ঐতিহ্যে রাঁচি, থিমে এগিয়ে জামশেদপুর
দুর্গোৎসবের ঐতিহ্যবাহী ধ্যান-ধারণা ধরে রাখতে বরাবরের মতো এবারও তৎপর রাজধানী রাঁচি। অন্য দিকে প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গের ‘থিম পুজোর’ আকর্ষণে পুরনো চিরাচরিত ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে আগ্রহী ‘ইস্পাতনগরী’ জামশেদপুর। বড় বাজেটের প্যান্ডেল, আলোর জাঁকজমকে এ বার অতিরিক্ত আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে স্টিল সিটি বোকারো এবং কয়লানগরী ধানবাদের কিছু বারোয়ারি দুর্গা পুজো মণ্ডপও।
ঝাড়খণ্ডে শারদোৎসবের বারোয়ারি আয়োজনে রাজধানীকে টেক্কা দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছে ইস্পাতনগরী জামশেদপুর। শুধু সর্বজনীন মণ্ডপের সংখ্যাতেই নয়, বাজেটের বহর, উৎসবের জাঁকজমকসব দিক থেকেই এগিয়ে জামশেদপুর। ইস্পাতনগরীতে এ বার বারোয়ারি পুজো মণ্ডপের সংখা ৩৮৪। রাঁচিতে ১৩৭।
মণ্ডপ সজ্জায়, শিল্প ভাবনায়, এমনকী পুজোর পৃষ্ঠপোষকাতায়ও যেন ইস্পাতনগরীর পুজোয় কলকাতার গন্ধ। কলকাতার মতোই জামশেদপুরের বিগ বাজেটের পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নাম। ইস্পাতনগরীর বিগ বাজেটের আকর্ষণীয় পুজোর তালিকার উপরের দিকে রয়েছে কাশীডিহর পিয়ারী সিংহ ধুরান্ধার সিংহ মেমোরিয়াল, আদিত্যপুরের জয়রাম স্পোর্টিং ক্লাব এবং ভুইয়াডিহির সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটির নাম। এই তিন প্রধান পুজোর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার প্রভাবশালীরা।
ভুইয়াডিহিতে তৈরি হয়েছে ওড়িশার মুক্তেশ্বর ধাম। পুজো কমিটির তরফে রবীন্দ্র ভট্টাচার্য জানান, এখানে মুক্তেশ্বর ধাম তৈরি হচ্ছে থার্মোকল দিয়ে। গড়ছেন প্রতিবেশি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার শিল্পীরা, যৌথভাবে। ধারাবাহিক সড়ক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে গণ চেতনা বাড়াতে এখানে মণ্ডপ সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ‘মৎকা-কা-কুয়া’। গর্ত করে কাঠের পাটাতনের রাস্তা বানানো হয়েছে। পঞ্চমী থেকে দশর্কদের জন্য খুলে দেওয়া হবে ‘মত-কা-কুয়া’। সেখানে টানা চলবে ছ’টি মোটরবাইক এবং দু’টি মারুতি গাড়ি। শারদোৎসবের ১৮টি আলোর গেটও এ বার দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। অন্য দিকে, ঝাড়খণ্ডকে খরা কবলিত ঘোষণার জেরে এ বার জল সঙ্কটকেই শারদোৎসবের মূল থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে জামশেদপুরের সবুজ কল্যাণ সংঘ। জলাভাব মোকাবিলায় কী করণীয় তাও তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে। ক্লাবের তরফে জানিয়েছেন অমিত চট্টোপাধ্যায়।
পুরাণোক্ত পুজো পদ্ধতি এবং ঐতিহ্য অটুট রেখে রাঁচির দুর্গাবাটির পুজো এ বার ১৩০ বছরে পড়তে চলেছে। ‘বৃহৎনন্দীকেশ্বর’ পুরাণ মতে, এখানে দেবীর পুজো হয়। অন্নভোগ হয় না। পুজোর চারদিনই দেবীকে লুচি ভোগ দেওয়া হয়। আগে পাঁঠাবলি হত। এখন শুধু চালকুমড়ো, আখ আর বাতাবি লেবু বলি হয়।
এ বার শতবর্ষে পড়তে চলেছে রাঁচির হিনু পুজো কমিটির বারোয়ারি দুর্গোৎসব। শতবর্ষেও পুজোর আয়োজনে চিরাচরিত ব্যবস্থা ধরে রাখতে তৎপর উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি, পুজোকে ঘিরে আয়োজিত নানান অনুষ্ঠানে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে আদিবাসী সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটানোর প্রক্রিয়াও চলছে বলে হিনু পুজো কমিটির তরফে ইন্দ্রজিৎ সিনহা জানিয়েছেন। শতবর্ষে হিনুর বারোয়ারি পুজো মণ্ডপটি গড়ে তোলা হয়েছে দুমকার মালুটি মন্দিরের আদলে। ওই মন্দিরের আকর্ষণীয় টেরাকোটার কাজও হিনুর মণ্ডপের গায়ে বাসানো চলছে। শতবর্ষ উপলক্ষে হরেক রকম আলোর খেলা দেখাতে হিনুর মণ্ডপে হাজির চন্দননগরের আলোর শিল্পীরা। হিনু পুজো কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত মণ্ডপ থেকে ২০ কুইন্ট্যাল অন্নভোগ বিতরণ করা হয়। এক শতক ধরে এই ব্যবস্থা সমানে চলে এসেছে। শতবর্ষে অন্নভোগ তো থাকছেই, পাশাপাশি, সন্ধ্যাকালীন শীতল ভোগও বিতরণ করা হবে। মহালয়ার সকাল থেকেই শুরু হচ্ছে হিনু শারদোৎসবের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান। প্রভাত ফেরী দিয়ে শুরু। সন্ধ্যায় আদিবাসীদের ছৌ-নৃত্যের মাধ্যমে দেবী দুর্গার অসুর বধ মঞ্চস্থ করবে ঝাড়খণ্ডের সরায়কেলার একদল শিল্পী। এ ছাড়া কলকাতার শিল্পীদের নিয়ে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ঠাসা সূচি রয়েছে। বরাবরই শারদোৎসবে রাঁচি শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় বকরি বাজারের বারোয়ারি মণ্ডপ। পুজোর উদ্যোক্তা ভারতীয় যুবক সংঘ। ১৯৫৮ সাল থেকে হয়ে আসছে এই পুজো। পুজো কমিটির সহ-সভাপতি রবি রাস্তগি জানান, এবার প্লাইউড এবং ফাইবার দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে অযোধ্যার রামমন্দির।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.