রং বদলে এ বার ৫ এলাকায় পুলিশও নীল-সাদা
বার পুলিশেও নীল-সাদা!
বদলাচ্ছে ইউনিফর্মের রং। আপাতত নতুন তৈরি পাঁচটি কমিশনারেটে।
মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে এমনই প্রস্তাব পাঠিয়েছে রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন। এবং সেই প্রস্তাব মানলে হাওড়া, শিলিগুড়ি, ব্যারাকপুর, বিধাননগর এবং আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট থেকে অচিরেই বিদায় নেবে খাকি পোশাক। কনস্টেবল থেকে ইনস্পেক্টর পর্যন্ত পুলিশকর্মীদের গায়ে উঠবে নীল-সাদা ইউনিফর্ম। তবে ঊর্ধ্বতন অফিসারদের পোশাকে এখনই কোনও বদল ঘটছে না। তাঁরা থাকবেন পরিচিত খাকি জামা-প্যান্টেই।
নতুন ইউনিফর্মে জামা হবে সাদা, প্যান্টের রং গাঢ় নীল। নীল মোজা আর টুপিও। রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নীল-সাদা রং পছন্দ করেন। মূলত তাঁর ইচ্ছেতেই ইউনিফর্মে বদল আনা হচ্ছে। পুলিশের প্রস্তাব একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া মাত্র।” তা হলে কেনই শুধু কমিশনারেটে? ওই পুলিশকর্তা বলেন, “গোটা রাজ্যে কনস্টেবল থেকে ইনস্পেক্টর পর্যন্ত পুলিশকর্মীদের নতুন পোশাক দিতে প্রচুর টাকা লাগবে। এখনই তা সম্ভব নয়। অন্য রকম ইউনিফর্ম হলে নতুন তৈরি কমিশনারেটগুলির পুলিশকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা যাবে।”
এ ভাবেই পৃথক পোশাকে চেনা যায় কলকাতা পুলিশকেও। ব্রিটিশ আমল থেকে সাদা জামা-প্যান্টই তাদের ইউনিফর্ম। সরকারি নথি বলছে, সেই সময় গোটা দেশের পুলিশ সাদা পোশাকেই ডিউটি করত। তখন এত শহর গড়ে ওঠেনি। গ্রামে-গঞ্জে হেঁটে হেঁটে যাতায়াত করতে হত পুলিশবাহিনীকে। এতে সাদা জামা-প্যান্ট ধুলোয় মাখামাখি হয়ে যেত। দৃষ্টিকটূ লাগত পুলিশকর্মীদের। সেই সমস্যার সমাধানেই ১৮৪৭ সালে কাদা-ধুলোর রঙের সঙ্গে মিলিয়ে পুলিশের ইউনিফর্মের রং খাকি করে দেন ব্রিটিশ পুলিশের তৎকালীন সর্বোচ্চ কর্তা হ্যারি বার্নেট লুমসডেন।
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
তখন থেকে ওই পোশাকই পরছে এ দেশের পুলিশ। এমনকী, ইংরেজরা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও পুলিশ ইউনিফর্মে বদল ঘটায়নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ১৮৬১ সালে দেশের পুলিশের জন্য যে সার্বভৌম আইন (ইন্ডিয়ান পুলিশ অ্যাক্ট) তৈরি করেছিল ব্রিটিশ সরকার, তাতেও খাকি পোশাকই পুলিশের ইউনিফর্ম বলে চিহ্নিত। স্বাধীন ভারতের পুলিশ এখনও সেই আইনই মেনে চলে।
বাদ পড়ে শুধু কলকাতা। কেন? এক পুলিশকর্তা বলেন, “ব্রিটিশ শাসনের রাজধানী ছিল কলকাতা। তেমন ভাবে নগরায়ণ না হলেও শহরকেন্দ্রিক সমাজে ধুলো-কাদার কোনও বালাই ছিল না। তাই কলকাতা পুলিশের সাদা পোশাক বদলায়নি তৎকালীন শাসকেরা।” একই সঙ্গে, রাজধানীর পুলিশকে অন্যের থেকে আলাদা করতেও তাদের খাকি পোশাকের আওতায় আনা হয়নি বলে মনে করেন বর্তমান পুলিশকর্তাদের একাংশ। কারণ, যোগ্যতার নিরিখে ব্রিটিশ আমলে কলকাতা পুলিশকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে তুলনা করা হত। সেই গরিমা বজায় রাখতেই লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের আদলে রাজধানীর পুলিশকে তৈরি করেছিল ব্রিটিশ শাসকেরা।
