মাত্র পনেরো-কুড়ি মিনিট অপেক্ষা করলেই বেঁচে যেত সাড়ে সাত লক্ষ টাকা। কিন্তু স্রেফ সময় মতো বা ‘অন-টাইম’-এ বিমান ছাড়ার জেদ বজায় রাখতে গিয়ে একটি উড়ানের জন্য ওই ক্ষতি স্বীকার করতে হল আর্থির লোকসানের ভারে জর্জরিত এয়ার ইন্ডিয়াকে! ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার, কলকাতায়। সংস্থার কর্মী-অফিসারদের অভিযোগ, কর্তাদের পরিকল্পনার অভাবেই এমন কাণ্ড ঘটেছে। যেখানে আর্থিক কারণে বিভিন্ন ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কর্মীরা, সেখানে কেবল মাত্র পরিকল্পনার অভাবে সাড়ে সাত লক্ষ টাকার ক্ষতি কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা।
ঠিক কী ঘটেছে সোমবার?
কলকাতা থেকে সপ্তাহে দু’দিন, সোম ও শুক্রবার ইয়াঙ্গন যায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। কলকাতা থেকে অন্য কোনও সংস্থার বিমান ইয়াঙ্গন-এ যায় না। কলকাতা থেকে সকাল সাড়ে এগারোটায় যে বিমান ইয়াঙ্গনের উদ্দেশে ছাড়ার কথা, সোমবার তার সময় এগিয়ে সাড়ে দশটা করা হয়। সময়ের এই হেরফেরের কথা বিমান সংস্থার তরফে ৬২ জন যাত্রীকে জানানো গেলেও ইয়াঙ্গন থেকে গয়ায় তীর্থ করতে আসা ৩৭ জন যাত্রী কিন্তু অন্ধকারে ছিলেন। তার প্রধান কারণ, ওই যাত্রীরা স্থানীয় ফোন নম্বর দিয়ে ইয়াঙ্গন থেকে টিকিট বুক করেছিলেন। ফলে, বিমানের সময় বদলের বিষয়টি জানাতে চেয়ে ফোন করলেও ওই নম্বরে যোগাযোগ করা যায়নি বলে সংস্থা কর্তাদের দাবি। তাই ওই ৩৭ জন যাত্রী জানতেন, তাঁদের নিয়ে কলকাতা থেকে বিমান রওনা দেবে সকাল সাড়ে এগারোটাতেই।
এই বর্মীদের হয়ে কলকাতায় যিনি অনুবাদকের কাজ করেন, সেই মায়া শীল এ দিন জানান, তাঁরা সরাসরি গয়া থেকে বাসে করে বিমানবন্দরে আসছিলেন। মহালয়ার কারণে দক্ষিণেশ্বরে যানজটে আটকে পড়ে তাঁদের বাস। সকাল পৌনে দশটায় তাঁরা বিমানবন্দরে পৌঁছন। ঠিক তখনই ইয়াঙ্গনগামী উড়ানের চেক-ইন কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়! অনেক অনুরোধ-উপরোধেও কাজ হয় না। ‘অন-টাইম’-এ বিমান ছাড়ার জন্য জিদ ধরে বসেছিলেন এয়ার ইন্ডিয়া কর্তারা। ফলে ওই যাত্রীদের ফেলে রেখে ৬২ জনকে নিয়েই উড়ে যায় বিমান।
কোনও যাত্রী যদি সময় মতো বিমানবন্দরে পৌঁছতে না পারেন, তা হলে তাঁকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার দায় থাকে না বিমানসংস্থার। সে ক্ষেত্রে লোকসান গুণতে হয় যাত্রীকেই। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায়, অধিকাংশ সময় যাত্রীদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে সব বিমানসংস্থাই তাদের পরের উড়ানে ওই যাত্রীদের জায়গা করে দেয়।
কিন্তু, বর্মীদের ক্ষেত্রে অন্য সমস্যা দেখা দেয়। কলকাতা থেকে ইয়াঙ্গনের পরের উড়ান শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর। ফলে তত দিন ওই যাত্রীদের কলকাতায় অপেক্ষা করতে হত। কিন্তু তাঁদের ভিসা ছিল বুধবার পর্যন্ত। প্রশ্ন ওঠে, এ বার কোথায় যাবেন বর্মীরা? এই পরিস্থিতিতে ঠিক হয়, মানবিক কারণেই ওই ৩৭ জন যাত্রীকে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেবে এয়ার ইন্ডিয়া। সেই মতো দুপুরে তাঁদের বিমানবন্দরেই খাওয়াদাওয়া করানো হয়। তার পরে বিকেলের উড়ানে নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বই। সেখান থেকে রাতের বিমানে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যাঙ্কক। মঙ্গলবার ভোরে ব্যাঙ্কক পৌঁছে সেখান থেকে তাই বিমানসংস্থার উড়ানে তাঁদের ইয়াঙ্গনে পৌঁছে দেওয়া হয়। যখন পৌঁছনোর কথা, তার ঠিক ২৪ ঘণ্টা পরে ওই ৩৭ জন পৌঁছন নিজেদের গন্তব্যে! অবশ্য যাবতীয় খরচ বহন করেছে এয়ার ইন্ডিয়াই। এখন টিকিটের দাম হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, যাত্রীপিছু ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে বিমানসংস্থার। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ টাকা!
লোকসানের বোঝা কমাতে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া যাত্রীদের ফের টানতে সক্রিয় হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। সে কারণেই সময় মেনে উড়ান ছাড়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি শুরু করেছে তারা। কিন্তু সেই কড়াকড়িরই মাসুল দিতে হল তাদের! সংস্থার অবশ্য বক্তব্য, দিল্লিতে আচমকা বিমানের ঘাটতি দেখা দেওয়ায় কলকাতা-ইয়াঙ্গন রুটের বিমানটিকে আন্তর্জাতিক রুটে চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। দিল্লি থেকে সময়সূচি ঠিক রাখতে তাই কলকাতা-ইয়াঙ্গন রুটের সময়সূচি এগিয়ে আনা হয়। কিন্তু যখন দেখা যায়, বর্মী তীর্থযাত্রীরা সমস্যায় পড়েছেন, তখন মানবিক কারণেই তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু, কেন বিমানকে কিছুটা দেরি করিয়ে তাঁদের সেই বিমানে নিয়ে যাওয়া গেল না? তাতে তো সাড়ে সাত লক্ষ টাকা ক্ষতি এড়ানো যেত। সংস্থার যুক্তি, সোমবার ৩৭ জন যাত্রীকে ওই বিমানে নিয়ে যেতে গেলে বিমানটিকে প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরি করে কলকাতা থেকে ছাড়তে হতো। তাতে লন্ডভন্ড হয়ে যেতো দিল্লির উড়ানসূচি। |