নারী পাচারে অভিযুক্ত কার্তিক ‘মেম্বার’
কার্তিক ‘মেম্বার’!
কাজের খোঁজে বিদেশ-বিভুঁইয়ে এসে অচেনা গাড়িতে ওঠার সময়ে চালকের মুখের এই দু’টি শব্দ মনে গেঁথেছিল বছর পঁচিশের বাংলাদেশি মহিলার। মহিলার দাবি, গাড়িতে তোলার সময়ে চালক নিজেকে দেখিয়ে বলেন, “কার্তিক মেম্বারের বাড়িতে কাজে যাচ্ছ। চিন্তা কী?” তবে কাজ মেলেনি। মহিলার ঠাঁই হয়েছিল বসিরহাটের মাটিয়ার যৌনপল্লিতে। শারীরিক নির্যাতনের মধ্যেও অবশ্য ওই দু’টি শব্দ ভোলেননি তিনি। পুলিশকেও তা জানান।
এসডিপিও (বসিরহাট) আনন্দ সরকার মঙ্গলবার বলেন, “প্রাথমিক তদন্তের পরে আমাদের ধারণা, ওই কার্তিক মেম্বার প্রকৃতপক্ষে হাড়োয়ার গোপালপুর-২ পঞ্চায়েতের সদস্য কার্তিক দাস। তাঁকে এখনও ধরা যায়নি।” স্থানীয় সূত্রে খবর, কার্তিকবাবু ওই এলাকার তৃণমূল নেতা। এসডিপিও-র দাবি, যে গাড়িতে গত শুক্রবার ওই মহিলাকে যৌনপল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই গাড়িটি পুলিশ আটক করে হাড়োয়ার পুকুরিয়া-গোঘাটা গ্রামে কার্তিকবাবুর বাড়ির সামনে থেকে। গাড়িটি কার্তিকবাবুরই বলে জানা গিয়েছে। মহিলা গাড়িটি শনাক্তও করেছেন।
পুলিশ জানায়, কার্তিকবাবুর সহযোগী হিসেবে সহিদুল ইসলাম নামে এক জনকে ধরা হয়েছে। ধৃত নিজেকে বসিরহাট আদালতের মুহুরি বলে দাবি করেছেন। যদিও ওই আদালতের মুহুরিরা সে কথা মানেননি। ওই যৌনপল্লিতে বিক্রি হওয়া আরও দুই বাংলাদেশি মহিলা-সহ কয়েকজনের খোঁজ চলছে।
ঘটনায় বিব্রত হাড়োয়ার তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “মহিলাদের প্রতি অপরাধ জঘন্য ঘটনা। যদি দলের কেউ যুক্ত থাকে, তা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু যদি গভীর চক্রান্ত হয়, তা হলে তারও প্রতিবাদ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তা না জেনে মন্তব্য করতে পারব না।”
কী হয়েছিল শুক্রবার?
স্বামী-বিচ্ছিন্না ওই মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা। তাঁর দু’টি সন্তান রয়েছে। গ্রামের এক বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। কিন্তু সেই টাকায় সংসার চলত না। গ্রামের এক দম্পতি তাঁকে ভাল কাজ জোগাড় করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গাড়িতে তোলে। আরও দুই মহিলাকেও তোলা হয়। কিছু ক্ষণ গাড়িতে যাওয়ার পরে নদী পেরোতে নৌকায় উঠতে হয়। নদী পেরিয়ে আর একটি গাড়িতে (আটক হওয়া গাড়ি) তিন মহিলাকে তুলে দিয়ে ওই দম্পতি চলে যায়।
ওই রাতেই বাংলাদেশি তিন মহিলাকে আনা হয় মাটিয়ার যৌনপল্লিতে। উদ্ধার হওয়া ওই বাংলাদেশি মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, ৫৫ হাজার টাকায় তাঁকে রিজিয়া বিবি ওরফে পাগলি নামে এক ঘর-মালকিনের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। শুরু হয় নির্যাতন। দু’দিন কাটতেই তিনি বুঝতে পারেন, তাঁকে এক লক্ষ টাকায় অন্যত্র বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
ওই যৌনপল্লিতে ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি’র অফিস রয়েছে। রবিবার সংগঠনের সদস্যেরা একটি কর্মসূচিতে যৌনপল্লির ঘরে-ঘরে যাচ্ছিলেন। সামনে পেয়ে তাঁদের পায়ে পড়ে তাঁকে বাঁচানোর আর্জি জানান ওই মহিলা। এর পরেই তাঁকে উদ্ধার করা হয়। সোমবার তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এসডিপিও-র দাবি, “তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই যৌনপল্লিতে কার্তিকবাবুর আসা-যাওয়া ছিল। তাঁকে ধরা গেলে নারী পাচার চক্রের বাকি সদস্যদের হদিস মিলবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।” ‘দুর্বার’-এর প্রতিনিধি পল্লবী মণ্ডল বলেন, “ওই বাংলাদেশি মহিলাকে উদ্ধারের পরে মঙ্গলবার বিকেলে কিছু লোক আমাদের অফিস ঘেরাও করে হুমকি দেয়। পুলিশকে জানিয়েছি।” বসিরহাট আদালত এ দিন মহিলাকে লিলুয়ার হোমে পাঠানোর এবং ধৃতকে জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেয়। সহিদুলের দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.