খাকি ছাড়া অন্য রঙের পুলিশ ইউনিফর্মের নজির অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য রাজ্যেও ছিল। কিন্তু তাতেও বিভিন্ন সময়ে বদল এসেছে। এই বদলটা কোথাও খাকি থেকে রঙিন হয়ে ফের খাকি। কোথাও বা স্রেফ রঙিন থেকে খাকি।
যেমন হিমাচলপ্রদেশ। সাবেকি খাকি ইউনিফর্ম বদল করে কিছু দিনের জন্য গাঢ় নীল প্যান্ট ও হাল্কা নীল জামায় সেজেছিল সে রাজ্যের পুলিশ। কিন্তু ১৩ মাস পরে ফের তারা ফিরে গিয়েছে আগের ইউনিফর্মে। তা হলে কেনই বা বদল, কী-ই বা তার ব্যাখ্যা? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, খাকি পোশাকে ব্রিটিশ আমলের নিষ্ঠুরতা লুকিয়ে আছে, এই কারণ দেখিয়ে ২০১১-র জানুয়ারিতে কনস্টেবল থেকে ইনস্পেক্টর পর্যন্ত ইউনিফর্ম বদলে দেয় হিমাচল পুলিশ প্রশাসন। তাদের ব্যাখ্যা ছিল, নীল রং মানুষকে কাছে টানে। অনায়াসে সমাজবন্ধু হওয়া যায়। এবং সেই যুক্তিতে রাজ্যের আইপিএস-দেরও ইউনিফর্ম বদলের দাবি জানায় হিমাচল পুলিশের একাংশ। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সেই আবেদন নাকচ করে দিয়ে বলে, আইপিএস-রা কী পোশাক পরবেন, তার নির্দিষ্ট বিধি আছে। তাই ইচ্ছেমতো তাঁদের ইউনিফর্ম বদলানো যায় না।
এর পরেই আপত্তি ওঠে হিমাচল পুলিশের অন্দরেও। দু’রকম পোশাকের বিরোধিতায় সরব হন পুলিশকর্তাদের একাংশ। এ নিয়ে বিভাগীয় বোর্ডের বৈঠকে তাঁরা বলেন, উঁচুতলা থেকে নিচুতলার মধ্যে বন্ধন তৈরি করে ইউনিফর্ম। কর্মক্ষেত্রে সকলে এক পরিবারের সদস্য, সকলের দায়িত্ব যে এক, ইউনিফর্ম তা-ও মনে করায়। কিন্তু দু’রকম পোশাক বিভেদ তৈরি করে। পুলিশকর্তাদের ওই ব্যাখ্যা মেনে নেন হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী প্রেমকুমার ধুমল। তাঁর নির্দেশে ২০১২-র মার্চে সেখানকার পুলিশ ফিরে যায় খাকি পোশাকে।
সিকিম পুলিশও রঙিন পোশাক বদল করে ফিরে গিয়েছে খাকিতে। প্রথম থেকেই তাদের ইউনিফর্ম ছিল গাঢ় নীল প্যান্ট ও হাল্কা নীল জামা। কিন্তু বছর দশেক আগে গোটা বাহিনীর ইউনিফর্ম পাল্টে দেওয়া হয়। সিকিমের তৎকালীন ডিজি, পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইপিএস আর কে হান্ডার যুক্তি ছিল, রঙিন পোশাক ‘সিভিল ইউনিফর্ম’ হতে পারে, কিন্তু শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীতে সমস্ত স্তরের কর্মীর পোশাক একই রকম হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। হান্ডা বলেন, “বাহিনী থেকেও ওই পোশাকের রং বদলানোর দাবি উঠেছিল। আমি মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিংকে সে কথা জানালে তিনি সম্মতি দেন।”
আর এখানে?
একই রাজ্যে পুলিশের তিন রকম ইউনিফর্ম। রাজ্য পুলিশের খাকি, কলকাতা পুলিশের সাদা এবং নবগঠিত কমিশনারেটে সাদা-নীল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.