একই দিনে ট্যাক্সিচালকদের দু’টি ভিন্ন মুখ দেখল শহর। তার একটি চেনা, হয়রানির অভিযোগের রোজনামচার। দ্বিতীয়টি সততার এক অন্য ছবির।
সোমবার রাতে ফের ভাড়া নিয়ে বিবাদের জেরে যাত্রীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যের বদলে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে দমদমের এক ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে। ওই রাতেই আবার এক মহিলা যাত্রীর ফেলে যাওয়া ‘ট্যাবলেট’, মোবাইল ও নগদ-সহ প্রায় ৭৫ হাজার টাকার জিনিসপত্র মঙ্গলবার ফেরত দিয়ে যান ভবানীপুরের আর এক ট্যাক্সিচালক। প্রমোদকুমার সিংহ নামে ওই চালকের সাফ কথা, “অন্যের জিনিস আর টাকা আমি নিতে যাব কেন?”
পছন্দের গন্তব্য ছাড়া যেতে না চাওয়া, মিটারে ওঠা ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা আদায়ের নিত্য অভিযোগ এখন অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে এ শহরের ট্যাক্সিচালকদের। সম্প্রতি কসবাতেও এক মহিলা যাত্রীর থেকে দেড় হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছিল এক ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে। এ সবের মধ্যেই প্রমোদের সততার এই নজির তাই অন্য রকম বার্তা দিচ্ছে যাত্রীদের। |
পুলিশ জানায়, সোমবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ শিশুসন্তানকে নিয়ে লেক গার্ডেন্স থেকে ট্যাক্সিতে ওঠেন মাম্পি জরিওয়াল নামে এক মহিলা। জিনিসপত্র ভর্তি ব্যাগ ট্যাক্সিতে ফেলে নেমে যান যাদবপুরের সেন্ট্রাল পার্কের বাড়িতে। মঙ্গলবার মাম্পির স্বামী, পেশায় ব্যবসায়ী সতীশ জরিওয়াল বলেন, “ধরেই নিয়েছিলাম, কিছুই আর ফেরত পাব না।”
এ দিকে, প্রমোদ দেখেন, ট্যাক্সির পিছনের সিটে একটি ব্যাগ পড়ে রয়েছে। সোজা ভবানীপুরে, নিজের বাড়িতে ফিরে যান তিনি। ব্যাগ খুলে জিনিসপত্র দেখে যোগাযোগ করেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। সেই সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত রায় বলেন, “প্রথমে যোগাযোগ করি ভবানীপুর থানায়। ব্যাগের জিনিসপত্র থেকে নম্বর পেয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হয় ওই মহিলার স্বামীর সঙ্গেও।”
সব জিনিসপত্র ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত জরিওয়াল পরিবার কৃতজ্ঞ প্রমোদের কাছে। ভবানীপুর থানার ওসি বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “যে সততার নজির ওই ট্যাক্সিচালক দিয়েছেন, তাতে আমরা তাঁকে পুরস্কার দেওয়ার কথা ভাবছি।”
এ সবের কয়েক ঘণ্টা আগেই অবশ্য দমদমে রাজা কর্মকার নামে এক যাত্রীর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বচসায় জড়িয়েছেন রাকেশ সিংহ নামে এক ট্যাক্সিচালক। রাজার দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে রাকেশকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিমল গুহ বলেন, “আমরা যেমন কসবার ঘটনায় দোষী ট্যাক্সিচালকের শাস্তির দাবি করেছি, তেমনই ভবানীপুরের প্রমোদ সিংহকেও আমরা পুরস্কার দেব।”
প্রমোদের পাশাপাশি পুলিশের তৎপরতায় এ দিন সন্ধ্যায় বেসরকারি বাসে খোয়া যাওয়া নগদ ২০ হাজার টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ফেরত পান এক মহিলা। পুলিশ জানায়, সোমা সরকার নামে ওই মহিলা গাঙ্গুলিবাগানে নেমে বুঝতে পারেন, ব্যাগটি বাসে ফেলে এসেছেন। ট্রাফিক সার্জেন্ট বিশ্বজিৎ বৈদ্য ও অমরেন্দ্র সাহাকে বিষয়টি বললে বাইক নিয়ে বাসটি ধাওয়া করে গড়িয়া মোড়ের কাছে ব্যাগটি উদ্ধার করেন তাঁরা। |