রক্তবীজ নামে মহাশক্তিধর এক অসুরকে পর্যুদস্ত করেছিলেন দেবী মাহামায়া। লড়াইটা ছিল রীতিমতো কঠিন। রক্তবীজকে ধ্বংস করা ছিল এক অর্থে অসম্ভব। কারণ, তার শরীরের এক ফোঁটা রক্ত থেকেই জন্ম নিত আর এক শক্তিধর মহাসুর।
মহামায়া তাই শুধু শারীরিক শক্তি নয়, মেধার বলে শুরু করলেন লড়াই। এক এক করে ৬৪টি যোগিনী তৈরি করলেন তিনি। রক্তবীজের এক ফোঁটা রক্তও মাটিতে পড়ার আগে গলাধঃকরণ করা। যোগিনী বলেই রক্তবীজকে নিঃশেষ করলেন মহামায়া।
|
এই কাহিনি অবলম্বনেই ওড়িশার হীরাপুরে তৈরি হয়েছিল ৬৪ যোগিনী মন্দির। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ৯০০ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরের জন্ম। যদিও তা আবিষ্কৃত হয় অনেক পরে, ১৫৩০ সাল নাগাদ। এই যোগিনী-কথাই এ বার মেদিনীপুর শহরের লোকনাথপল্লিতে দুর্গাপুজোর ‘থিম’। হীরাপুরের ৬৪ যোগিনী মন্দিরের অনুকরণে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। ৬৪ জন যোগিনী, মহামায়া, দ্বারপাল সব মিলিয়ে ৮৪টি মূর্তি থাকবে মণ্ডপে। হীরাপুর মন্দিরের মূর্তিগুলির বেশিরভাগেরই ভগ্নদশা। সেই জীর্ণ রূপ ফুটিয়ে তোলা হবে মণ্ডপে। বিভিন্ন যোগিনীর বিভিন্ন নাম। জুলকামিনী, বিন্ধ্যবাসিনী, ছিন্নমস্তা, বীরূপা, ভদ্যরূপা ইত্যাদি। দর্শকদের বিষয়টি সহজ ভাবে বোঝাতে মন্দিরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসও লেখা থাকবে।
হঠাৎ কেন এমন থিম? উদ্যোক্তাদের মতে, দেবী দুর্গারই এক রূপ মহামায়া। তা ছাড়া, রক্তবীজ নিধনের মধ্যে অশুভ শক্তির বিনাশ, শুভ শক্তির জয়ের বার্তা রয়েছে। আর রয়েছে প্রাচীন শিল্প ও সংস্কৃতির প্রচাপ। পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য অশোক রুদ্রের কথায়, “বহু বছর আগেও মানুষ কেমন শিল্পমনস্ক ছিল, বর্তমানে তার কী দশা, এটা ফুটিয়ে তোলাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।”
গত বছরেও নজর কেড়েছিল লোকনাথপল্লির পুজো। বাঁকুড়ার পাঁচমুড়া গ্রামকে মণ্ডপে তুলে এনেছিলেন উদ্যোক্তারা। এ বারও তাঁদের আয়োজন দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে বলেই আশা লোকনাথপল্লির। |