থিম প্রতিমা হয়। থিম পুজো হয়। থিম প্যান্ডেল হয়। থিম আলোকসজ্জা হয়। কিন্তু থিম প্রধান অতিথি?
শহর কলকাতা এ বার তা-ও দেখে ফেলছে। এক জন নয়, এক জোড়া। মহাচতুর্থীর দিনে দুই প্রধান অতিথি পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে শহরের দু’টো ভিন্ন জায়গায় পুজো উদ্বোধন করবেন।
প্রতি বারের মতো বিশেষ এই দু’টো পুজোয় তারকা মনোনয়ন স্টার পাওয়ারের ভিত্তিতে হয়নি। হয়েছে কলকাতা এবং গোটা উৎসবের থিমে এঁরা খাপ খেয়ে গিয়েছেন বলে। দু’জনেরই প্রখর কলকাতা কানেকশন। মনোনয়নে যা অগ্রাধিকার পেয়েছে।
প্রথম জন বিদ্যা বালন। বৃহস্পতিবার রাতে উদ্বোধন করবেন শ্রীভূমি স্পোর্টিংয়ের বিখ্যাত পুজো।
দ্বিতীয় জন বঙ্গিপুরাপ্পু বেঙ্কটসাই লক্ষ্মণ। বিদ্যা মঞ্চে ওঠার ঘণ্টা দু’য়েক আগে বহু আলোচিত সল্টলেক এফ ডি ব্লকের পুজোয় প্রতিমা-উন্মোচন করবেন লক্ষ্মণ।
প্রথম পুজোর উদ্যোক্তা বিধায়ক সুজিত বসু। ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি সচেতন সুজিত বেশ কয়েক বছর ধরেই গ্ল্যামারাস তারকাদের দিয়ে উদ্বোধন করান। যার যুগ্ম-উদ্বোধক হিসেবে থাকেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল। এ বারেও রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন থাকছেন। এ বারে বিদ্যা আর তিনি পাশাপাশি থাকার আরও তাৎপর্য হল, দু’জনেই দক্ষিণের একই রাজ্যের একই গ্রামের বাসিন্দা। কেরলের ওট্টাপালাম গ্রাম। সম্প্রতি রাজ্যপাল তাঁর এক বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন যে, বিদ্যা ওট্টাপালামের সবচেয়ে বিখ্যাত রফতানি। |
করিনা-বিপাশা-রানিদের ছেড়ে মহাসমারোহে বিদ্যাকে ডাকার সবচেয়ে বড় কারণ, থিম অতিথি হিসেবে তিনি দারুণ ভাবে খাপ খেয়ে যাচ্ছেন। শ্রীভূমির এ বারের প্যান্ডেল দক্ষিণের মীনাক্ষি মন্দিরের আদলে। উদ্যোক্তারা তাই প্রথমেই চেয়েছেন এক জন দক্ষিণী। দ্বিতীয়, তাঁর কলকাতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। “কহানির অভিনয় এবং কলকাতায় দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলে ঘোরাফেরা কোথাও বিদ্যাকে শহরটার আরও কাছে এনে দিয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে, সে জন্যে এ বার ও-ই সবচেয়ে উপযুক্ত হবে,” বললেন সুজিত বসু। যাঁর এখন প্রধান লক্ষ্য, “দিদিকেও রাজি করাতে হবে উদ্বোধনে থাকার জন্য। বিদ্যার কথাটা ওঁকে জানিয়ে রিকোয়েস্ট করব।”
ঠিক একই কারণে প্রয়াত ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর পাড়ার পুজোর উদ্যোক্তারা ভিভিএস লক্ষ্মণকে ভেবেছেন আর রাজিও করিয়ে ফেলেছেন। “অনেকে বলেছিল, যুবরাজকে আনো। এখন যুবরাজকে নিয়ে প্রচুর ইন্টারেস্ট। কেউ বলেছিল, কোহলিকে আনো। আমরা একমত হইনি,” বললেন এফডি-র মুখ্য কো-অর্ডিনেটর প্রদীপ সেনগুপ্ত। ময়দানের প্রাক্তন ফুটবল কর্তা প্রদীপবাবুর মতে, তাঁদের পুজো কমিটি নিছক তারকার বক্স অফিস চায়নি। চেয়েছে কলকাতার সঙ্গে কোথাও যেন সেই তারকার অসম্ভব জোরালো যোগাযোগ থাকে। তাঁদের