দশভুজা
রিনার জীবন জননীর সংগ্রাম
ত্যাচারের হাত থেকে প্রতিকার পেতে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সমাজ কল্যাণ পর্ষদের ফ্যামেলি কাউন্সেলিং সেন্টারের কাউন্সিলার রিনা মুখোপাধ্যায়ের কাছে এসেছেন এক মহিলা। সই করতে পারেন না। আবেদনপত্রে অগত্যা টিপছাপ। ডান হাতের আঙুল দিয়ে ছাপ দেওয়ায় আপত্তি জানালেন রিনাদেবী। কিন্তু এ বার ময়লা শাড়ির ভিতর দিয়ে যে বাঁ হাতটা বেরিয়ে এল সেটা দেখে চমকে উঠলেন তিনি। ঘুমন্ত অবস্থায় অ্যাসিড ঢেলে শরীরের গোটা বাঁ দিকটাই পুড়িয়ে দিয়েছে স্বামী।
মহিলার মুখটা আর মনে পড়ে না। চেহারাটাও এখন ঝাপসা। কিন্তু সেই মুহূর্তটা এখনও তাড়িয়ে বেড়ায় রিনাদেবীকে। তিনি বলেন, “বলতে পারেন সেই ঘটনাই আমার জীবনের একটা মোড় ঘুরিয়ে দিল। ঠিক করলাম, নিছক চাকরি নয়, এই চেয়ারে বসেই অসহায় মহিলারা যাতে সুবিচার পায়, আইনি সুরক্ষা পায়তার জন্য লড়াই করব।”
সেই পথ চলা শুরু। আইনের মোটা মোটা বই নিয়ে শুরু হল পড়াশোনা। এর পর তিনি ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটির সদস্য হলেন। সেখান থেকে কৃষ্ণনগর সংশোধনাগারের কাউন্সিলার। লোক আদালতের সদস্য। প্যারালিগ্যাল ভলান্টিয়ার্সে ‘মনিটর’। এর পর জেলা পুলিশ প্রশাসনের তরফে পুলিশ কর্মীদের আইন পাঠ দেওয়ার জন্য আসতে থাকল আমন্ত্রণ। আর ২০১১ সালে জীবনের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত কাজের দায়িত্ব নেওয়ার ডাক এল। নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন হিসেবে মনোনীত হলেন। নিঃসন্তান রিনাদেবী। দশটা পাঁচটার সরকারি চাকরি আর সুখি গৃহকোণ ছেড়ে এ ভাবেই রিনাদেবী নিজেকে ছড়িয়ে দিলেন কর্মময় জীবনে। শিশু ও মহিলাদের আইনি সুরক্ষা দিতে দিতে শুরু হল ভিন্নতর লড়াই।
১৯৭৫ সালে মৃণালিনী গার্লস হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর তাঁর বিয়ে হয়ে যায় কৃষ্ণনগরের সরকারি চাকরিজীবী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। একান্নবর্তী পরিবারের হেঁসেল সামলে বিএ পাশ করে ফেললেন। তারপর সোসিওলজিতে এম এ। পাশ করলেন বি এড। এর পর যোগ দিলেন ফ্যামেলি কাউন্সেলিং সেন্টারে কাউন্সিলার হিসেবে। কিন্তু পরিবার ভাগ হয়ে গেল।
আর তারই ফাঁকে আবারও নতুন করে এম এ পরীক্ষার প্রস্তুতি। ৪৮ বছর বয়সে পাশ করলেন এম এস ডব্লিউ বা মাস্টার অফ সোসালওয়ার্ক। এবং আজ ৫৩ বছর বয়সে তিনি এম এড পরীক্ষায় বসার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। বলেন, “আমার স্বামী আমাকে সব সময়ই উৎসাহিত করেছে।” সুব্রতবাবুর কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছুটে বেড়ান রীনাদেবী। সেই সঙ্গে ভুলে থাকতে চান ব্যক্তিজীবনের এক নির্মম অপ্রাপ্তিকে। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন হওয়ার পর তাই তিনি বারবার ছুটে যান হোমে অনাথ আশ্রয়হীন শিশুদের কাছে। কোলে তুলে নেন রাস্তায় পরিত্যক্ত সদ্যোজাত শিশুদের। তাদের সুচিকিৎসার জন্য ছুটে যান হাসপাতালে। আইনের সাহায্য নিয়ে শিশু শ্রমিকদের জন্য অন্য রকম লড়াইয়ের কথা ভাবেন। রীনাদেবী তাই অনায়াসে বলতে পারেন, “আমার নিজের কোনও সন্তান নেই। কিন্তু এখন যে আমি জেলার প্রতিটি শিশুরই মা।” নিজের সম্পর্কে তাই সহজেই বলে দিতে পারেন, “আমি সন্তানহীন জননী।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.