সরকারকে বাড়তি ক্ষমতা দিয়েই চূড়ান্ত জমি বিল
মতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও বেসরকারি শিল্পের জন্য রাষ্ট্রের হাতে অধিকতর ক্ষমতা রেখেই জমি অধিগ্রহণ বিল আজ চূড়ান্ত করে ফেলল মন্ত্রিগোষ্ঠী। অগ্রাহ্য করা হল বেসরকারি শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে সরকারের ভূমিকা হ্রাস করার ব্যাপারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনির সুপারিশও। মন্ত্রিগোষ্ঠীর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ ও বেসরকারি শিল্প স্থাপনের জন্য সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করতে পারবে রাজ্য সরকার।
জমি বিল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এখনও তাঁর অবস্থানে অনড়। মমতার যুক্তি, বেসরকারি শিল্প সংস্থা যখন তাদের লভ্যাংশ সরকারকে দেয় না, তখন সরকারই বা কেন তাদের জন্য জমি অধিগ্রহণ করবে? যা খণ্ডন করতে গিয়ে মমতা বা পশ্চিমবঙ্গের নাম না করেও আজ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেন, “কোনও রাজ্য চাইলে কেন্দ্রের জমি বিল না-ও মানতে পারে।” একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, “অবশ্য কোনও রাজ্যের ব্রেন ডেড না হলে কেন্দ্রের এই জমি বিল নিশ্চয়ই মেনে নেবে!”
জমি বিল না মানলে তার কী প্রভাব পড়তে পারে পশ্চিমবঙ্গে? খোদ তৃণমূলের অন্দরেই আশঙ্কা, এই জমি বিল না মানলে আখেরে ভুগবে পশ্চিমবঙ্গই। কারণ, শিল্পায়নের জন্য ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড বা বিহারের মতো রাজ্যগুলি বেসরকারি শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে ইচ্ছুক। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ স্রোতের বিপরীতে হাঁটলে অনেক শিল্প সংস্থাই পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে। এমনিতেই ন্যানো-উত্তর পর্বে এ রাজ্যের শিল্প ভাবমূর্তি উজ্জ্বল নয়। জমি বিলে বিরোধিতা পশ্চিমবঙ্গকে আরও পিছনে ঠেলে দেবে বলেই আশঙ্কা নানা মহলে।
সংসদে জমি বিল এলে তৃণমূল যে বিরোধিতা করবেই, সে ব্যাপারে নিঃসংশয় শাসক পক্ষ। তবে মন্ত্রিগোষ্ঠীর এক শীর্ষ সদস্যের বক্তব্য, সরকার অবশ্য আর এ নিয়ে বিচলিত নয়। কারণ, একটি মাত্র রাজ্যের আপত্তির কারণে গোটা দেশের শিল্পের বাতাবরণ নষ্ট করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া ইউপিএ-র প্রথম জমানায় যে জমি বিলে বিজেপি ও বামেরা সমর্থন জানিয়েছিল, তার তুলনায় বর্তমান বিলটি অনেক উন্নত। তখন বেসরকারি শিল্পের জন্য অধিগ্রহণে রাজ্যের হাতে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ক্ষমতা রাখার কথা বলা হয়েছিল। প্রস্তাবিত বিলে সেটা বাড়িয়ে ৩৩ শতাংশ করা হলেও একই সঙ্গে কৃষক ও জমির মালিকদের স্বার্থ সুনিশ্চিত করা হয়েছে বলে দাবি সরকারের। মন্ত্রিগোষ্ঠীর ওই সদস্যের বক্তব্য, প্রস্তাবিত বিলে ভারসাম্য রাখতে গিয়ে অ্যান্টনির দাবি যেমন খারিজ করা হয়েছে, তেমনই তফসিলি এলাকায় শর্ত ছাড়াই শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারে যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সুপারিশও মানা হয়নি। প্রস্তাবিত বিলে আরও কিছু প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
• গ্রামাঞ্চলে অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ রাজ্য স্থির করবে। শহরের সঙ্গে দূরত্ব হিসেব করে প্রকৃত ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করবে রাজ্য সরকার।
• কোনও বেসরকারি সংস্থা এক লপ্তে কতটা জমি অধিগ্রহণ করলে পুনর্বাসন ও পুনর্স্থাপন প্যাকেজ দিতে হবে, তা-ও স্থির করবে রাজ্য।
• বহু ফসলী ও সেচযোগ্য জমি কতটা অধিগ্রহণ করা যেতে পারে, তা-ও রাজ্যওয়াড়ি স্থানীয় সরকার স্থির করবে।
• তফসিলি এলাকায় স্থানীয় গ্রামসভার অনুমতি ছাড়া জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না।
• অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর পর জমির ফাটকা শুরু হলে শিল্পসংস্থা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে।
• কোনও এলাকায় পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় বাস করার পর অধিগ্রহণের ফলে কেউ গৃহহীন হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাঁকে বাড়ি দিতে হবে। পরিবর্তে তিনি অর্থও নিতে পারেন।
• অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের এক জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। পরিবর্তে তিনি এককালীন ৫ লক্ষ টাকা বা মাসে ২ হাজার টাকা করে কুড়ি বছর ধরে অ্যানুইটি পেতে পারেন।
• ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রথম বছর মাসে তিন হাজার টাকা করে অতিরিক্ত ভাতা এবং প্রতিস্থাপনের জন্য এককালীন এক লক্ষ টাকা পাবে।
• কোনও স্বনির্ভর ব্যক্তি বা ছোট ব্যবসায়ী অধিগ্রহণের ফলে উচ্ছেদ হলে ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.