আমেরিকান সেন্টারের সামনে জঙ্গি হানার মামলায় ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত আফতাব আনসারিকে অন্য মামলায় হাজিরা দিতে গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, নয়াদিল্লি ও বিহারে পাঠাবে না পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ঝুঁকি এড়াতেই এই ব্যবস্থা। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ওই চার রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে চিঠি লিখে বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন।
বাসুদেববাবু বলেন, ‘‘বতর্মান পরিস্থিতি যা তাতে আফতাব আনসারিকে জেল থেকে বাইরে বার করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। ওকে এই রাজ্যের বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই উঠছে না। ফৌজদারি কার্যবিধির নির্দিষ্ট ধারায় সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।” স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার আশঙ্কা, “আমাদের খবর অনুযায়ী, এক বার যদি আফতাব গুজরাতে যেতে পারে, সেখানে পুলিশের হাত থেকে ওকে ছিনিয়ে নিতে হামলা হতে পারে। কিংবা আফতাব নিজেও পালাতে পারে।”
তা হলে ওই সব রাজ্যে আফতাবের বিরুদ্ধে যে সব মামলা চলছে তার বিচার হবে কী ভাবে? তারও উপায় রয়েছে। স্বরাষ্ট্রসচিব তাঁর চিঠিতে তা জানিয়েছেন।
বাসুদেবাবু বলেছেন, মামলার বিচার চলাকালীন আফতাবের কোনও বক্তব্য শোনার ক্ষেত্রে বা তাকে কিছু শোনানোর প্রয়োজন হলে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আফতাবকে সশরীরে হাজির করানোর কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। |
এ বছরের গোড়ায় আফতাবকে দিল্লির তিস হাজারি কোর্টে পেশ করা হয়েছিল। সকালে তাকে আলিপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে বের করে বিমানে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যাতেই বিমানে আবার ফেরত আনা হয় আফতাবকে। তার পরে আর আফতাবকে সেন্ট্রাল জেল থেকে বার করা হয়নি। আর করাচিতে সে মোবাইলে কথা বলছে জানতে পারার পরে রাজ্য সরকার আর আফতাবকে জেল থেকে বের করার কোনও ঝুঁকি নেবে না বলে স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন।
কিন্তু প্রশ্নটা হল জেলে এত কড়াকড়ির মধ্যে আফতাব করাচিতে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারল কী ভাবে?
জেলের মধ্যে এক শ্রেণির জেলকর্মীর যোগসাজশেই যে আফতাব মোবাইল ফোন হাতে পেয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তাদের। এমতাবস্থায় জেলকর্মীদের উপরে আর ভরসা না রাখতে পেরে এ বার আফতাবের সেলে ক্লোজড সার্কিট টিভি বসানোর প্রস্তাব দিচ্ছে স্বরাষ্ট্র দফতর।
স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, আফতাবের সঙ্গে কে বা কারা দেখা করতে যাচ্ছে, দেখা করতে যাওয়ার অছিলায় কী করছে, তা ওই টিভিতে ধরা পড়বে। তবে সিসিটিভির সব ফুটেজ যেন জেলার এবং সাব জেলারের ঘর থেকে পর্যবেক্ষণ করা যায় সেই ব্যবস্থা চালু করা দরকার। কারা দফতরকে সেই পরামর্শই দিচ্ছে স্বরাষ্ট্র দফতর।
আফতাব এখন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের যে সেলে রয়েছে সেখান থেকে ভিডিও কনফারেন্স করার পরিকাঠামো রয়েছে। বছর পাঁচেক আগেই এই ব্যবস্থা তৈরি হয়। দিল্লির একটি মামলার শুনানির সময়ে সেন্ট্রাল জেলে ওই ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা কাজে লাগানো হয়েছিল।
জেলের মধ্যে ওই জায়গাতেই আদালত বসিয়ে খাদিম-কর্তা মামলার বিচার হয়েছিল। সেই মামলার বিচারে আফতাবকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত। খাদিম মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে আফতাব হাইকোর্টে আবেদন করেছে। সেই মামলার রায় এখনও বেরোয়নি। আমেরিকান সেন্টারের সামনে জঙ্গি হানার মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আফতাব আবেদন করেছে সুপ্রিম কোর্টে। |
