নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে পুজোর পরেই অভিযানে নামার আশ্বাস দিল শিলিগুড়ি পুরসভা। বিশেষত, রাতের অন্ধকারে অবৈধ ভাবে নির্মাণ কাজ করে নেওয়ার অভিযোগ উঠছে যে সমস্ত ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। পুরসভা সূত্রের খবর, সেবক রোডের মেয়র হোটেল-সহ একাধিক বাণিজ্যিক ভবন ও চানাপট্টি এলাকায় অবৈধ ভাবে তিন তলা বাড়ি তৈরির অভিযোগ উঠেছে। বর্ধমান রোডে জলপাইগুড়ি বাসস্ট্যান্ডের কাছেও একটি বহুতল অবৈধ ভাবে তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। পুরসভার তরফেও গত শনিবার বর্ধমান রোডের ওই বহুতলের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়েছিল পুরসভার বাস্তকারদের একটি দল। তার রাস্তার ধারে সম্প্রতি একটি নতুন বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে পার্কিংয়ের জায়গা রাখা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ সীমা সাহা বলেন, “পুজোর পরেই অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে অভিযান শুরু করা হবে। রবিবারের মতো ছুটির দিন বেছে রাতের অন্ধকারে ছাদ ঢালাই করে অবৈধ নির্মাণ কাজ চলছে। পুর কর্মীরা ছুটির দিন কাজে থাকেন না বলে অবৈধ নির্মাণ বন্ধ করতে তাঁদের পাঠানোর ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হয়। তাই ছুটির দিন বেছে এ ধরনের কাজ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু প্রোমোটারের মধ্যে। জরুরি বৈঠক ডেকে পুজোর পরেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” এদিকে, সেবক রোডে রাস্তার ফুটপাত আটকে বাঁশের মাচা বেঁধে অবৈধ ভাবে গত কয়েক মাস ধরেই নির্মাণ কাজ চালানোর অভিযোগ উঠেছে। কাজলবাবু বলেন, “ফুটপাতের অংশে বাঁশের মাচা খোলার কাজ শুরু করা হয়েছে। শীঘ্রই তা খুলে দেওয়া হচ্ছে।” কিন্তু, পুজোর মাত্র কয়েকদিন বাকি। তবুও কেন পুরসভা উদ্যোগী হয়ে সেবক রোডের ফুটপাতকে মুক্ত করতে পারছে না তা নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন তুলেছেন। পুরসভার কর্তাদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন সেবক রোডের ব্যবসায়ীদের অনেকেই। ইতিমধ্যেই ওই ব্যবসায়ীরা বেআইনি নির্মাণ নিয়ে পুর চেয়ারম্যান নান্টু পাল, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুজয় ঘটকের দ্বারস্থ হয়েছেন। সুজয়বাবু বলেন, “সেবক রোডের ব্যবসায়ীরা অনেক ধরনের অভিযোগ করছেন। অনেকের নাম জড়াচ্ছেন। আমাদের মনে হয়, পুরসভা ব্যবস্থা নিয়ে ওই সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে প্রমাণ করবে। দেখা যাক কী হয়!” পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, সেবক রোডের একটি শপিংমলের কাছে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে রবিবার রাতে অবৈধ ভাবে ছাদ ঢালাইয়ের অভিযোগ ওঠে। পুর কর্তৃপক্ষ লোক পাঠিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করান। পুরসভার তরফেই জানা গিয়েছে, বর্ধমান রোডে অনুমোদিত নকশা ছাড়াই একটি পাঁচতলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ কাজের অভিযোগ রয়েছে। পুলক ভবনের পাশের ওই বাণিজ্যিক নির্মাণের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছে পুরসভার দল। পুরসভার একটি সূত্রের দাবি, নকশা চাওয়া হলেও তা মালিকপক্ষ দেখাতে পারেননি। মঙ্গলবার পুরসভায় ভবনের নকশা নিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে। যিনি বাণিজ্যিক ভবনটি তৈরির অন্যতম কর্তা সেই মালিক সত্যনারায়ণ অগ্রবাল দাবি করেন, “অবৈধ ভাবে নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে না। ১ বছর আগে পুরনো ভবন কিনেছি। দমকলের নির্দেশে সংস্কার কাজ করছি মাত্র।” ঘটনা হল, কদিন আগে শিলিগুড়ির প্রোমোটার অনিল অগ্রবাল একটি বাণিজ্যিক ভবনে বেআইনি ভাবে ‘গ্যাংওয়ে’ তৈরি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই সময়ে অনিলবাবুও দমকলের নির্দেশে ওই গ্যাংওয়ে বানানো হচ্ছে বলে দাবি করেছিলেন। পরে পুরসভার মেয়র পারিষদের উদ্যোগে তা ভেঙে ফেলে হয়। এবার চানাপট্টির তিন তলা বাড়ি, বর্ধমান রোডের বাণিজ্যিক ভবনের নির্মাতার দাবির সত্যাসত্য খতিয়ে দেখার পরে পুরসভার মেয়র পারিষদ কী করেন তা নিয়েই নানা মহলে চলছে জল্পনা। |