কর্তার চ্যালেঞ্জ
লুফে শুরু পুজো
কে বলেছে মেয়েরা পুজোর চাঁদা তুলতে পারে না? ডেকারেটরদের তাড়া দিতে পারে না?
যাঁরা ঘর সামলান, তাঁরা কোমর বেঁধে নামতে পারেন পুজোর আয়োজনেও। চাঁদা তোলা থেকে মণ্ডপ সাজানো, দেবীর আগমন থেকে বিসর্জন, সব কিছুই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করেন তাঁরা।
আসানসোল শিল্পাঞ্চলে একাধিক মহিলা পরিচালিত দুর্গাপুজো হয়। পুজোগুলির বাজেট নেহাত কম নয়। আর দশটা পুজোর মত এগুলিও সমান জনপ্রিয়। এমনই একটি জনপ্রিয় মহিলা পরিচালিত পুজো হয় বার্নপুরের পুরনো হাট এলাকায়। এই সর্বজনীন পুজো কমিটির সম্পাদিকা নিরুপমা বিশ্বাস জানান, এ বছর তাঁদের পুজো ৬৬ বছরে পা দিল। মহিলারা এই পুজোর দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন ৬ বছর ধরে। এলাকার পুরুষেরাই এই পুজো শুরু করেছিলেন। নিরুপমাদেবীর কথায়, “কাজের লোকের অভাবে পুজো বন্ধ হতে বসেছিল। নতুন প্রজন্ম এগিয়ে না আসায় প্রবীণদের পক্ষে পুজো করা আর সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু পাড়ার পুজো তো বন্ধ করা যাবে না। অগত্যা বাড়ির মহিলারা এগিয়ে এলেন। সেই থেকে চলে আসছে নারী শক্তির দেবী আরাধনা।” সাত তাড়াতাড়ি সংসারের কাজ গুছিয়ে দল বেঁধে বেরিয়ে পড়ছেন চাঁদা আদায় করতে। কখনও ছুটেছেন ডেকোরেটরের কাছে। কখনও যাচ্ছেন দোকান বাজারে। এ বার তাঁদের মণ্ডপ সাজছে চাইনিজ কাগজ দিয়ে। বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে। থাকছে মনোরম আলোকসজ্জা। কৃষ্ণনগর থেকে প্রতিমা আনা হচ্ছে।
দেখতে দেখতে আট বছরে পা দিল আসানসোলের শ্রীপল্লি মহিলা পরিচালিত সর্বজনীন দুর্গাপুজো। দক্ষিণ ভারতীয় একটি মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে তাঁদের মণ্ডপ। পুজো কমিটির সম্পাদক ঝিলিক মজুমদার দাবি করেছেন, পুজো করার প্রশাসনিক অনুমতি আনা থেকে দধি মঙ্গল সবটাই তাঁরা করেন তাঁরা বাড়ির ছেলেদের সাহায্য ছাড়াই। এই পুজো কেন শুরু করেছিলেন? পুজো কমিটির সদস্যারা বললেন, এই পাড়ায় কোনও পুজো হতো না। অনেক দূর থেকে কখনও কখনও ঢাকের আওয়াজ ভেসে আসত। মন খারাপ হয়ে যেত। বেশি কষ্ট হতো বাড়ির বয়স্ক ও বাচ্চাদের জন্য। বড় জোর দু’দিন বিকেলে বড়দের হাত ধরে কাছাকাছি অথবা দূরে ঠাকুর দেখতে যেতে পারত বাচ্চাগুলো। কমিটির অন্যতম সদস্যা শ্রাবণী রায়ের কথায়, “এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা মণ্ডপেই কেটে যায়। ভাগ্যিস আমরা সবাই মিলে পুজোটা করব বলে এগিয়েছিলাম।” এ বার তাঁদের পুজোর বাজেট প্রায় দেড় লক্ষ টাকা, জানালেন সদস্যারা।
পুজোর দিন পনেরো আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় কল্যাণপুর সরকারি আবাসন এলাকার শিশুতলা মাঠে। সর্বজনীন এই পুজোর উদ্যোক্তা এলাকার মহিলারাই। কমিটির সম্পাদিকা কাকলি চৌধুরী জানালেন, সংগঠনের প্রায় ৬০ জন মহিলা মূলত গোটা বছর সংসারের খরচ থেকে বাঁচানো অর্থে এই পুজো করেন। আর যদি কেউ অনুদান দিতে চান, তবে তা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তোলেন না তাঁরা। বাড়ির কর্তাদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েই শুরু হয়েছিল পুজো, জানালেন উদ্যোক্তারা। এমনি এক শরতের বিকেলে মহিলারা বাড়ির কর্তাদের পাড়ায় একটা দুর্গাপুজো করার আর্জি জানান। কিন্তু কর্তারা সাফ জানিয়ে দেন, অসম্ভব। দুর্গাপুজোর ঝক্কি ঝামেলা অনেক। এই চ্যালেঞ্জটাই লুফে নিয়েছিলেন মহিলারা। নির্বিঘ্নে পুজো পেরিয়ে গেল তিনটে বছর।
কর্তারা যাই বলুক, সংসার গুছিয়ে, হেঁসেল সামলে দশভূজার আরাধনা চলছে, চলবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.