নীতি নির্ধারণে কাল কথা ৯ রাজ্যের সঙ্গে
শুধু কথা নয়, পণবন্দি করলে কম্যান্ডো হানাও
ন্দহর-কাণ্ডের পরে বিমান ছিনতাই মোকাবিলায় নতুন নীতি তৈরির চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল। যদিও অনেক আলোচনার পরেও তা পূর্ণাঙ্গ নীতির চেহারা পায়নি। এ বার পণবন্দিদের নিয়ে সমস্যা মেটাতে নতুন নীতি নিচ্ছে সরকার। মাওবাদী অপহরণের সেই সমস্যা গত এক বছরে এতটাই বেড়েছে যে, এ ছাড়া অন্য পথ দেখছে না দিল্লি। যে খসড়া নীতিটি আপাতত তৈরি হয়েছে সে অনুযায়ী, পণবন্দিদের মুক্তি নিয়ে মাওবাদীদের সঙ্গে দর কষাকষিতে যাওয়া হবে। কিন্তু আলোচনা ব্যর্থ হলে কম্যান্ডো বাহিনী দিয়ে অভিযান চালানোর ‘প্ল্যান বি’-ও তৈরি রাখা হবে।
ইতিমধ্যেই এই খসড়া নীতি রাজ্যগুলির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ ন’টি মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যের মতামত জানতে বৃহস্পতিবার তাদের মুখ্যসচিব ও পুলিশের ডিজি-দের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ।
গত এক বছরে ওড়িশা ও ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদীরা একের পর এক অপহরণ শুরু করার পরেই পণবন্দিদের মুক্ত করার ক্ষেত্রে একটা নীতি নির্দিষ্ট করে দেওয়ার ভাবনা শুরু হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। ছত্তীসগঢ়ের মতো কিছু কিছু রাজ্যের দাবি ছিল, পণবন্দি নিয়ে মাওবাদীদের সঙ্গে কোনও আলোচনায় যাওয়ারই প্রয়োজন নেই। এতটা কড়া অবস্থান অবশ্য নিতে চাইছে না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
সরকারি সূত্রের খবর, খসড়া নীতিতে মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরির কথা বলা হয়েছে। তাঁরাই সরকারের হয়ে মাওবাদীদের সঙ্গে দর কষাকষি করে পণবন্দির মুক্তির চেষ্টা করবেন। জরুরি পরিস্থিতিতে পণবন্দিদের মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ারও ক্ষমতা দেওয়া থাকবে তাঁদের। মূল লক্ষ্য হবে, বেশি সময় ধরে মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া। তবে মাওবাদী সংগঠনের কোনও শীর্ষ নেতা বা সক্রিয় সদস্যের মুক্তির দাবি মানা হবে না।
১৯৯৯ সালের পরে আইসি-৮১৪ বিমান অপহরণের পরে এনডিএ-সরকার বিমান ছিনতাই ও পণবন্দি মুক্তি নিয়ে একটি নীতি তৈরির চেষ্টা করে। মার্কিন মডেল অনুসরণ করে পণবন্দি সমস্যার মোকাবিলায় কোনও সমঝোতায় না যাওয়ার কড়া নীতি নিতে চেয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী। কিন্তু তা সফল হয়নি। প্রায় ১১ বছর ধরে বিস্তর আলোচনার পরে বিমান ছিনতাই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন করা হয়। বিমান ছিনতাইকারীদের শাস্তির তালিকায় মৃত্যুদণ্ড যোগ হয়। ৯/১১-র মতো ছিনতাই করা বিমান নিয়ে হামলার চেষ্টা হলে তা গুলি করে নামানোর অনুমতিও দেওয়া হয়। কিন্তু পণবন্দি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোনও পূর্ণাঙ্গ নীতি এখনও তৈরি হয়নি।
এ বার মাওবাদী অপহরণের ক্ষেত্রে অন্তত এমন একটি নীতি তৈরি করতে চাইছে কেন্দ্র।
গত ডিসেম্বরে ওড়িশার মালকানগিরির জেলাশাসক আর ভিনিল কৃষ্ণকে মুক্ত করার জন্যও মাওবাদীদের দাবি মেনে বেশ কয়েক জন জঙ্গিকে মুক্তি দিতে হয়। এ বছরের মার্চে ওড়িশায় মাওবাদীরা দুই ইতালীয় পর্যটককে অপহরণ করে। বিজেডি বিধায়ক ঝিনা হিকাকাকেও অপহরণ করা হয়। তাঁদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে মাওবাদী নেতা সব্যসাচী পণ্ডার স্ত্রীকে মুক্তির দিতে হয় রাজ্য সরকারকে। এপ্রিলে ছত্তীসগঢ়ের সুকমা-র জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেননকে অপহরণ করে মাওবাদীরা। প্রশাসন সূত্রের খবর, মুখে স্বীকার না করলেও তখন বেশ কয়েক জন মাওবাদী নেতার জামিনের ক্ষেত্রে আদালতে নরম অবস্থান নেয় সে রাজ্যের সরকার। ঠিক যে ভাবে ২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের সাঁকরাইল থানার ওসি অতীন্দ্রনাথ দত্তকে মাওবাদীদের কবল থেকে ছাড়িয়ে আনতে তৎকালীন বাম সরকারকে বেশ কয়েক জনের জামিনের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল বলে খবর।
তার পরেও মে মাসে দিল্লিতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে এসে পণবন্দি মুক্তির ব্যাপারে কড়া অবস্থানের পক্ষপাতী ছিলেন ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ। তিনি দাবি তোলেন, মাওবাদীরা যদি কোনও মুখ্যমন্ত্রীকেও অপহরণ করে, তা হলেও তাঁর মুক্তির বিনিময়ে কোনও জঙ্গিকে ছাড়া যাবে না। এতটা কড়া অবস্থান না নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বরং মনে করছে, আলোচনা হতেই পারে। তবে কী কী শর্ত নিয়ে আলোচনা হবে, নীতিতে তা নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া দরকার। এই নীতিটি রাজ্যগুলির সামনে ‘মডেল নীতি’ হিসেবেই রাখা হবে। মাওবাদী দমন অভিযানের ক্ষেত্রেও ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ নতুন করে তৈরি করতে চাইছে কেন্দ্র। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় দেখা গিয়েছে, মাওবাদীরা স্থানীয় গ্রামবাসীদের মানব-ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে নিরীহ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চাইছে, এই ধরনের ঘটনা এড়াতে মাওবাদীদের অবস্থান, এলাকার ভূগোল সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই অভিযান হোক। রাতে গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় অভিযান হলে রাবার-বুলেট, নাইট-ভিশন ডিভাইস ব্যবহার করা হোক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.