মুখোশ কেড়েছে সময়, বন্ধ পড়া
সামনে ছোটবড় রঙের পট। ঢাউস একটি দুর্গার মুখোশে একমনে রঙ লাগাচ্ছিল এক কিশোর। ছৌ মুখোশ শিল্পীদের গ্রাম চড়িদায় পা দিয়েই বোঝা গেল তাঁরা এখন বেজায় ব্যস্ত। মহিষাসুর বধ, রাম-রাবণের যুদ্ধ, কিরাত-অর্জুন, লক্ষণের শক্তিশেল-সহ রামায়ণ, মহাভারতের বিভিন্ন পালা ছৌ-নৃত্যের বিভঙ্গে পুজো মণ্ডপ সাজিয়ে তুলতে হবে যে! তাই এখানকার শিল্পীদের এখন বাস্তবিক নাওয়া-খাওয়ারও যেন সময় নেই।
বাংলার বীররসের এই নাচই যেন জঙ্গলমহলের প্রান্তীয় জেলা পুরুলিয়ার আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন। এই চড়িদা থেকেই পদ্মশ্রী খেতাবও অর্জন করেছিলেন ছৌ-নৃত্য শিল্পী গম্ভীর সিংহ মুড়া। ছৌনাচের জনপ্রিয়তা আরও ছড়িয়ে পড়ে। গত কয়েক বছর ধরে শহরের পুজো কমিটিগুলির কাছে ‘থিম’ হিসেবে ছৌ এখন প্রথম সারিতেই চলে এসেছে। মুখোশে রঙ করতে করতে কিশোর মুখোশ শিল্পী জন্মেজয় সূত্রধর বলে, “পুজো কমিটির কর্তাদের কাছ থেকে ছৌনাচের মুখোশ দিয়ে মণ্ডপ সাজানোর বরাত পেয়ে আমাদেরও কিছু রোজগার বেড়েছে।” তার বাবা জগদীশ সূত্রধর এ বার কলকাতায় যাদবপুরের একটি পুজো কমিটির বায়না পেয়েছেন। জন্মেজয় জানায়, মাস পাঁচেক আগে ওঁরা বায়না করেছেন। তাঁরা ছৌ-নাচের মহিষমর্দিনী পালার আদলে ছৌনাচের মুখোশ দিয়ে মণ্ডপ সাজাতে চাইছেন। পাশাপাশি মূল তোরণে ১০ ফুট উচ্চতার দু’টি দুর্গা মূর্তি থাকবে। পুরাণে বর্ণিত একই মাপের দু’টি রাক্ষসের মুখোশও থাকবে তোরণে। প্রতিমার পিছনের চালচিত্রও শোভিত হবে বিভিন্ন পালার বাহারি মুখোশে। এই কিশোর শিল্পী এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। তার কথায়, “পুজোর কাজের চাপে পড়াশোনার জন্য সে ভাবে সময় বের করা যাচ্ছে না। কী করব, কাজ না করলে খাব কী? মাস চারেক ধরে এই কাজ করতে হচ্ছে।”
—নিজস্ব চিত্র।
শিল্পী কিশোর সূত্রধরের আখড়াতেও ব্যস্ততা। তিনি আসানসোলের একতা ক্লাবের পুজো মণ্ডপের বায়না ধরেছেন। তাঁর দাদু সুচাঁদ সূত্রধর ছিলেন নামকরা মুখোশ শিল্পী। কিশোর জানান, আসানসোলের ওই পুজো কমিটির মণ্ডপ সাজানো হবে পুরাণে বর্ণিত বিভিন্ন পালার মুখোশ দিয়ে। এ জন্য আড়াইশো মুখোশ লাগবে। কলকাতার গড়িয়ার একটি পুজো মণ্ডপেও মুখোশ পাঠিয়েছেন। তাঁর দলের ২০-২২ জন শিল্পী মাস দু’য়েক ধরে কাজ করে চলছেন। ওই আখড়ায় দেখা পাওয়া গেল শিল্পী সঞ্জয় শীল, পান্নালাল সূত্রধর, বিশ্বনাথ রায়, জগন্নাথ গরাইদের। তাঁরা বলেন, “চড়িদার মুখোশের শুধু রাজ্যেই নয়, গোটা দেশেই সুনাম রয়েছে। আমাদের দায়িত্ব পূর্বপুরুষদের সুনাম ধরে রাখা।” আসানসোলের ওই ক্লাবের সম্পাদক মদন মাহাতোও বলেন, “পুজোয় থিম হিসেবে ছৌয়ের একটা আলাদা কদর রয়েছে। আমরা এ বার দর্শকদের এই শিল্পের স্বাদ দিতে চাই।”
দর্শকদের চমক দেওয়ার জন্য পুজো উদ্যোক্তারা ছৌ-কে বেছে নেওয়ায় চড়িদার ঘরে ব্যস্ততার সঙ্গে রোজগারও এসেছে। ধর্মেন্দ্র সূত্রধর, ললিত সূত্রধরদের কথায়, “পর্যটকরা মুখোশ কিনে নিয়ে যেতেন। কিন্তু সে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ বার পুজো উদ্যোক্তাদের ডাক পেয়ে ভাল লাগছে।” কিশোরবাবু জানান, ১ লক্ষ টাকা মজুরি পেলেও সহশিল্পীদের দিয়ে হাতে বিশেষ থাকবে না। তবুও ফের ছৌনাচের মুখোশের কদর বাড়ায় উৎসাহ বেড়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.