উৎসবের শহর এ বার আরও আঁটোসাঁটো নজরদারির আওতায়। কারণ, দর্শনার্থীদের ভিড়ে অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়াতে শুধু মণ্ডপ নয়, মণ্ডপের বাইরে আশপাশের রাস্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিকেও আনা হয়েছে ক্লোজ্ড সার্কিট টিভি-র (সিসিটিভি) ঘেরাটোপে। যার মাধ্যমে পুজোর দিনগুলিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে নজরদারিও চালাবে কলকাতা পুলিশ।
এ ছাড়া, পুলিশের পক্ষ থেকে শহরের বড় পুজো কমিটিগুলিকে মণ্ডপ এবং তার বাইরে সিসিটিভি-র সংখ্যাও বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। ভিড় সামলাতে শুক্রবার, পঞ্চমী থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। গত বছর পর্যন্ত ষষ্ঠী থেকে পুলিশ মোতায়েন করা হত। গত বছর চতুর্থী থেকে জনতার ঢল নেমেছিল রাস্তায়। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার তাই এক দিন আগেই ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাস্তায় নামছেন পুলিশকর্তারা।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, “এ বার পুলিশের তরফে মণ্ডপ সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এবং আশপাশে বেশি সংখ্যক সিসিটিভির মাধ্যমে নজর রাখা হবে। প্রতিটি বড় পুজো কমিটিকে নিজস্ব সিসিটিভি-র সংখ্যাও বাড়াতে বলা হয়েছে।” মূলত নজরদারির জন্য সিসিটিভি ব্যবহার হলেও পুজোর ভিড় সামলাতেই তা সব চেয়ে বেশি কাজে লাগবে বলে পুলিশের দাবি।
প্রতি বছর পুজোর দিনগুলিতে শহরের নামী মণ্ডপের সামনে ভিড় উপচে পড়ে। রাত যত বাড়ে, পাল্লা দিয়ে বাড়ে মণ্ডপের ভিতরে-বাইরের ভিড়ও। পুলিশ সূত্রের খবর, এই সময়ে সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন করা থাকলেও পকেটমারি কিংবা ছোটখাটো অপরাধ ঘটেই থাকে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার দাবি, সিসিটিভি-র নজরদারির পরিধি বাড়লে এই ধরনের অপরাধও ঠেকানো যাবে। যান নিয়ন্ত্রণও সহজ হবে।
পুলিশ জানায়, বড় পুজো কমিটিগুলিকে এ বার মণ্ডপের ভিতর ও বাইরে মিলিয়ে ১০টির বেশি সিসিটিভি ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এবং সিসিটিভি-র ফুটেজে নিয়মিত খেয়াল রাখার জন্য খুলতে বলা হয়েছে একটি ক্যামেরা-কন্ট্রোল রুমও। নিরাপত্তা বাড়াতে গত কয়েক বছর ধরেই পুলিশের অনুরোধে বড় বড় পুজো কমিটি নিজেরাই সিসিটিভি ব্যবহার করছে।
উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেনের এক পুজো কমিটির তরফে সোমেন দত্ত জানান, “পুলিশের অনুরোধ মেনে আমরা এ বার ক্যামেরা-কন্ট্রোল রুমে সর্বক্ষণ নজরদারির জন্য অপারেটর রেখেছি।”
সিসিটিভি-র পাশাপাশি শহরের ৬৫টি থানা এলাকার গুরত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে প্রায় পঞ্চাশটির বেশি অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করেছে পুলিশ। যা গত বারের তুলনায় বেশি। পুলিশ জানায়, আগের মতোই এই ওয়াচ টাওয়ার থেকে দু’তিন জন পুলিশকর্মী ভিড়ের উপরে নজরদারি চালাবেন। পুজোর দিনগুলি নির্বিঘ্নে পার করতে এবং যে কোনও ঘটনার মোকাবিলা করতে লালবাজারের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন জায়গায় আরও পাঁচটি কন্ট্রোল রুম খুলছে পুলিশ। অতিরিক্ত এই কন্ট্রোল রুমে সব সময়ের জন্য পুলিশকর্মীর সঙ্গে র্যাফের মতো বাহিনীকে তৈরি রাখা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, এ ছাড়াও শহরের ২১টি জায়গায় থাকছে ‘কুইক রেসপন্স টিম’। যাতে প্রয়োজনে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাওয়া যায়।
অন্য দিকে, পুজোর ক’দিন দর্শনার্থীদের জন্য শহরের রাস্তায় অতিরিক্ত ৫০০ বাস চালাবে পরিবহণ দফতর। সেই সঙ্গে বেশি রাত পর্যন্ত থাকবে ট্রাম ও ফেরি পরিষেবাও। পাশাপাশি, যে কোনও সমস্যায় যাত্রীরা যাতে অভিযোগ জানাতে পারেন, তার জন্য দিন-রাত খোলা থাকবে ১২টি কন্ট্রোল রুম। সোমবার ধর্মতলায় দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের দূরপাল্লার বাসের কম্পিউটার-নির্ভর টিকিট কাউন্টারের উদ্বোধন করতে এসে এ কথা জানান রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। তাঁর দাবি, পুজোর দিনগুলিতে অতিরিক্ত আড়াই-তিন কোটি মানুষ শহরে আসবেন। তাঁদের বাস বা অন্যান্য পরিবহণ পরিষেবা দিতে সরকার প্রস্তুত। পুজোর দিনগুলিতে বেসরকারি বাস মালিকদেরও অতিরিক্ত বাস চালাতে অনুরোধ জানান পরিবহণমন্ত্রী। |