জঙ্গিপুরের লোকসভা উপনির্বাচনে কান ঘেঁষে জেতার পরে এ বার রাজ্য রাজনীতিতেও বিজেপি-র মোকাবিলার কথা বলতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। বলতে হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে বিভেদের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা। প্রদেশ কংংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, জঙ্গিপুরের ফলাফল থেকে রাজ্য রাজনীতির যে ঘূর্ণাবর্তের ছবি ফুটে বেরোচ্ছে, তাকে রুখতে না-পারলে সামাজিক ভাবেই গোটা রাজ্যের বিপদ।
বস্তুত, সোমবার প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপত্রের পুজোসংখ্যা প্রকাশের অনুষ্ঠানে এসে পড়েছিল জঙ্গিপুরের ছায়া। ওই অবসরেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ঘোষণা করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ার পরে তৃণমূল, সিপিএম এবং বিজেপি এই তিন দলই তাঁদের রাজনৈতিক শত্রু। জঙ্গিপুরে এই তিন শক্তির বিরুদ্ধেই তাঁদের লড়তে হয়েছে। প্রদীপবাবুর কথায়, “জঙ্গিপুরে তিন শক্তির বিরুদ্ধেই কঠিন লড়াই করতে হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তৈরি করার নিদারুণ প্রচেষ্টা হয়েছে। মাথা তুলেছে বিজেপি। কিন্তু কোনও রকম সাম্প্রদায়িকতার কাছে আমরা মাথা নত করব না!” রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যায়, রাজ্যে বাম-বিরোধী ভোটে বিজেপি ভাগ বসালে কংগ্রেসেরও অসুবিধা। আবার বিজেপি-র বিপরীতে মূলত সংখ্যালঘু-প্রধান কিছু ছোট দল ভোটের আসরে নেমে পড়ায় তথাকথিত বড় দলগুলিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সার্বিক ভাবেই রাজ্যের এই বহুধা বিভক্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতৃত্বকে রাস্তা খুঁজতে হচ্ছে ‘বিভেদের রাজনীতি’ মোকাবিলার।
প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা দলের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া আরও স্পষ্ট ভাবে এ দিন বলেছেন, “একটা ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্ত চলছে। জঙ্গিপুরে তার বীভৎস রূপ প্রকাশিত হয়েছে। এটা কি শুধু কংগ্রেসের জন্য বিপজ্জনক? না! বাংলার রাজনীতি এবং আর্থ-সামাজিক বিন্যাসের প্রতিও বিপদ। আমরা রাজ্যকে নরেন্দ্র মোদীর গুজরাত বা মার্ক্সবাদী সুবিধাবাদের জায়গা করতে দেব না!” প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের কথায়, “কংগ্রেস দুর্বল হলেই সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দেয়।” এই প্রেক্ষাপটেই আজ, মঙ্গলবার বিধান ভবনে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক বসছে। যেখানে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে বিরোধী ভূমিকায় কংগ্রেসের আশু পরিকল্পনা ঠিক হওয়ার কথা। তার পরের দিনই ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে যুব কংগ্রেসের শিক্ষণ শিবিরে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টশন সহযোগে খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) সুফল বোঝানোর কথা মানসবাবুর।
জঙ্গিপুরের উপনির্বাচনে বিজেপি যেমন ১০%-এর বেশি ভোট পেয়েছে, তেমনই মূলত সংখ্যালঘু-প্রধান দু’টি ছোট দল এসডিপিআই এবং ডব্লিউপিআই-এর মিলিত ভাবে প্রাপ্ত ভোটের হার ১১% ছাড়িয়েছে। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের রাজ্য সম্পাদক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এ দিন জানিয়েছেন, এসডিপিআইয়ের সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে কোনও কোনও মহলে প্রচার হলেও জমিয়তে বা তাঁর রাজনৈতিক দল পিডিসিআই সম্পূর্ণ পৃথক সংগঠন। এসডিপিআইয়ের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। সম্প্রতি তাঁরা ইউডিএফ নামে একটি ফ্রন্ট গড়েছেন। সিদ্দিকুল্লার বক্তব্য, সেই ফ্রন্টেরও ঘোষিত নীতি ধর্মনিরপেক্ষতা। প্রসঙ্গত, কংগ্রেসের মুখপত্রের পুজোসংখ্যা যেমন সাম্প্রতিক কালে প্রথম, তেমনই প্রতি বছরের প্রথা মেনে এ দিন নজরুল মঞ্চে তৃণমূলের মুখপত্রের উৎসব-সংখ্যা উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই মঞ্চ থেকে তিনি তোপ দেগেছেন সংবাদমাধ্যমকেই। ধর্ষণের খবর অতিরঞ্জনের অভিযোগ এনেছেন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে। |