বিয়ের কথাবার্তা চলছিল মেয়ের। বাড়িতে তাই তিল তিল করে জমানো কিছু নগদ টাকা আর ভরি তিনেক সোনার গয়না গড়ে রেখেছিলেন ক্ষিতিমান হালদার। সোমবার রাতে বেলডাঙার হবিবনগরে তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে ডাকাতরা ক্ষিতিমানবাবুর সেই সঞ্চয়ই শুধু ছিনিয়ে নিল না, লুঠে বাধা দেওয়ায় তাঁর বছর আঠারোর কন্যাকে গলায় ফাঁস দিয়ে খুনও করে গেল তারা। মঙ্গলবার সকালে গলায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ওই তরুণীর দেহ উদ্ধারের পরে এমনই অনুমান পুলিশের।
ওই দিন রাতে বাড়ি ছিলেন না ক্ষিতিমানবাবু। ছিলেন না তাঁর স্ত্রী সরস্বতীদেবীও। বাড়িতে একাই ছিলেন তাঁর মেয়ে শ্যামলী (১৮)। পুলিশের অনুমান সে খবর পেয়েই ডাকাতরা চড়াও হয়েছিল রাতে। শ্যামলী তাদের বাধা দেওয়াতেই গলায় ফাঁস দিয়ে তাকে ‘শাস্তি’ দেয় ডাকাতেরা। দুষ্কৃতীরা শ্যামলীর পরিচিত হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। তবে, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ওই ঘটনায় কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি তারা। নদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ইন্দ্রজিত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তদন্তে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ বেশ কয়েক জায়গায় হানাও দিয়েছে।”
শ্যামলীর মা মুড়ির কারবার করেন। মাঝে মধ্যেই রাতের ট্রেন ধরে লালগোলা গিয়ে মুড়ি নিয়ে আসেন তিনি। সোমবার ছিল তেমনই একটি দিন। বাড়ি ছিলেন না ক্ষিতিবাবুও। কোচবিহারে তাঁর এক আহত আত্মীয়কে দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। কাছেই দক্ষিণপাড়া মোড়ে ফুচকা বিক্রি করেন তিনি। শ্যামলীদের বাড়ির পাশেই তাঁর মামার বাড়ি। তাঁদের ভরসাতেই মেয়েকে রেখে গিয়েছিলেন হালদার দম্পতি।
এ দিন লালগোলা থেকে বাড়ি ফিরেই সরস্বতীদেবী দেখেন, দরজা খোলা। ঘরে পা দিয়েই দেখেন পড়ে রয়েছে মেয়ের নিথর দেহ। তিনি বলেন, ‘‘একমাত্র মেয়েটার বিয়ের জন্যই কষ্ট করে কিছু টাকা জমিয়ে ছিলাম। গয়নাও গড়িয়ে ছিলাম কয়েকটা। ওরা সে সবই নিয়ে গেল। মেয়েটাকে তো না নিলে পারত!” কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। |