বেধড়ক মার খেয়ে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম চন্দন পাণ্ডে (৪৫)। তিনি বাঁকুড়া শহরের শাঁখারিপাড়ার বাসিন্দা।
শনিবার রাতে বাঁকুড়ার সতীঘাট বাস যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় চন্দনবাবুকে। স্থানীয় যুবকেরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। রবিবার সকালে কলকাতার হাসপাতালের পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় নিমাইচাঁদ দাস নামে এক পরিবহণ ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তিনি বাঁকুড়ার মিশ্রপাড়া এলাকার বাসিন্দা। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “ব্যবসা সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। মৃতের মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে নিমাইচাঁদকে ধরা হয়েছে।”
যদিও খুনের পিছনে ব্যবসা সংক্রান্ত বিরোধের কথা মানতে নারাজ শাঁখারিপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। শাঁখারিপাড়া ও সতীঘাট এলাকা বাঁকুড়া পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর দিলীপ অগ্রবাল বলেন, “এলাকায় সমাজসেবী বলে পরিচিত ছিল চন্দন। কারও কোনও বিপদ হলে সে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসত। সতীঘাট বাসস্ট্যান্ড এলাকাটি সমাজবিরোধীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ওই এলাকায় জুয়া, গাঁজা ও মদের ঠেক চলে। পুলিশকে বারবার জানিয়েও কাজের কাজ কিছু হয়নি।” দিলীপবাবুর দাবি, চন্দন এ সব অসামাজিক কাজের প্রতিবাদ করতেন। সেই রোষেই পরিকল্পিত ভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, চন্দনবাবু ‘সতীঘাট উন্নয়ন কমিটি’র সম্পাদক ছিলেন। একটি ক্রিকেট প্রশিক্ষণ শিবিরের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। শহরের কদমাঘাটি এলাকায় তাঁর একটি হোটেল আছে। সতীঘাট বাসস্টপে লাগোয়া এলাকায় গজিয়ে ওঠা মদ ও গাঁজার ঠেকের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই ছিল দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি ওই এলাকায় মদ-গাঁজার ঠেক বন্ধ করতে ‘সতীঘাট উন্নয়ন কমিটি’-র সঙ্গে বাঁকুড়া পুলিশের একটি বৈঠকও হয় বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্যেরা। অথচ বৈঠকের পরেও পুলিশ ওই ঠেকগুলি বন্ধ করতে সক্রিয় হয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ‘সতীঘাট উন্নয়ন কমিটি’র একাধিক সদস্য বলেন, “আমরা কয়েক জন কমিটির অফিসে বসেছিলাম। শনিবার রাত ৮টা নাগাদ কয়েক জন যুবক আমাদের এসে খবর দেয়, বাস যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের পাশে এক জনকে রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করছে কিছু লোক। আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখি, জখম ও রক্তাক্ত অবস্থায় চন্দন পড়ে রয়েছে প্রতীক্ষালয়ের সামনে। আমরা ওকে তুলে নিয়ে যাই হাসপাতালে।”
এ দিন চন্দনবাবুর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল শোকার্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এলাকাবাসীর উপচে পড়া ভিড়। এলাকায় শোকের ছায়া। চন্দনবাবুর স্ত্রী পাপিয়া ও তাঁর নাবালক দুই ছেলেমেয়ে আকাশ ও মিষ্টি শোকে স্তব্ধ। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন চন্দনবাবুর মা রেবতীদেবী। তিনি বলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়েছিল চন্দন। ঘণ্টাখানেক পরেই ওকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে। ঘণ্টখানেক বাদেই খবর পাই, ছেলেকে বেধড়ক পেটানো হয়েছে।”
অন্য দিকে, শনিবার রাতেই বাঁকুড়া শহরের নতুননচটি এলাকা থেকে গুরুতর জখম অবস্থায় ফটিক বাউরি(৫৫) নামে এক প্রৌঢ়কে পুলিশ উদ্ধার করে। রবিবার দুপুরে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ফটিকবাবু শহরের কেন্দুয়াডিহি এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় নতুনচটির একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন ফটিকবাবু। ওই বাড়ির মালিক পুলিশকে জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যায় হঠাই এক অপরিচিত ব্যক্তি (ফটিকবাবু) তাঁর বাড়িতে ঢুকে পড়েন। কিছুক্ষণ মধ্যেই আরও কয়েক জন অপরিচিত লোক বাড়িতে ঢুকে ওই ব্যক্তিকে টানতে টানতে বের করে নিয়ে যায়। |