বললুম তো, রিজাভ্ যাব, দেস্সো টাকা লাগবে। বস্তে হলে বসুন, নাইলে ছাড়ুন দিদি, বেফালতু বাওয়ালি করবেন না। সিধা রাস্তা বন্ধ, ঘুরে যেতে হবে। আরে! আমাদের ওপর চেল্লাচ্ছেন কেন? পুলিস্কে বলুন। রাস্তা কি অটোয়ালারা বন্ধ করেছে নাকি!
যত দোষ সব অটোর! পাঁজ্জন তুললে কেস্, ডান দিকে প্যাসিঞ্জার তুললে কেস্! গাদা-গাদা সাজ্জেন ছেড়ে রেখেছে, আমাদের কেস্ দেবে বলে! প্যাসিঞ্জারগুলো দরকারের সময় ছ’জন উঠবে, সাত জন উঠবে, সাইড রডে চেপে যাবে, সে-বেলা কিছু না! আমাদের বেলা, যেখান-সেখান দিয়ে প্যাসিঞ্জার তোলা যাবে না!
আপনারাই বলেন, দিদি, সব জ্যাম তো শুধু অটোর জন্যেই, না? এত এত প্রাইভেট বেড়েছে, চাজ্জনের গাড়িতে এক জন যাচ্ছে, তার জন্যে জ্যাম বাড়ে না? শুধু আমরা মোড়ের মাথায় যেমন খুশি দাঁড়াই বলে রাস্তা আটকে যায়? বেশ করি, দাঁড়াই। আমাদের দাঁড়াতে হয়। শুনুন দিদি, সারা কলকাতায় আমাদের কোনও স্ট্যান্ড নেই, রাস্তার একটা সাইড কেটে দিয়েছে, যে লাইনে তিন্সো গাড়ি চলে, সে লাইনের জন্য দশটা গাড়ির জায়গা দিয়েছে, সেখানেই দাঁড়াতে হবে। একসাথে বেশি গাড়ি চলে এলে ডবল লাইন তো হবেই। আমরা কী করব? কোথায় দাঁড়াব? মোড়ের মাথায় না দাঁড়ালে প্যাসিঞ্জার উঠবে? দশ পা হেঁটে, এগিয়ে এসে অটো ধরতে গেলে আপনাদেরই কোমরে ঠুমকো লেগে যায়, দিদি!
শুনুন দিদি, আমাদের কোনও আট ঘণ্টা নেই, ওভারটাইম নেই, মাইনে নেই, ডিএ টিএ মেডিকেল নেই, পিএফ-গ্যাচুইটি-পেন্সান্ নেই, শনিবার-রোববার নেই, ফিফটিন্থাগস্ট নেই। সব অটো তো বেআইনি, না? কাগজপত্তর ঠিক নেই? নেই। বন্ধ করে দিন না। কত ক্ষমতা, দেখি। দেখি, কী করে চলে আপনাদের। এক দিন যদি ছুটি করি না, কলকাতা শহর বসে যাবে। রাস্তায় জল হলে, মিছিল হলে, খিচান্ হলে, লাইনে-বেলাইনে, তিনসোপঁইষট্টি দিন, সকাল থেকে মাঝরাত অটোই চলে। বাসের মতো আমাদের ফাস্কার লাস্কার নেই। |
বেশ করি, গাঁক গাঁক করে গান চালাই। প্যান্ডেলে সারা রাত মাইক বাজে না? পোগ্গাম হয় না পাড়ায় পাড়ায়? ষোলো ঘণ্টা এই রাস্তায় আপডাউন করতে হয়, বারোমাস করতে হয়। মিছিলে ডাকলে যেতে হয়, ইলেক্সানে চোঙ লাগিয়ে ঘুরতে হয় ফ্রি। পুজোয় দুটো একস্ট্রা পয়সার জন্য গাড়ি নামাতেও হয়। আমাদের গালফ্রেন্ড নেই? বাপ-মা নেই? বউ-বাচ্চা-বন্ধুবান্ধব নেই? আমার ইচ্ছে করে না একডালিয়া যাই? লেবুতলা-মম্মদালি-কলেস্স্কোয়্যার যাই? ইচ্ছে করে না এক দিন ফ্যামিলি নিয়ে হোটেলে বসে খাই?
এই যে পুজোয়, পুলিস্ রুট চালাতে দেবে না, রাস্তা বন্ধ করে সব প্যান্ডেল হয়েছে, লাইটিং হয়েছে, গলি বন্ধ করে দড়ি ফেলে লোক ছাড়বে আটকাবে, এখানকার বাস ওখান দিয়ে ঘুরিয়ে দেবে, কোনও আইন কিছু না, শুধু অটোয় কেস্! এ সময় আমি রুট ছাড়া যাব, গলিগালা দিয়ে বের করে দেব, আপনি কিন্তু দিব্যি যাবেন! এখন কিন্তু বলবেন না, অটো রুট মানে না! এখন আপনাদের দরকার। শুধু দুটো টাকা বেশি চাইছি, ওমনি গরম, না? আইন আমি একা ভাঙছি? আপনি ভাঙছেন না? কেস্ খেলে তো আমি খাব, আপনি তো খাবেন না। তাইলে, এক্সট্রা দেবেন না কেন?
টিভিতে বসে যারা জ্ঞান মারে, তারা এসে গাড়ি করে আপনাকে
বাড়ি পৌঁছে দেবে না, দিদি। তবু আপনারা অটোয়ালার ওপরই রোয়াব নেবেন। কেন, দিদি? আমাদের কি দেখতে খারাপ? |