নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দেবীপক্ষের শুরুতেই খুশির খবর। রবিবার পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে নাজেহাল হতে হলেও আজ, সোমবার মহালয়ার দিনেই কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় আবহাওয়ার উন্নতি হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দু’-দু’টি নিম্নচাপ এবং তার পরে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাবে বৃষ্টি হয়ে চলেছে কলকাতা ও উপকূলবর্তী দক্ষিণবঙ্গে। রবিবারেও দুপুর থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। বিকেলের পরে অবশ্য আকাশ কিছুটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, সোমবার আকাশ আরও পরিষ্কার হবে।
পুজোর উদ্বোধন শুরু হয়ে যাবে বৃহস্পতিবারেই। তাই আর এক বা দু’দিন বৃষ্টি হলেই চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি ব্যাহত হবে। অক্টোবরের শেষ পর্বে বৃষ্টি হবে না ধরে নিয়েই বেশির ভাগ পুজো কমিটি মণ্ডপের সামনে অনেকটা এলাকা ফাঁকা রেখে দিয়েছে। খামখেয়ালি বৃষ্টি যখন-তখন হানা দেওয়ায় সেই ফাঁকা জায়গার উপরে ত্রিপল কিংবা মোটা পলিথিনের চাদর ঢাকা দিতে হয়েছে। বৃষ্টি না-থামায় ওই সব আচ্ছাদন খোলা যাচ্ছে না। অবিলম্বে বৃষ্টি না-কমলে মণ্ডপসজ্জার শেষ পর্যায়ের কাজ কী ভাবে হবে, তা নিয়ে শুধু পুজোর উদ্যোক্তা নয়, শিল্পীরাও বিভ্রান্ত।
এ বার বেশ কয়েক দিন দেরি করে মৌসুমি বায়ু মূল ভূখণ্ডে ঢুকেছিল এবং তখন থেকেই তার তুঘলকিপনা শুরু। আবার বিদায় বেলাতেও বর্ষা গড়িমসি করতে থাকায় উৎসবের মুখে প্রমাদ গুনছে আমজনতা। রবিবার সকালের দিকটা ভালয় ভালয় কেটে গেলেও দুপুরের পর থেকে বৃষ্টির দস্যিপনা ছুটির দিনে পুজোর বাজারে বেরোনো মানুষকে নাকাল করে ছেড়েছে। দুর্যোগের কারণে বেলা দেড়টা নাগাদ জেট সংস্থার দু’টি বিমান কলকাতায় নামার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। অন্য পাঁচটি বিমান কমবেশি ১০ মিনিট ধরে চক্কর কাটতে থাকে আকাশে। হাওড়া স্টেশন চত্বরে জল জমে যাওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে ওঠে।
এই অবস্থায় পুজোর উদ্যোক্তা, প্রতিমা ও মণ্ডপশিল্পী সকলেরই চোখ এখন আকাশে। সকলেরই প্রশ্ন, কবে শেষ হবে বৃষ্টির এই খামখেয়াল? শারদোৎসবের পরিবেশ কি স্রেফ বৃষ্টির জন্য নষ্ট হয়ে যাবে?
কিছুটা আশ্বস্ত করেছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। রবিবার তিনি জানান, এই মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরে এমন কোনও বায়ুপ্রবাহ নেই, যা থেকে নিম্নচাপ কিংবা নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হতে পারে। তাই ভারী বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই। গোকুলবাবু বলেন, “সোমবার থেকেই আবহাওয়ার উন্নতি হতে শুরু করবে। বঙ্গোপসাগরে বায়ুপ্রবাহের তেমন কোনও পরিবর্তন না-ঘটলে আপাতত আর দুর্যোগের কোনও আশঙ্কা নেই।”
দিল্লির মৌসম ভবন জানাচ্ছে, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল তো বটেই, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্য এবং উত্তরবঙ্গ থেকেও ইতিমধ্যে বিদায় নিয়েছে বর্ষা। দক্ষিণবঙ্গ থেকেও তল্পিতল্পা গোটাতে শুরু করে দিয়েছে। বাংলার পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে বর্ষা বিদায় নেবে আগামী
সপ্তাহেই। তাই কলকাতায় পুজোর দিনগুলোয় দুর্যোগের আশঙ্কা অনেকটাই কমবে। আশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে হাওয়া অফিস। আবহবিদেরা জানান, বর্ষার বিদায় নেওয়া মানেই বৃষ্টি থেকে পুরোপুরি রেহাই পাওয়া নয়। মৌসুমি বায়ু পাততাড়ি গোটালেও স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়ে দু’-এক পশলা বৃষ্টি হতে পারে। সেটা মাথায় রেখে তৈরি থাকার জন্য পুজোর উদ্যোক্তা, শিল্পী এবং প্রশাসনিক কর্তাদের পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। |