স্কুলশিক্ষকদের কাজের সময় বাড়াতে চায় রাজ্য সরকার।
এখন প্রাথমিক শিক্ষকেরা সপ্তাহে ২৮ ঘণ্টা এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকেরা সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টা কাজ করেন। শিক্ষার অধিকার আইনে বলা হয়েছে, তাঁদের সপ্তাহে অন্তত ৪৫ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। ক্লাসে পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুতিরও সময় ধার্য থাকবে এর মধ্যে। এটা কার্যকর হলে প্রাথমিক শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এক ধাক্কায় সপ্তাহে কাজের সময় বাড়বে ১৭ ঘণ্টা আর মাধ্যমিক শিক্ষকদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধিটা হবে ১৫ ঘণ্টা। অধিকাংশ শিক্ষক সংগঠনই মনে করে, এটা অবাস্তব ভাবনা। স্কুলে শিক্ষকদের কাজের সময় এতটা বাড়ানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তাদেরও ধন্দ রয়েছে।
রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারা সম্প্রতি এই নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে আলোচনা হয়, শিক্ষার অধিকার আইন মানতে হলে সোম থেকে শুক্রবার পাঁচ ঘণ্টার বদলে আট ঘণ্টা এবং শনিবার পৌনে তিন ঘণ্টার জায়গায় পাঁচ ঘণ্টা স্কুলে থাকতে হবে শিক্ষকদের। কিন্তু বৈঠকে হাজির শিক্ষাকর্তাদের অনেকেই মনে করেন, প্রস্তাবটি অবাস্তব। সোম থেকে শনি, ছ’দিন এক ঘণ্টা করে সপ্তাহে বড়জোর ছ’ঘণ্টা কাজের সময় বাড়ানো যেতে পারে বলে প্রস্তাব দেন কেউ কেউ। তবে এই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। |
দফতরের এক কর্তা সোমবার বলেন, “শিক্ষার অধিকারের কেন্দ্রীয় আইন তো মানতেই হবে। এই ব্যাপারে সর্বশিক্ষা অভিযানের অধিকর্তা, পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান-সহ কয়েক জনের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। তবে কাজের সময় এতটা বাড়ানো একটু অবাস্তব মনে হচ্ছে। এই বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে হবে।”
স্কুল পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার মনে করেন, ৪৫ ঘণ্টার পুরোটাই স্কুলে না-কাটিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যদি বাড়িতে নিজেদের প্রস্তুত করেন, তা হলেও আইনের উদ্দেশ্য সাধিত হয়। তিনি বলেন, “বেশির ভাগ শিক্ষকই সপ্তাহে ২৮ বা ৩০ ঘণ্টার মধ্যে বড়জোর ১৫-১৬ ঘণ্টা পড়ানোর কাজ করেন। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। বাড়িতে ফিরেও শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে নিজেদের প্রস্তুত করার কাজে সময় দেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।”
নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি, নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি-সহ রাজ্যের অনেক শিক্ষক সংগঠনই স্কুলে শিক্ষকদের থাকার সময় আরও বাড়ানোর বিরোধী। তাদের প্রশ্ন, স্কুলের পরিকাঠামো, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ইত্যাদি বিষয়ে নজর না-দিয়ে শুধু শিক্ষকদের বাড়তি সময় স্কুলে আটকে রাখলেই কি শিক্ষার উন্নতি হবে? বাড়িতে বসেও তো স্কুলের অনেক কাজ করতে হয় শিক্ষকদের। তার মধ্যে একটা বড় কাজ হল পরীক্ষার খাতা দেখা। সেই সময়টাকেও তো তাঁদের কাজের সময় হিসেবে গণ্য করা উচিত। বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই স্কুলের ক্লাসের সময় আধ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছিল।
নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির এক নেতা বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে কাজ করতে আপত্তি নেই। কিন্তু পরিকাঠামোয় নজর না-দিয়ে আজব নিয়ম চালু করতে চাইছে সরকার!” বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কার্তিক সাহার কথায়, “ক্লাসের সময় বাড়ল না, তা সত্ত্বেও শিক্ষকদের স্কুলে বসিয়ে রাখাটা শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমরা এর বিরুদ্ধে।” প্রধান শিক্ষক সমিতিও মনে করছে, এই আইন বলবৎ করতে গেলে ‘হোঁচট’ খেতে হবে সরকারকে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীহারেন্দু চৌধুরী বলেন, “পড়ানো, নিজের প্রস্তুতি, খাতা দেখা সব মিলিয়েও সপ্তাহে ৪৫ ঘণ্টা কাজ করাটা সমস্যার হবে। গ্রামের অনেক স্কুলে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি, শীতকালে স্কুল ছুটির আগেই অন্ধকার নেমে আসে। সেখানে কী হবে?” |