এ যেন গব্বর সিংয়ের ডেরায় দুর্গাপুজো!
গব্বর না হলেও পুঞ্চার দিগম সিং ও বিপিন সিং ডাকাত হিসেবে কম ভয়ঙ্কর ছিলেন না। এলাকায় তাঁদের সর্ম্পকে যে কাহিনি প্রচলিত রয়েছে, তাও রীতিমত রোমাঞ্চকর। চারপাশে জঙ্গল। মাঝখানে ছোট্ট টিলা। নাম বড়াহুটু পাহাড়। সেই পাহাড়ের এক গুহায় ছিল ডাকাতের ডেরা। অপকর্ম করে তাঁরা সেই গুহায় আত্মগোপন করে থাকতেন। ব্রিটিশ পুলিশ সেই ডাকাতদের ধরতে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হত। এখন সেই ডাকাতরা নেই। তবে, তাঁদের সেই ডেরা রয়েছে। রয়েছে গুহাও। ডাকাতদের বদলে পাহাড়ের টিলায় হয়েছে সাধুর আশ্রম। গুহায় ঘট রূপে দেবী দুর্গার আবাহন করা হয়।
পুঞ্চার কৈড়া গ্রামের কাছে ওই টিলার চূড়ায় গত ৪০ বছর ধরে পুজো হচ্ছে। এখানকার আশ্রমের সাধু ব্রহ্মানন্দ সরস্বতী জানান, ১৯৬৭ সালে আমি গুরু বিশুদ্ধানন্দ সরস্বতীর সঙ্গে এখানে এসেছিলেন। তারপর ১৯৭১ সাল থেকে গুহায় তিনি দুর্গাপুজো শুরু করেন। তাঁর দাবি, “স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজোর শুরু। এখানে সপ্তমী, অষ্টমী নয় সন্ধিপুজো হয়। দশমীর সকালে কংসাবতী নদীতে ঘট বিসর্জন দেওয়া হয়।” |
এখন এই পুজোয় বাসিন্দারাও যোগ দেন। কৈড়া গ্রামে সিং পাতর বাড়ির দুর্গাপুজো থাকলেও আশপাশের বুগলিডি, ছাতালালপুর, দেলাং, কাজুবাগান প্রভৃতি গ্রামে অবশ্য পুজো হয় না। তাই এই ডাকাত ডেরার পুজোই তাঁদের নিজেদের পুজো হয়ে উঠেছে। কৈড়া গ্রামের বাসিন্দা হাইস্কুল শিক্ষক ভদ্রলোচন সিং, পাতর দেলাং গ্রামের যুধিষ্ঠির সহিস, বুগলিডির কাঞ্চন কর্মকাররা বলেন, “গুহার দুর্গাপুজো তো এখন আমাদের পুজো হয়ে উঠেছে। আমরা সবাই মিলে সাধ্যমতো পুজোয় সাহায্য করি।” পাহাড়ের মাথায় ছোট্ট গুহা। দাঁড়াতে গেলে গুহার ছাদে মাথা ঠেকে যায়। গুহাটি চওড়ায় ৬ ফুট আর গভীরতায় ৮ ফুট। বাসিন্দারা জানান, পাহাড়ের গুহায় চণ্ডীপাঠের সময় চারপাশ গমগম করে। দিনের বেলায় সন্ধিপুজো হলে প্রচুর মানুষ ভিড় করেন। কিন্তু রাতে সন্ধিপুজো হলে বাসিন্দাদের মন খারাপ হয়ে যায়। পাহাড়ের এবড়ো খেবড়ো রাস্তা পেরিয়ে অন্ধকারে পুজো দেখতে অনেকেই যেতে পারেন না। তার উপর পাহাড়ে সাপের ভয়ও রয়েছে। |