বিশ্লেষণ, ক্রিকেটারদের মধ্যে লক্ষ্মণ হলেন সেই মানুষ, কলকাতায় যাঁর মতো পারফরম্যান্স আর কারও নেই। একে তো আচমকা খেলা ছাড়ার পর লক্ষ্মণকে ঘিরে এখন আগ্রহের সীমা বেড়ে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, অবসর নেওয়ার পর আর কলকাতা আসেননি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিন, ইডেনে তিনি সত্যিই ভেরি ভেরি স্পেশ্যাল। ১২১৭ রান করেছেন শুধু এই মাঠে। গড় ১১০.৬৩। সামগ্রিক টেস্ট গড় যেখানে ৪৫.৯৭। এফডি ব্লক কমিটির কর্তারা ঠিক করেছেন, লক্ষ্মণকে তাঁদের বিশেষ উপহার হবে ইডেনের প্রতিকৃতি বড় করে ল্যামিনেশন।
বিদ্যা এবং লক্ষ্মণ দু’জনেরই প্রিয় শহর কলকাতা। হায়দরাবাদ থেকে লক্ষ্মণ ফোনে আনন্দবাজারকে বললেন, “অনেক বছর আগে দুর্গাপুজোর সময় এখানে এক দিন কাটিয়ে গিয়েছিলাম। গত কয়েক বছর টিভিতে কলকাতার পুজো দেখেছি। আমার ইডেন যেমন ভীষণ প্রিয়, কলকাতার পুজোও তেমন আকর্ষণীয়। পুজোর সময় কলকাতা যেন হয়ে যায় জাদুনগরী। একবার এসে দেখেছি, প্যান্ডেল, লাইটের খুব চাকচিক্য। দারুণ দারুণ সব কাজ। কিন্তু আমি যেটা হাঁ করে দেখি, সেটা হল, ঠাকুরের মূর্তি। মূর্তিগুলো এত জীবন্ত যে ওগুলোর দিকে তাকালে একটা অদ্ভুত এনার্জি পাওয়া যায়। এ বার এসে আবার সেই এনার্জিটা খুঁজব।”
মুম্বই থেকে বিদ্যা আনন্দবাজারকে জানালেন, কলকাতায় আসার ব্যাপারে তিনিও একই রকম উচ্ছ্বসিত। বিদ্যা বললেন, “আমি মনেপ্রাণে বাঙালি। আর এই শহরটাকে জাস্ট বড্ড বেশি ভালবাসি। এটাই আমার দ্বিতীয় বাড়ি। আমার জন্য এটা স্মৃতির সরণি বেয়ে একটা দারুণ নস্টালজিয়াও হবে, কারণ দু’বছর আগে ‘কহানি’ এখানেই পুজোর সময় শু্যট করেছি।” বিদ্যার উপলব্ধি, “পুজোর বাড়তি মজা হল গোটা শহরটাকে মনে হয় একটা বিয়েবাড়ি। আর প্রতিটি মহিলাকে মনে হয় একজন কনে।” ‘কহানি’-র শু্যটিং হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ কালচারালের পুজোয়। ওই পুজোর সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা সাহেব চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, “বিদ্যা একজন পেশাদার অভিনেত্রী। বিখ্যাত মানুষ। তাঁর যেখানে পছন্দ যেতেই পারেন। কিন্তু ‘কহানি’র শু্যটিং যে হেতু আমাদের এখানে হয়েছিল, বালিগঞ্জ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনটাও ঘুরে গেলে আমাদের ভাল লাগত।” ক্রিকেটার রণদেব বসুরও একই মনোভাব। “এমনিতেও একবার বিদ্যার ঘুরে যাওয়া উচিত। একটা গোটা পুজো আমরা এক সঙ্গে কাটিয়েছি। এ বার আমরা কী করেছি, দেখার জন্যে ওর মনে আগ্রহ থাকবে না?” একই ভাবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে একটা পুজো ব্যাকুল ভাবে চাইছে লক্ষ্মণকে। তাদের বক্তব্য, লক্ষ্মণ তো পুরো কলকাতার। তাঁর ২৮১ প্রাণ ভরে দেখেছে গোটা কলকাতা। শুধু একটা পুজো উদ্বোধনের জন্য তিনি আসবেন কেন? তাঁর তো যাওয়া উচিত বিভিন্ন জায়গায়।
বৃহস্পতিবার আসার আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই থিম চিফগেস্টরা মনে হচ্ছে ‘সুপারহিট’! |