হয়তো নেই, কিন্তু প্রাণের টান আছে। থিম পুজোর ভেঙে পড়া ভিড় নেই, তবে আন্তরিকতার সুরে বাঁধা এই পুজো। আর সেটাকে মূলধন করেই এই পুজো যে ভবিষ্যতে আরও বড় হবে তা আশা করাই যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.